মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পেকুয়ায় কমেছে মানবপাচার, বেড়েছে ইয়াবা ব্যবসা

শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০১৭
657 ভিউ
পেকুয়ায় কমেছে মানবপাচার, বেড়েছে ইয়াবা ব্যবসা

নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১১ আগস্ট) :: পেকুয়ায় মানবপাচারের ট্রানজিট আমিন বাজার। উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের উত্তর সুন্দরীপাড়া আমিনবাজার মোকাম মানবপাচারে শ্রেষ্টতম স্থান এ পেকুয়ায়। রাজাখালী ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া বর্তমানে মিনি টেকনাফে পরিনত হয়েছে।

গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ছনুয়া নদীর উপকন্ঠে আমিনবাজার দিয়ে পাচার হয়েছে শত শত মানব। সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পৌছেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকের প্রাণহানি হয়েছে সাগরে। মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের কারাগারে গেছে অনেকে।

রাজাখালী সুন্দরীপাড়া আমিনবাজারের জেটিঘাট দিয়ে ফিশিং বোট ও কার্গোবোট ভর্তি করে মানুষ পাচার হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও সমুদ্রের গভীরে বড় জাহাজে এ সব মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন রাজাখালী ইউনিয়নে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে। মালয়েশিয়া পৌছতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজাখালীর সুন্দরীপাড়া ও বকশিয়াঘোনায় জড়ো করা হত গন্তব্যস্থানে যাওয়া লোকজনকে। প্রশাসন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একাধিকবার অভিযান চালায়।

এ সময় মালয়েশিয়াগামী অনেক লোকজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। বোটের মাঝি মাল্লাসহ গত দুই বছরে রাজাখালী ও উপজেলার উপকুলবর্তী সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে আটক হয়েছে শতাধিক লোকজন। এদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ।

সুত্র জানিয়েছেন, মঙ্গা কবলিত এ সব এলাকার মানুষ কম দামে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক। তারা সে দেশে গিয়ে নিজের ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখে। দালালদের মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে কন্টাক হয় তাদের। এ দিকে আমিন বাজার মোকামটি জেলায় মানবপাচারের অন্যতম ট্রানজিট। এ মোকাম দিয়ে শত শত লোকজন পাচার হয়েছে।

চট্রগ্রাম জেলার দক্ষিণ সীমান্তবর্তী ও কক্সবাজার জেলার উত্তর সীমান্তবর্তী স্থানে এর অবস্থান হওয়ায় মানবপাচার ও চোরাচালানে এ স্থানটি পাচারকারীদের উৎকৃষ্টতম স্থান। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের খুব নিকট আমিনবাজার।

কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে ছনুয়া নদীর ত্রিমোহনায় এ বাজারটির অবস্থান মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে।

নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছেন, মানবপাচারের সাথে রাজাখালী ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া এলাকার একটি সিন্ডিকেট জড়িত। তারা পূর্ব থেকে মায়ানমারের সাথে অবৈধ ব্যবসায় লিপ্ত। সারপাচারসহ কালোবাজারী ব্যবসায় ওই সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তারা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।

জোট সরকারের সময় মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে সাগরপথে আনা হত লবণ। আর এখান থেকে পাচার হত সার। জোট সরকারের সময় ওই সিন্ডিকেট লবণ ও সার পাচার করে কোটি টাকা আয় করে। জোট সরকারের শেষ সময়ে সুন্দরীপাড়ার নুরুল আবছার কৌম্পানীর মালিকানাধীন একটি কার্গো বোট সারসহ জব্দ করে নৌবাহিনী। এ সময় একটি মামলা হয়েছে।

সুন্দরীপাড়ার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, রাজাখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত আলী মাতবর মায়ানমার থেকে সার পাচার করছিলেন। আটককৃত বোট তিনি ভাড়া নেয়। সার মায়ানমারে পাচার হচ্ছিল। পেকুয়া থানায় বোট ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ওই চেয়ারম্যান বিএনপির ক্ষমতার সময় অত্যন্ত দাপুটে নেতা ছিল।

একদিকে চেয়ারম্যান অন্যদিকে তখনকার দিনের ক্ষমতাসীন দলের নেতা। এ সুবাধে মায়ানমারের অবৈধ বাণিজ্যে তার জুড়ি ছিল না। মেহের সল্ট নামে তাদের একটি লবণ মিল আমিনবাজারে আছে। কাচা লবণ পরিশোধন করা হয়। মোড়ক যুক্ত মেহের সল্ট সে সময় থেকে বাজারজাত হয়ে আসছে।

মায়ানমার থেকে লবণ আনা হত এ মিলে। তাদের নিজস্ব কার্গো বোট নিয়ে আনা এ লবণ দেশের অন্যান্য মিলগুলিতেও সরবরাহ হত। মায়ানমারের সাথে শাহাদাত চেয়ারম্যানের অবৈধ বাণিজ্যিক ও চোরাচালীর সম্পর্কের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সে সময় স্থানীয় প্রশাসন ছিলেন নিরব ও নির্বিকার।

ওই সময় থেকে মায়ানমারের সাথে তাদের পরিবারের যোগসুত্র ষ্পষ্ট হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বাবার ওই ব্যবসার হাল ধরেন তার ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম রোবেল। তিনি ছাত্রদল পেকুয়া উপজেলা শাখার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির জৈষ্ট্য নেতা বলে খোঁজ মিলছে।

চট্রগ্রাম শহরের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও ওমরআলী মার্কেটে তাদের কারবার আছে। ফিশিং লবণ ব্যবসার সুবাধে তারা সেখানে প্রতিষ্টিত। সুত্র জানায়, শাহাদাত চেয়ারম্যানের এক ভাগিনা মালয়েশিয়ায় থেকে থাকে। মালয়েশিয়ায় আদম পাচারে ওই ব্যক্তি লিপ্ত।

সেখানকার বিভিন্ন সোর্সের সাথে তার সম্পর্ক। গত কয়েক বছর ধরে তার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার চলছে। মামাতো ভাই আনোয়ারুল ইসলাম রোবেল চট্রগ্রাম থেকে সারা দেশে নেটওয়ার্ক করছে। কন্টাক হলে মালয়েশিয়া পৌছাতে রোবেল তাদেরকে নিয়ে আসেন রাজাখালীতে। আমিন বাজার মোকাম দিয়ে সাগরপথ দিয়ে পৌছানো হয় মালয়েশিয়ায়।

গত ২ বছরের ব্যবধানে প্রশাসন রাজাখালী আমিনবাজার ও পৃথক স্থানে অন্তত ৮/১০ বার অভিযান পরিচালনা করা হয়। সুন্দরীপাড়ায় গত ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করে পেকুয়া থানা পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দিন অভিযান চালিয়ে একটি বোটসহ অন্তত ২০/২৫ জনকে আটক করে পুলিশ।

ওই ঘটনায় পেকুয়া থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়। যার নং ০৭/১৫। পেকুয়া থানার এ,এস,আই এসএম ইকবাল বাহার বাদী হয়ে ওই মামলাটি রুজু করেন। সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় পুলিশ আটক করে তাদের। আটকৃতদের মধ্যে বোটের মাল্লা জাকের হোসনও ছিল।

তিনি উত্তর সুন্দরীপাড়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে। অপর আটককৃতরা হলেন মাদারীপুর সদরের ফেয়ারপুর এলাকার ইউনুছ তালুকদারের ছেলে মুহাম্মদ হাসান তালুকদার(১৭), বগুড়ার কাহালু থানার হরিপুর এলাকার ধীরেন প্রমাণিকের ছেলে নবকুমার(১৯), একই এলাকার শফিকুল ইসলাম, ধানকুজা থানার আরশ মিয়ার ছেলে দিন ইসলাম, শিপপুর নবীনগরের মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়ার ছেলে সালমান মিয়া, মুচামিয়ার ছেলে আসামুল হক, মতলব হোসেন, যশোরের মনিরামপুরের দুধুমিয়ার ছেলে মতলব হোসেন, শুক্কুর আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন। এ সময় মামলার আয়ু পেকুয়া থানার এস,আই আটককৃতদের ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তি নেন।

আসামুল হক, মোহাম্মদ সালাম মিয়া, ইকবাল হোসেন, নবকুমার, মোহাম্মদ আলী, আবুল কালামসহ আসামীরা জবানবন্দিতে জানান, রোবেলের মাধ্যমে তারা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিল। চট্রগ্রাম শহরে তারা রোবেলের মাধ্যমে জড়ো হয়। সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পৌছাতে আনোয়ারুল ইসলাম রোবেল তাদেরকে রাজাখালীতে নিয়ে আসে। রোবেল বলেছেন, তার এক ভাই মালয়েশিয়ায় থাকে তার মাধ্যমে আমাদেরকে নেওয়া হচ্ছে। লিখিত জবানবন্দী পুলিশ আটককৃতদের নিকট থেকে এ বিষয়ে রেকর্ড করেন।

পরে বিজ্ঞ হাকিম আদালতে আসামীরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। সেখানেও মানবপাচারের সাথে রোবেলের সম্পৃক্ত থাকার কথা তারা জানায়। প্রশাসন মগনামা ও উজানটিয়া করিমদাদ মিয়ার জেটিঘাটের পশ্চিমে অভিযান চালায়। সে সময় পৃথক স্থান থেকে লোকজনকে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় আটক করে।

তবে বর্তমানে এ তৎপরতা হ্রাস পেয়েছে। সে দেশের সরকার মানবপাচার ঠেকাতে নজরদারী জোরদার করছে। পাশর্^বর্তী দেশসমুহও এ বিষয়ে কঠোর হয়েছে। থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে গণকবরের সন্ধান পায়। মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় এ সব মানুষ প্রাণ হারায়। উপকুলের তীরবর্তী শংখলায় গণকবর দেওয়া হয়। জাতিসংঘসহ বিশ^ সংস্থা সমুহ এ নিয়ে তৎপর হন। বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার ঠেকাতে অধিক জোরদার পদক্ষেপ নেয়। মানব পাচার হ্রাস পেয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, ওই চক্র এখন ব্যবসার ধরন পাল্টিয়েছে। তারা মানবপাচার হ্রাস পাওয়ায় ঝুকেছে ইয়াবা পাচারে। বর্তমানে মায়ানমারের সাথে ইয়াবার সম্পর্ক আছে বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানান, মানব পাচার এখন আর নেই। আগে হয়েছিল। এ গুলি এখন কঠিন হয়ে গেছে। আমিনবাজার দিয়ে গিয়ে থাকলে আপনারা খোঁজ নেন।

657 ভিউ

Posted ৯:৪১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com