আব্দুল হামিদ,নাইক্ষ্যংছড়ি(২৯ জুলাই) :: কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গহীণ অরণ্যে জলপাই রঙের পোষাকধারী শতাধিক সদস্যের একটি বাহিনীর আনাগুনা নিয়ে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী-দোছড়ি সীমান্তের অদূরে সাপমারাঝিরি-লেদুখাল নামক এলাকায় এই বাহিনীটির উপস্থিতি দেখতে পায় স্থানীয় কৃষকরা।
তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও রাতেই বিজিবির অতিরিক্ত সৈনিক পাহাড়ী অরণ্যে অভিযানে যেতে দেখেছেন বলে স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস যাবৎ জলপাই রঙের পোষাক পরিহিত স্বল্প সংখ্যক সদস্যের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় বিচরণের খবর পাওয়া গেলেও গত তিন দিন যাবত দোছড়ি ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া বিজিবির আওতাধীন সাপমারাঝিরি-লেদুখাল এলাকায় অন্তত শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর আনাগুলা দেখতে পায় স্থানীয়রা। অত্যাধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত ওই বাহিনীটি নিজেদের ‘‘আরাকান পার্টি’’ হিসেবে স্থানীয়দের পরিচয় দিচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যাক্তি জানান- জলপাই রঙের পোষাকধারী সন্ত্রাসীরা আরাকান পার্টি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত খামার থেকে খাবার হিসেবে ফলমূল নিয়ে গেছে। পরে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হলে বৃহস্পতিবার রাতে ৩১বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল আনোয়ারুল আযীমের নেতৃত্বে বিজিবি পৃথক অভিযানে নেমেছে।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আলম জানান,দীর্ঘদিন যাবত এলাকার রাবার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অপহরণ ও চাদাঁবাজীতে অতিষ্ঠ। গত কয়েকমাস পূর্বে হাঙ্গার্স পিপলস পার্টি (এইচপিপি) নামক একটি উগ্রপন্থি গ্রুপের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাবার বাগানে চিঠি পাঠানো হয়।
বিষয়টি তিনি উর্ধ্বমহলে অবহিত করেছেন জানিয়ে এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য গহীণ অরণ্যে সেনা-বিজিবির যৌথ অভিযান জোরদারের দাবী তোলেন।
উগ্রপন্থি এ সন্ত্রাসী গ্রুপটি নাইক্ষ্যংছড়ি-লামা সীমান্তের তিরের ডিব্বা এবং আলীক্ষ্যং-ঈদগড় ও বাইশারী মৌজায় আনাগুনা দেখা গেলেও মূলত তারা ছাগলখাইয়ার অদূরে সাপমারাঝিারি-লেদুমুখ এলাকায় প্রায় সময় অবস্থান করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন পাহাড়ের কাঠুরিয়ারা।
এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ানের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে.কর্ণেল আনোয়ারুল আযীম জানান- পাহাড়ী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলার জন্য সবসময় অভিযান চলে। তবে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বিজিবির অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে মায়ানামার বিদ্রোহী উপজাতীয় কিছু জনগোষ্টী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতীদের আত্মীয় স্বজন পরিচয় দিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করছে। যার কারণে শুক্রবার সীমান্তের দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: হাবিবুল্লাহকে বিজিবি তলব করে সর্তকর্তার সাথে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিগত ২০০৩ সাল নাগাদ সাপমারাঝিরি-লেদুখাল নামক ওই এলাকায় মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি (এএ) হেডকোয়াটার হিসেবে ব্যবহার করে। তৎসময় সেনা-বিজিবি ব্যাপক অভিযানে শত শত ভারী অস্ত্র উদ্ধার করে আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে একই স্থানে জলপাই রঙের পোষাক পরিহিত সন্ত্রাসী বাহিনীর আনাগুনা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আতংকে ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তের মানুষের মাঝে।
Posted ৪:০০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৯ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta