নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৩ সেপ্টেম্বর) :: পেকুয়ায় আসামী ধরল নিরস্ত্র অবস্থায়। পুলিশ আটককৃত ওই আসামীকে অস্ত্রসহ মামলায় জড়িয়ে পাঠাল জেলে।
৩ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুর ১ টার দিকে পেকুয়া থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃত ওই আসামীকে আদালতে পৌছায়। ২ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে তাকে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের মিয়াপাড়া বেড়িবাঁধ থেকে গ্রেফতার করে।
তার নাম মো: ইউনুছ(৩৮)। তিনি ওই ইউনিয়নের হাজিরপাড়ার শামশুল আলমের ছেলে। জিআর ০৮/১৩ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ছিল। পেকুয়া থানার এস,আই সুমন সরকার ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে। ওয়ারেন্টভূক্ত ওই আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ প্রথমে গ্রেফতারের সত্যতা অস্বীকার করে। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের তৎপরতায় গ্রেফতারের প্রায় ২ ঘন্টা পর আটকের সত্যতা স্বীকার করে।
আটককৃত আসামীকে নিয়ে থানায় স্বাসরুদ্ধকর অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিপক্ষ পুলিশকে কন্টাক করে। ওই সম্পর্কে আসামীর পরিবার ওয়াকিবহাল ছিল। এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছিল। সে সময় নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে। তবে পুলিশ তাকে অস্ত্র দিয়ে অন্যায়ভাবে চালান দেয়। একইভাবে জেল ফেরত ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে।
সন্ধ্যার দিকে আটক করছিলেন নিরস্ত্র অবস্থায়। পরদিন দুপুরে তাকে একটি দেশীয় তৈরী একনলা বন্ধুকসহ আটক দেখায়। অস্ত্র আইনে মামলাসহ পূর্বের গ্রেফতারী পরোয়ানায় তাকে জেলে পৌঁছায়। পরিবারের দাবী এ ব্যক্তি চক্রান্তের শিকার। প্রতিপক্ষ অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা মামলাবাজ। পুলিশকে কন্টাক করে অস্ত্র আইনে তাকে একাধিক মামলায় জড়ায়।
আটককৃত ব্যক্তির স্ত্রী রোকসানা বেগম পুলিশের অস্ত্রসহ গ্রেফতারের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেন। ওই নারী জানায়, আমার স্বামীর প্রতি পুলিশের বর্বরতা চলছে। তিনি ১ জন কৃষক। কঠোর পরিশ্রম করে স্ত্রী ছেলে সন্তানের জীবিকা নির্বাহ করে। তবে প্রতিপক্ষ পুলিশকে ম্যানেজ করে দফায় দফায় গ্রেফতারসহ অস্ত্র দিয়ে চালান দিয়েছে।
আমার স্বামী নিরাপরাধ। তাকে অন্যায়ভাবে অস্ত্র দিয়ে জড়ানো হচ্ছে। আমার স্বামী লবণ চাষ করে। বর্ষার সময় চিংড়ি চাষ করে। বিকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় আরবশাহ বাজারের পূর্ব পাশ থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। ওই দিন আমার স্বামী আরবশাহ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বিকেলে তিনি বাজারসহ বাড়িতে আসার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। আমরা দ্রুত সময়ে থানায় হাজির হয়। সুমন সরকার নামের পুলিশ কর্মকর্তা তাকে আটক করে।
এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীরা ছিল। আমার স্বামী নিরস্ত্র ছিল। থানায় এসে দেখতে পায় প্রতিপক্ষ ও পুলিশ এ পরিস্থিতিকে গভীর সুকৌশলে নেয়। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, আমার স্বামীকে নতুন মামলায় জড়াবে। ওসির সাথে বুঝাপড়া করতে ইঙ্গিত দেয়। এতে আমি নিশ্চিত বুঝে গেছি আমার স্বামীকে নিয়ে নতুন করে চক্রান্ত চলছে। প্রথমে পুলিশ গ্রেফতারের বিষয় এড়িয়ে যান। আমি সাংবাদিকদের সহায়তায় গ্রেফতারের বিষয়ে অবগত হয়। পরদিন দুপুরে আমার স্বামীকে অস্ত্র দিয়ে আগের মামলা ও নতুন করে আরেকটি মামলাসহ পুলিশ জেলে পাঠায়। যিনি আটক করেন তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হননি।
ওসি তাকে চাপ প্রয়োগ করছিলেন। তিনি অস্ত্র দিতে রাজি হননি। বিব্রতবোধ করায় ওসি আরেকজন অফিসারকে দিয়ে এ মামলায় জড়ায়। এ দিকে মো: ইউনুছ গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তার স্ত্রী ও পরিবার থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে পেকুয়া কলেজ গেইট চৌমুহনীতে সংবাদ কর্মীদের কার্যালয়ে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্টিত হয়। এ সময় পেকুয়ায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত হন।
পেকুয়া থানার এস,আই সুমন সরকার জানায়, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। বিকেলের দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তিনি বাদী হননি।
অপরদিকে এ মামলার বাদী হয়েছেন এস,আই শফিকুর রহমান। তদন্তভার দেয়া হয়েছে এস,আই বিপুল চন্দ্র রায়কে। এ ব্যাপারে তিনি জানায়, কর্তৃপক্ষ যে ভাবে অর্ডার দেবে আমরা সেভাবে কাজ করব। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।
রাজাখালী ইউপির নারী সদস্য ছেনুয়ারা বেগম জানায়, তার বিরুদ্ধে অবিচার হয়েছে। ধরার পর আমি থানায় এসেছি। রাতে থানায় ছিলাম। তাকে নিয়ে চক্রান্ত সেটি বুঝতে পেরেছি। রাজাখালীতে যারা প্রকৃত অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও যারা অস্ত্র মজুদ করছে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এ চক্রের হাতে।
বামুলার পাড়ার জয়নাল নামের এক ডাকাত র্যাব ও পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে সাধারন মানুষকে জিম্মী করছে। জয়নাল সহ তার সিন্ডিকেটের তিন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছে রাজাখালীর মানুষ জিম্মী হয়েছে। জয়নাল বিএনপি করে। তারা পুলিশসহ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রন করে।
মো: ইউনুছের স্ত্রী রোকসানা বেগম জানায়, নেজু মেম্বার আমার স্বামীর পিছুনে লেগেছে। নেজু , জয়নাল ও কোটিপতি টিপু আমার স্বামীকে মামলায় জড়াচ্ছে। তারা অস্ত্র ও ইয়াবা বিক্রি করে কোটিপতি। এ টাকা এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যয় করছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউনুছের স্ত্রী রোকসানা সহ তার ৫ ভাই ও শিশু কন্যা সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম জানায়, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
Posted ৮:৪৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta