কক্সবাংলা ডটকম(৬ সেপ্টেস্বর) :: সঞ্চয়পত্রের সুদহার আপাতত কমানো হচ্ছে না। সাধারণ সঞ্চয়কারীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে_ এমন ভাবনা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার ব্যাংক আমানত ও সরকারের নেওয়া অন্যান্য ঋণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে বলে জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তার সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর সুপারিশ করে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের বিভিন্ন পর্যালোচনায়ও এর সুদহার কমানোর পক্ষে মতামত দিয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান মনে করে, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো উচিত। কেননা, বর্তমানে ব্যাংক আমানতের সুদহার গড়ে ৫ শতাংশের কাছাকাছি, সেখানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ শতাংশের বেশি। সঞ্চয়পত্রের প্রতি অতিনির্ভরতার কারণে সরকারের ঋণের সুদব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
সুদহার তুলনামূলক বেশি থাকার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এমনিতেই বাড়ছিল। তবে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর সারা দেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হিড়িক পড়ে। চাপ এত বেশি ছিল যে, অনেক শাখায় সঞ্চয়পত্রের সংকট দেখা দেয়। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রের সুদহার ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। যোগাযোগ করা হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার আপাতত কমছে না। এ খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত_ এ কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সঞ্চয়পত্রের স্কিমগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাবুল কুমার সাহা বলেন, সুদহার কমানো হচ্ছে_ এমন কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা নেই তার। এটি নীতি নির্ধারকদের বিষয় ।
সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখা ও নির্ধারিত ব্যাংক শাখার কয়েকটিতে ঘুরে দেখা গেছে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে চাপ রয়েছে এখনও। গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীতে সোনালী ব্যাংকের ভেতরে সঞ্চয় ব্যুরো অফিসে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন। ২০ লাখ টাকা পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তিনি।
আলাপকালে জানান, তিনি শুনেছেন, সুদ কমে যাবে। এ কারণে দেরি না করে পেনশনের উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, গৃহিণীদের অনেকেই স্বামী-সন্তান ও বাবা-মা থেকে পাওয়া সামান্য অর্থ জমিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনে তার থেকে যে মুনাফা পান, তা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন কাজে লাগান। মুনাফা কমালে তাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষ সমস্যায় পড়বেন।
বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো ঠিক হবে না। অবশ্য সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সুযোগ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে সঞ্চয়পত্রে বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের ডিজি বাবুল কুমার সাহা বলেন, এনবিআরের আইনের সঙ্গে আমাদের আইনে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি-না, তা চিহ্নিত করবে কমিটি এবং সে অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করা হবে। সঞ্চয়পত্রে অর্জিত মুনাফা তুলতে গিয়ে অনেক সময় উৎসে কর কর্তন নিয়ে হয়রানির শিকার হউন সঞ্চয়কারীরা। কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক বৈঠকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বিষয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বলা হয়, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদহারে পার্থক্য ৬ শতাংশের মতো। সঞ্চয়পত্রের সুদ গড়ে ১ শতাংশ কমালেও সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমবে না। সঞ্চয়কারীদের আগ্রহ এখানেই বেশি থাকবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদহার না কমানোর জন্য বিভিন্ন মহলের চাপ আছে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে সরকার এমন কিছু করতে চাইছে না, যাতে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হয়। এ কারণে এ মুহূর্তে সুদহার কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, সরকার সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘সঞ্চয় অধিদপ্তর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র অফিসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে, যাতে কেনাবেচায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় ও সঞ্চয়কারীদের হয়রানি লাঘব হয়।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, প্রকল্পের খসড়া তৈরি হচ্ছে। এ প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে বিনিয়োগ সীমা সংশোধনের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা আপাতত স্থগিত রয়েছে। নীতিমালা পরিবর্তনের চেয়ে সংস্কারের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চায় সরকার।
Posted ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta