কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জুন) :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে ২১ জুন ভারত যাচ্ছেন। এটি হবে চলতি মাসে তার দ্বিতীয়বারের মতো দিল্লি সফর।
পরদিন ২২ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রথমেই দিল্লি যাওয়ার বিষয়টি দুই দেশের আলোচনায় চূড়ান্ত হয়।
কিন্তু এরই মধ্যে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের কারণে সফরটি নিয়ে একটু গড়িমসি দেখা দেয়।
যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিল ভারত।
এরই মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে চীন সফরের সময় চূড়ান্ত করে ঢাকা ও বেইজিং।
এ পর্যায়ে ধারণা করা হয়েছিল, দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতের আগে চীন সফরটি হতে পারে শেখ হাসিনার প্রথম সফর।
কিন্তু চীনের সঙ্গে সফরের তারিখ ঠিক হওয়ার পর গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সফরের আমন্ত্রণ নিয়ে আসেন শেখ হাসিনার কাছে।
ঢাকা ও দিল্লির শীর্ষপর্যায়ে সেই সময়ই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে জুনের শেষ সপ্তাহে শেখ হাসিনার সফরসূচি নির্ধারণ করা হয়।
এরপর টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির বিজয়ে শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা জানালে মোদি শপথ অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানান।
শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ৮ জুন দিল্লি যান।
মোদির শপথ গ্রহণের পর দুই নেতার মধ্যে সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয় এবং দুই নেতাই একে অন্যকে নিজ নিজ দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ফলে অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফরে শেখ হাসিনা দিল্লি যাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল।
এ পর্যায়ে ধারণা করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর ২১ জুনের সফরটি পিছিয়ে যাবে। এ সফর নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে গত দুদিন।
এটি আগামী সেপ্টেম্বরে হওয়ার বিষয়ও আলোচনা আসে। আবার বলা হয়, প্রতিবেশী নীতির স্মারক হিসেবে জুনের শেষ সপ্তাহে মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন।
এ নিয়ে দিল্লির গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যাচ্ছেন।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে বড় পরিবর্তন আসে।
সংযুক্তি, বিদ্যুৎ সহযোগিতা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও রয়েছে।
ভারতের অগ্রাধিকার হচ্ছে নিরাপত্তা। অন্যদিকে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হচ্ছে পানি। এ ক্ষেত্রে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন ইস্যুর সুরাহা হয়নি।
এ ছাড়া ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশি হত্যা এবং বাণিজ্যের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা নিয়েও জটিলতা রয়েছে।
আমিরাতের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ইউএইর বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে ঢাকায় নিযুক্ত ইউএইর রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলি আবদুল্লাহ খাসেফ আলহামউদির সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ইউএই রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ চাকরি নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশি জনশক্তিকে ভিসা দেবে।
খানের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন যে তারা বাংলাদেশ থেকে জনবল নেবেন, যাদের জন্য চাকরি অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং আমিরাতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে কোনো অবৈধ অভিবাসীকে অনুমতি না দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। ‘উভয় দেশ এই বিষয়ে আরও সচেতন হতে সম্মত হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে ইউএইর রাষ্ট্রদূত বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু মন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন এবং তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার নতুন উপায় খুঁজবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিমধ্যেই বেশ বিস্তৃত এবং গভীর বন্ধন রয়েছে, তবে আমরা এটিকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী।’
আলহামউদি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২০,০০০ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আমিরাতের দূতাবাস প্রতিদিন প্রায় ১০০০টি ভিসা দিচ্ছে, সরাসরি ৫০০ এবং ৫০০টি এজেন্টদের মাধ্যমে।
রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে তার দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ইউএইর প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেহেতু সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেছেন, সে বিষয়ে আলহামউদি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ সফর করতে আসা ইউএইর মন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
ইউএই রাষ্ট্রদূত কনটেইনার টার্মিনালসহ বাংলাদেশে দেশটির বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘সরকার সব সেক্টরে সবকিছুর গতি বাড়াচ্ছে। আমরা গতি বাড়ানোর জন্য সবকিছু করছি।’
ইউএই রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশের একটি কোম্পানি বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচলে অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম (এপিআইএস) সরবরাহ করতে চায়। প্রক্রিয়াটি মূল্য আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, এ বিষয়টি এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
নিরাপত্তার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে এখন ভ্রমণের আগে এয়ারলাইনস থেকে যাত্রীদের বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজন হয়। এটি অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন (এপিআই) নামে পরিচিত।
Posted ৪:০৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta