কক্সবাংলা ডটকম :: গল্পের শুরু ২০১৭ সালে। যখন কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৮ টাকা। ২০১৭ সালের মে থেকে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের দাম বাড়তে থাকে। আগস্টে এই শেয়ারের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ টাকা। এই সময়ে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে ফলাও করে নিউজ করা হয়ঃ
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের দায়িত্ব নিচ্ছে ইউরোদেশ গ্রুপ। দ্বিতীয় দফায় আবার ২০১৮ সাল থেকে এই শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। পাশাপাশি মিডিয়াতে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে গরম গরম নিউজ আসতে থাকে। শেয়ারের দাম একটু বাড়ে আর কোম্পানি একটি করে নিউজ প্রকাশ করে। এভাবে ২০১৮ এবং ২০১৯ এই ২ বছরে কোম্পানি একটার পর একটা ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির খবর প্রকাশ করতে থাকে।
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ২ বছরের নিউজ গুলো ক্রমানুসারে নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
গ্যাস সংযোগ পেয়েছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
মুনাফায় ফিরেছে সুহৃদ।
কারখানা প্রসারিত করবে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
আয় বাড়াতে পরিশোধিত মূলধন কমাবে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
শেয়ার দিয়ে ঋণ সমন্বয় করবে সুহৃদ। এনআরবি ব্যাংকের সঙ্গে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋণ সমন্বয় করা হবে ২৬ লাখ শেয়ারের মাধ্যমে। এনআরবি ব্যাংক কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩৭.৪২ টাকায় কিনবে। অথচ সেই সময় কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ২৩ টাকা।
বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন করবে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ পাচ্ছে এশিয়ার সেরা ব্র্যান্ড পদক।
ব্যবসা সম্প্রসারণের ঘোষণা দিল সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
আইটি ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
৫ কোটি পিফারেন্স শেয়ার ছেড়ে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
ইনফোস্যাপেক্স নামে একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ। ইনফোস্যাপেক্স-সুহৃদ জেভিসি (জয়েন্ট ভেঞ্চার কনর্সোটিয়াম) মাধ্যমে নুতন ব্যবসা করবে কোম্পানিটি।
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ আইটি খাতের প্রতিষ্ঠান ডেভনেট লিমিটেডের সঙ্গে জেভিসি (জয়েন্ট ভেঞ্চার কনসোর্টিয়াম) গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এভাবে একটার পর একটা নিউজ আসতে থাকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এই ২ বছরে কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হয়ে উঠেন। কয়েকদিন পরপর টিভিতে এসে কোম্পানির গুণ গান গাইতেন। তাছাড়া পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাকে সেই সময় দেখা গেছে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সেই গল্প চূড়ান্ত অবস্থায় উপনীত হয় ২০১৯ সালে এসে। এই সময় শেয়ারটি দাম ৪৫ টাকা উঠে যায়।
২০১৯ সালে এসে কোম্পানিটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ায় সবাই অবাক হয়ে যায়।
২০১৭ সালে শুরু হওয়া সেই গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০২০ সালে এসে। সেই বছর তারা এজিএম করলেও সেই ২০১৯ সালের ক্যাশ ডিভিডেন্ড আজও বিনিয়োগকারীরা পায়নি। মিথ্যা খবর প্রকাশ করে ৮ টাকার শেয়ার ৪৫ টাকায় উঠিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে তাদের হাতে শেয়ার গুলো ধরিয়ে দেয়া হয়। এর পেছনে সরাসরি কোম্পানির ডিরেক্টর এবং কিছু অসাধু ব্যাক্তি জড়িত ছিল। ২০২০ সালের পর কোম্পানির আর কোন ভালো খবর আসেনি।
এরপর যে নিউজ গুলো প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো ছিল এমনঃ
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা বন্ধ ঘোষণা
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ পর্ষদে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএসইসি।
এখন আর সেই চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসানকে কোন মিডিয়ায় দেখা যায় না। হয়তো বিনিয়োগকারীদের লুণ্ঠিত টাকায় কোথাও দামি গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইউরোপ বা আমেরিকার কথা না হয় নাই বললাম, এই অপকর্মটি বাংলাদেশে না হয়ে যদি ইন্ডিয়াতেও হতো তাহলে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এবং এমডিকে জেলে পচে মরতে হতো। এভাবেই বিনিয়োগকারীদের জন্য ফাঁদ তৈরি করা হয়, আর সেই ফাঁদে পড়ে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়। এটাই যেন বাংলাদেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেষ পরিণতি। ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় বর্তমান বাজারেও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেতাত্মা অনেক কোম্পানির উপর ভর করেছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠান না হলে এই ধরনের প্রতারণা থেকে মুক্তি মিলবে না।
Posted ৫:৫৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৯ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta