কক্সবাংলা ডটকম(১ ডিসেম্বর) :: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেন প্রথম স্টেশন ছেড়েছে বৃহস্পতিবার। এদিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ২৬টি দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
অপরদিকে সরকারের প্রলোভনে পা না দিয়ে দলের ঐক্য ধরে রাখায় এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে বিএনপিতে। এতে খুশি দলটির হাইকমান্ডও। বিষয়টিকে চলমান আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে সিনিয়র নেতারা।
জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর ইসির তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছিল। নির্বাচনি ট্রেনে বিএনপিসহ কোন কোন রাজনৈতিক দল উঠবে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে আদৌ নির্বাচন হবে কি হবে না, এমন নানা প্রশ্ন ছিল রাজনৈতিক মহলে। সব প্রশ্নের জবাব মিলেছে বৃহস্পতিবার।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ভোটের ট্রেন প্রথম স্টেশন ছেড়ে দিয়েছে। ফলে ইসির দেওয়া তফসিল অনুযায়ী, যেসব রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থীরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেনি ওই রাজনৈতিক দলগুলোর আর ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ রইল না। এ যাত্রায় আবারও ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনি ট্রেন মিস করল বিএনপি।
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে নির্বাচন কমিশন সূত্র পাঠানো তথ্য অনুসারে, সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২ হাজার ৭৪১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ
৩০টি রাজনৈতিক দলের মোট ২ হাজার ৪৩৭ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৫১৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ইসি সূত্র জানায়, সারাদেশে সর্বোচ্চ ৪০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফেনী-৩ আসনে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মোট প্রার্থী আট।
গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার সঙ্গে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় তিনি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার কথা বলেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করতেও নৌকার প্রার্থীদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। এরপরই অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, জনগণের অংশগ্রহণে একটি ভালো নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচন ভোটারবিহীন হবে না। জাতিসংঘ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও যুক্তরাষ্ট্র, কমনওয়েলথসহ অনেকে পাঠাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে প্রায় শতাধিক পর্যবেক্ষকের নাম এসেছে।
নির্বাচনের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যা বলেছে, আমরাও তা-ই চাই। নির্বাচন নিয়ে যত বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, যত অপবাদ ছাড়ানো হয়েছে, সেখানে কিন্তু অনেকে ভেবেছিল বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সাড়া দেবেন না। কিন্তু ইতিমধ্যে শতাধিক পর্যবেক্ষক সাড়া দিয়েছেন। এ নিয়ে আমরা চিন্তিত না।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, সেটি থামানোর ক্ষমতা আন্দোলনে থাকা বিএনপির নেই। অবরোধ-হরতাল এখন ভয়তাল হয়ে গেছে। যে ট্রেন ছেড়ে গেল, সে ট্রেন থামানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তবে ট্রেনে তারা না উঠলে আমরা কী করব? নির্বাচনি ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। ট্রেন ছাড়লে তো আর থামে না। থেমে থাকবে না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে, আমাদের এর বিকল্প কী করার আছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর মধ্যে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। ইসিও বলছে, তফসিলের সময় আর বাড়াবে না। ফলে নির্বাচনি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এতে এবারও নির্বাচনি ট্রেন মিস করল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু বিএনপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি, সে হিসেবে তাদের ছাড়াই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল পেছাতে পারত। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে আসার ব্যাপারে কিছু বলেনি, তাই হয়তো নির্বাচন কমিশনও তফসিল পুনর্নির্ধারণ করবে না। যেহেতু আর তফসিল পুনর্নির্ধারণ হচ্ছে না, ফলে নির্বাচনি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। যেহেতু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। পুনঃতফসিলও হচ্ছে না, ফলে নির্বাচনি ট্রেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ট্রেন মিস করেছে বিএনপি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। আর পুনঃতফসিলও হচ্ছে না। এতে নির্বাচনি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। বিএনপির আর নির্বাচনি ট্রেনে ওঠার সুযোগ থাকল না। ফলে বিএনপিকে বাইরে রেখেই আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ভালো একটি নির্বাচন মানে-সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন।
একতরফা নির্বাচন হলে সেটা রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও মানুষের জন্য কল্যাণকর হয় না। ফলে আমাদের একটা ভালো নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। ইসিও বলছে, তফসিল পুনর্নির্ধারণ করা হবে না। ফলে বলতেই হয়, নির্বাচনি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্ধারিত সময়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। ফলে এবারও বিএনপি নির্বাচনি ট্রেন মিস করল।
এদিকে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ৯৮টিসহ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে মোট ১১৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ঢাকা-৮ আসন থেকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার মো. সাবিরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ঢাকা-৪ আসনে ৮ জন, ঢাকা-৫ ছয়, ঢাকা-৬ ছয়, ঢাকা-৭ সাত, ঢাকা-৮ ১৩, ঢাকা-৯ নয়, ঢাকা-১০ আট, ঢাকা-১১ সাত, ঢাকা-১২ তিন, ঢাকা-১৩ চার, ঢাকা-১৪ পাঁচ, ঢাকা-১৫ পাঁচ, ঢাকা-১৬ তিন, ঢাকা-১৭ সাত ও ঢাকা-১৮ থেকে সাত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সাবিরুল ইসলাম আরও জানান, আওয়ামী লীগ ১৩, জাতীয় পার্টি ১৭, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ১২, জাকের পার্টি ৬, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৩, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ১২, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসএফ) ৬, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১, তৃণমূল বিএনপি ৭, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ১, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ১, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৬, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেল বিটিএফ (২), ইসলামী ঐক্যজোট ১, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৬, গণতন্ত্রী পার্টি ১, মুক্তিজোট ৪, গণ ফ্রন্ট ৩, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২ ও স্বতন্ত্র থেকে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ও কয়েকটি দলের দাবির পর (পুনঃতফসিল করে) মনোনয়নপত্র জমার সময় ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২৮ নভেম্বর করা হয়। সেবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলই অংশ নেয়।
এমনকি বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতারাও নির্বাচনে নেয়ার কোনো প্রলোভনে সাড়া দেননি। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন পর্যন্ত শাহজাহান ওমরসহ বিএনপি’র মাত্র দু’জন সিনিয়র নেতা ও শরিক দলের এক নেতা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যে কয়েকজন নেতা দল ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এদিকে সরকারের প্রলোভনে পা না দিয়ে দলের ঐক্য ধরে রাখায় এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে বিএনপিতে। এতে খুশি দলটির হাইকমান্ডও। বিষয়টিকে চলমান আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে সিনিয়র নেতারা।তারা জানিয়েছেন, নানা প্রলোভন দিয়েও বিএনপি ও শরিক দলের নেতাদের একতরফা নির্বাচনে নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকায় সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ বাড়বে। বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও মনোবল চাঙ্গা থাকবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা দেখাতে পারবে- সরকারের এই ধরনের সাজানো নির্বাচনে কারোরই আগ্রহ নেই।
ওদিকে সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে নতুন কৌশল প্রণয়ন করছে বিএনপি। জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ৩৬টি দল ছাড়াও ডান-বাম ও ইসলামী দলগুলোকেও আন্দোলনের মাঠে নামাতে চায় বিএনপি। ইতিমধ্যে এসব দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে তারা।
সংলাপে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন, সরকারের পতন এবং রাষ্ট্র মেরামতে জাতীয় ঐক্য গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এ ছাড়া বিরোধী জোটের চলমান আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে মাঠে নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলনও।
ওদিকে গতকাল বিকালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা সমমনা এসব দল নিয়ে যৌথসভা করেছে বিএনপি। সরকার বিরোধী ডান-বামসহ সব ইসলামী দল নিয়ে একটি বৃহৎ আন্দোলনের জোট গড়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জোটের একাধিক নেতা।
বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, রাজপথে আন্দোলনে শক্তি বাড়াতে জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনকেও পাশে চায় বিএনপি। সেজন্য দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা হয়েছে। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। তবে বিএনপি’র ডাকা হরতাল-অবরোধে একাত্মতা ঘোষণা করে জামায়াতের মতো একই কর্মসূচি দেবে না তারা। কিন্তু বিএনপি’র কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন থাকবে তাদের। সভা-সমাবেশে-বিক্ষোভ মিছিলের মতো নিয়মিত নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে দলটি।
এদিকে আন্দোলন বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিং করেছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। এ ছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গেও ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আগামীতে আন্দোলন কর্মসূচি আরও জোরালোভাবে পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হরতাল-অবরোধ যেন সর্বাত্মকভাবে পালন হয় সেভাবে কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি’র সিনিয়র এক নেতা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে চলমান কর্মসূচি থেকে বিএনপি’র পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধ বাদ দিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি দেয়ার মতো পরিবেশও নেই। বেশির ভাগ সিনিয়র নেতা কারাগারে। হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলার হুলিয়া নিয়ে ফেরারি। ঘেরাও কিংবা সমাবেশের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কঠিন। চলমান আন্দোলন থেকে পিছু হটলে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। তাই আগামী সপ্তাহেও চলমান কর্মসূচিতেই থাকতে পারে দলটি।
তবে কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য নানা আলোচনা চলছে। শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার বিরতির দিনগুলোতে ভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে কারাবন্দি নেতাদের স্বজনদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কর্মসূচিটি বেশ সাড়া ফেলেছে। এ ধরনের আরও কর্মসূচি দেয়ার কথা চিন্তা করছে দলটি।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকার বিএনপিকে ভাঙার এবং বিএনপি জোট থেকে কিছু দলকে লোভ দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিছু নিকৃষ্ট লোভী ছাড়া কেউ সরকারের এই হীন কর্মের সঙ্গী হয়নি। এ দ্বারা আওয়ামী হটকারী নির্বাচনের বিরুদ্ধে ডান-বাম-ইসলামী দলগুলোর এক বিরাট পরোক্ষ ঐকমত্য তৈরি হয়ে গেছে। সঠিক নেতৃত্ব পেলে এই পরোক্ষ চিন্তার ঐকমত্য রাজপথের আন্দোলনের জন্য বড় রাজনৈতিক জোট তৈরি করে ফেলতে পারে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর মান্না বলেন, সরকার ভূইফোঁড় দলগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টায় প্রমাণ হয়েছে তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে। এই একতরফা নির্বাচন তাদের বাঁচাতে পারবে না, তাদের নির্বাসনে পাঠাবে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চলমান আন্দোলন থেকে পিছু হটার প্রশ্নই আসে না। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা লোভে পড়ে সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা রাজনীতির আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হবেন। সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে তাদের বেইমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের দাবির সঙ্গে বিএনপি’র দাবির মিল রয়েছে। তারাও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে চায় না, আমরাও চাই না। তবে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। নতুন কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। আমরা আন্দোলনে আছি, আন্দোলনে থাকবো।
Posted ১:১১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta