মো: ফারুক,পেকুয়া(৩১ জুলাই) :: সেই ২০১২ সালের ডিসেম্বরের কমিটি ২০১৭ সালের আগষ্ট পর্যন্ত চলে গেলে। তার অর্ধেক সময় সভাপতি দিয়ে কার্যক্রম চললেও বাকি অর্ধেক সময় শুধু মাত্র স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে। সাধারণ সম্পাদকের পদটি ছাড়া বাকি কোন পূর্ণাঙ্গ পদ দলীয় নেতারা পাননি বলে অভিযোগ যেমন রয়েছে তেমনি প্রবীণ ও নবীন নেতাদের বাদ দিয়ে কর্মসূচি পালনেরও অভিযোগ আছে এ কমিটির বিরুদ্ধে। তাছাড়াও সহযোগি সংগঠনের নেতাদের সাথেও উপজেলা আ’লীগ নেতাদের সাংগঠনিক দুরত্বের কারণে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় ছিল উপজেলা আ’লীগ।
দলীয় কর্মসূচি পালন ছিল যেমন দু’ভাগে বিভক্ত তেমনি প্রকাশ্যে গ্রুপিংও ছিল দলে। বৃহত্ত সংগঠনটির করুণ অবস্থার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা দায়ী করে আসছিলেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমকে। তবে আবুল কাশেম তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে অনেক বৈঠকে জানিয়েছেন।
এর থেকে উত্তরণের পদ খোঁজতে জেলা আ’লীগ অনেক বার বৈঠক করে সাংগঠনিক টিম গঠন করে করণীয় নির্ধারণের জন্য বললেও পেকুয়ার যে আ’লীগ সেই আ’লীগ অদ্যবধি রয়ে গেল। সর্বশেষ চকরিয়া-পেকুয়ায় জাতীয় নির্বাচনের আমেজ শুরু হলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পেকুয়ার দলীয় প্রবীণ ও নবীন নেতারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কাজ শুরু করেন।
জানা গেছে,২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের মাঠে ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলনে ঘাতকের হাতে নিহত আ.ক.ম সাহাবউদ্দিন ফরায়েজি সভাপতি, আবুল কাশেম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সভাপতি নিহত হওয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা আ’লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ মিলে প্রয়াত মাষ্টার আজমগীর চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে মনোনীত করে। তিনি প্রয়াত হলে আরেক প্রবীণ নেতা শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে উপজেলা আ’লীগ মনোনীত করে। বিষয়টি সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি উল্লেখ করে পেকুয়ার কয়েকজন নেতা জেলা আ’লীগ বরাবর ধারস্থ হয়।
জেলা এক জরুরী বৈঠকে জেলা আ’লীগ নেতা এ্যাডভোকেট কামাল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে ঘোষনা করে। কিন্তু উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার গ্রুপের নেতারা ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ নিয়ে কার্যালয়ে তাকে হেনাস্থ করলে তিনি রাজনীতির দলীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকেন। এরপর থেকে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম দলীয় কার্যালয়ে তার অনুগত নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও আ’লীগের প্রবীণ নেতারা দলীয় অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেন। ঝিমিয়ে পড়ে দলীয় কর্মকান্ড। যার প্রভাব পড়ে বিভিন্ন নির্বাচনে। হারিয়ে বসে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের অনেক পদ।
এ বিষয়টি বিভিন্ন সময় পেকুয়া থেকে মনোনীত জেলা আ’লীগের সদস্যরা জেলা আ’লীগের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে উৎত্থাপন করেছে বলে সদস্যরা নিশ্চিত করেন। সর্বশেষ জেলা আ’লীগ এর সদস্যরা পেকুয়া উপজেলায় কোন ধরণের আ’লীগের কমিটি নাই বলে পেকুয়ায় ১৫ আগষ্ট শাহাদত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এক জরুরী বর্ধিত সভায় ঘোষনা করলে সিনিয়র ও প্রবীন নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে হ-য-ব-র-ল আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনকে সাংঘটনিকভাবে চাঙ্গা করতে একটি কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষনা করে। যার কারণে তৃণমূলের হতাশাগ্রস্থ নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, জেলা আ’লীগের উপদেষ্টা এ্যাড: কামাল হোসেন, জেলা আ’লীগের সদস্য মো: হোছাইন, সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল চৌধুরী, সদস্য এস.এম গিয়াস উদ্দিন, সদস্য উম্মে কুলসুম মিনু, সদস্য জিএম আবুল কাশেম, উপজেলা আ’লীগের সাবেক প্রবীণ নেতা সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, শহিদুল্লাহ বিএ, কামাল হোসেন এমকম, মাষ্টার মো: সালাউদ্দিন, মো: কাজিউল ইনসান, আবুল শামা শামীম, মাশুক আহমেদ, কবির আহমদ, নেজাত মাহমুদ, আবু তালেব, আনোয়ারুল আজিম বাবুল, নবীন আ’লীগ নেতা হানিফ চৌধুরী, মো: মুফিজ, ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেছি, ছৈয়দুল হক, মমতাজুল ইসলাম, কৃষকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তালেব, সম্পাদক নাসির উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক নুরুল আবছার, সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম বাবুল, সৈনিকলীগের সভাপতি সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম হিরু, সম্পাদক মো: ফারুক, তাঁতীলীগের আহ্বায়ক জায়েদ মোর্শেদ, সদস্য সচিব মো: ইসমাঈল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন মাহমুদসহ আরো অনেক প্রবীণ ও নবীন নেতারা নৌকার বিজয় ও পেকুয়ার আ’লীগকে গর্ত থেকে তুলে আনতে করণীয় নির্ধারণে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আগামী ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে একটি কমিটি ঘোষনা করলেও সামনের দলীয় কর্মসূচি ও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। ইতিমধ্যে তারা কর্মসুচিও ঘোষনা করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আ’লীগ সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, পেকুয়ায় আ’লীগের কোন ধরণের কমিটি নাই। জেলা আ’লীগ থেকে তা অনেক বার বলা হয়েছে। তারপরও একটি পক্ষ তাদের স্বার্থ হাসিল করতে বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দলীয় পোষ্ট পদবী ব্যবহার করে নামমাত্র কর্মসূচি পালন করছে তা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। সামনে দিনে এ অবস্থা চলছে আ’লীগের ভরাডুবির কথা চিন্তা করে পেকুয়া থেকে আগত জেলা আ’লীগের নেতা ও পেকুয়া প্রবীণ ও নবীনসহ সহযোগি সংগঠনের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমাদের মূল কাজ হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পেকুয়ার আ’লীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আবুল কাশেম সাধারণ সম্পাদক দাবী করলেও পেকুয়ায় আ’লীগের কোন ধরণের কমিটি নাই।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেকদিন ধরে পেকুয়ার ভংগুর আ’লীগকে সচল করতে চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। এরই মাঝে জেলা আ’লীগের সম্মানীত নেতাদের সমন্বয়ে পেকুয়ার প্রবীণ ও নবীন নেতারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারবো ইনশাল্লাহ। এ নিয়ে ইতিমধ্যে আগামী ১৫ আগষ্ট শাহাদত বার্ষিকী পালন করার মাধ্যমে কাজ শুরু করার সবাই সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
Posted ১০:৩৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta