কক্সবাংলা ডটকম(১৮ ডিসেম্বর) :: পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোয়েটায় একটি গির্জায় দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত আটজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। বড়দিনের এক সপ্তাহ আগে গতকাল গির্জায় একটি ধর্মসভা চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। খবর এএফপি, আল জাজিরা।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার একটি মেথডিস্ট গির্জায় এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্র সচিব আকবর হারিফাল জানান। বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে দুজন নারী রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রদেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটে চলেছে।
বোমা হামলায় আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রাদেশিক কর্মকর্তারা জানান, গতকাল একটি আত্মঘাতী হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে গির্জার বাইরে এক বোমা হামলাকারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তার মারা যাওয়ার কথা জানা গেছে। প্রাদেশিক পুলিশপ্রধান মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং হামলাকারীদের প্রধান হলে প্রবেশে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি জানান, প্রথম হামলাকারী বেথেল মেমোরিয়াল মেথডিস্ট গির্জার প্রধান ফটকে আত্মঘাতী হয়। এ সময় ফটকের কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দ্বিতীয় হামলাকারী আহত হয়। তিনি আরো জানান, তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল মুক্ত করা হয়। এ মুহূর্তে আশপাশের অঞ্চলে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশের অভিযান চলাকালে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ভারী গুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এদিকে হামলার ঘটনার পর বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, সাধারণত রোববারগুলোয় গির্জায় আড়াইশ লোকের জমায়েত দেখা যায়। কিন্তু বড়দিন কাছে চলে আসায় গতকাল গির্জার ধর্মসভায় প্রায় ৪০০ লোক উপস্থিত ছিল। টুইটারে এক বার্তায় মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হতো, তবে চারশর বেশি মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ত।
হামলার পর গির্জার মেঝেজুড়ে ভাঙা আসন, বাদ্যযন্ত্র ও জুতা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি।
পাকিস্তানের ২০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ খ্রিস্টমতাবলম্বী। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্ন বেতনে কাজ করতে হয় তাদের। এছাড়া অনেক সময় তাদের ব্লাসফেমি অভিযোগের লক্ষ্যবস্তু হতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যান্য সংখ্যালঘুর পাশাপাশি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
গত বছর ইস্টারের সময় লাহোরে ভয়াবহতম হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় লাহোরের একটি পার্কে আত্মঘাতী বোমা হামলায় শিশুসহ ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। পরে পাকিস্তানি তালেবানের অংশ জামাত উল আহরার হামলার দায় স্বীকার করে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী পাকিস্তানের খনিজ সমৃদ্ধ বেলুচিস্তান প্রদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তসংলগ্ন বেলুচিস্তান পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের মধ্যে বৃহত্তম। কিন্তু প্রদেশটির ৭০ লাখ অধিবাসী দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ও খনিজ সম্পদের ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে আসছে।
এ নিয়ে সহিংসতাও চলছে এখানে। তবে শান্তি ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রদেশটিতে সহিংসতার হার উল্লেখজনকভাবে হ্রাস করেছে।
Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta