কক্সবাংলা ডটকম(১২ জুন) :: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় নজরদারিতে রয়েছেন ছয় চিত্রনায়িকা। তাদের শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
কলকাতার পুলিশের কাছে দেশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের ছয়জন নায়িকা ও মডেলকে কলকাতার পঞ্চলা ও গৌরবতীর ফ্ল্যাটে শাহীন নিয়ে গিয়েছিলেন।
এদের মধ্যে আনার এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে সময়ও কাটিয়েছিলেন।
ওই নায়িকা কলকাতার একাধিক ছবিতে অভিনয় করে সুনামও কুড়িয়েছেন। বয়স ৩০ এর কোটায় বাংলাদেশি ওই নায়িকা চলনে-বলনে স্মার্ট বলে পরিচিত।
আনার হত্যার ঘটনায় এই ছয় মডেল ও নায়িকাকে খুব শিগগরি জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্র জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আনার হত্যার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ খুনের সঙ্গে জেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জড়িত হওয়ার বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করে।
এরপরই গোয়েন্দারা জেলার নেতাদের নজরদারিতে রাখা শুরু করেন। খুনের মোটিভ জানতে সংগ্রহ করে সবার বায়োডাটা।
এ হত্যাকাণ্ডের মাঠপর্যায়ে তদন্তের শুরুতে ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সম্পৃক্ততার নাম আসে।
তখন মাঠপর্যায়ে আরও তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি হাই কমান্ডকে অবহিত করে।
তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গ্রিন সিগনাল পাওয়ার পর মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার গ্যাস বাবু পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টুর নাম বলেছিলেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম করিম মিন্টুকে মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির এলাকার একটি বাসা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে পরিকল্পনাকারীদের একজন আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু।
স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আনার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
এর নেপথ্যে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক পাচার, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা যাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে আসছিলেন একাধিক প্রভাবশালী এমপি।
এসব এমপিরা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক পাচার, হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদেরকেই কেবল সুরক্ষা দিতেন না, এমপি মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গেও তারা জড়িত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত রবিবার ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মদ বাবুকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এমপি আনারকে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের দোতলার একটি অ্যাপার্টমেন্টে হত্যার পর চেয়ারে নগ্ন হয়ে বসা ও মুখে টেপ দেওয়া অবস্থার একটি ছবি আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল ও মিন্টুর মোবাইলে পাঠায় খুনিরা। মোবাইলে ছবি পাঠানোর সূত্র ধরে ডিবি তাদেরকে গ্রেফতার করে।
এমপি আনার ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া মিন্টুর সঙ্গে বিরোধ বাধে। তার নির্বাচনি এলাকার অনেকেই মনে করেন এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে পরিকল্পনাকারীদের একজন এই মিন্টু।
আনার হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহীন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রভাবশালী এমপিদের ঘনিষ্ঠজন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রভাবশালী এক এমপির কন্যার বিয়েতে এমপি আনার একটি প্রাডো মডেলের গাড়িও উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। এতেও ওই প্রভাবশালী এমপি আনারের ওপর সন্তুষ্ট হননি।
২০১৪ সাল থেকে এমপি আনার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক পাচার ও হুন্ডি ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।
এই সব ব্যবসায়ী মাফিয়াদের কাছ থেকে এমপি আনার প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মতো পেতেন। এই টাকার ভাগ নিয়ে ওই সব অঞ্চলের সাবেক ও বর্তমান প্রভাবশালী কতিপয় এমপির সঙ্গে বিরোধ বাধে।
এর মধ্যে একজন প্রভাবশালী এমপি আনারের মাধ্যমে প্রতি মাসে দুই কোটি টাকা করে পেয়ে আসছিলেন।
কিন্তু ২০১৪ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে আনার এই টাকার ভাগ বর্তমান এবং সাবেক প্রভাবশালী এমপিদেরকে দিতেন না। এই বিষয়টিও তাকে হত্যার অন্যতম একটা কারণ।
এই অঞ্চলে স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ও হুন্ডি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শতাধিক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। কিন্তু সাক্ষী প্রমাণের অভাবে একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি।
যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী দেবেন বলে ধরা হয় তাদেরও একই পরিণতি ঘটে। ফলে এসব মামলায় কেউ সাক্ষী দিতে যায় না। এ কারণে স্বজনহারারা ন্যায়বিচার থেকে থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
এমপি আনারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়েও তার নির্বাচনি এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের বাসিন্দারা একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তার স্বজনরাও একই কথা বলছেন।
এই হত্যার নেপথ্যে জড়িত খুনিদের রক্ষা করতেও সেইসব প্রভাবশালী এমপিরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, তার হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকবে তাদেরকেই আমরা গ্রেফতার করবো। ইতিমধ্যে অনেক নেতারাই গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।
এর আগে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরও অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন।
নৃশংস এই খুনের অন্যতম হোতা সিয়াম এখন ভারতের সিআইডির হেফাজতে রয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি বাংলাদেশের ডিবি পুলিশকে কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই কারা হচ্ছে।
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম।
২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
পরে পুলিশ এ মামলায় গ্রেপ্তার করেন শিলাস্তি, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজিকে।
পরে আদালত শিলাস্তিসহ মোট তিনজনকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রথম দফায় রিমান্ডে কিছু তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে ডিবি পুলিশ গত ৩১ মে পুনরায় আদালতে আসামিদের হাজির করে আবার রিমান্ডের আবেদন করে।
শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে গ্যাস বাবুর কথা বলেন। গ্যাস বাবু আবার ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর এ খুনের জড়িত হওয়ার কথা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত হোক না কেন সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।
আনার হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডে আগে যে কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের কাছে মিন্টুর নাম জানা যায়নি।
তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তবে মাঠপর্যায়ে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রাখেন। আনার হত্যাকাণ্ডের পর মিন্টুর গতিবিধি ভালো ছিল না।
প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে ডিবি ট্র্যাকিং করা শুরু করলে তিনি ঢাকা, ঝিনাইদহ, খুলনায় অবস্থান করা শুরু করেন।
এ মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার নাম উঠে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১২ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta