নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১২ আগষ্ট) :: পেকুয়ায় গ্রামবাসী আ’লীগ করে বলে সড়কে নেই উন্নয়ন। দেশ শাসন করছে ক্ষমতাসীনদল আ’লীগ। তবে ইউনিয়ন শাসন করছে বিএনপি। এতে করে উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামবাসী। সরকার নীতিগত ভাবে সারাদেশে সুষম উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে। জনপ্রতিনিধি বিএনপি থেকে নির্বাচিত হলেও বরাদ্ধে নেই কোন ধরনের বৈষম্য।
তবে একটি সড়কের উন্নয়ন থেমে গেছে দীর্ঘ আড়াইযুগ সময়। উপজেলার মগনামা হাই স্কুল সড়কটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে এ সড়কে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। যানবাহন চলাচল নেই প্রায় ৫ বছর আগে থেকে। এমনকি পায়ে হেঁটেও চলাচল করা দু:সাধ্য। খানা খন্দকে সড়কটি নজিরবিহীন উন্নয়ন বঞ্চিত।
সড়কটি এ ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান গ্রামীণ সড়ক। মগনামা প্রবর্তনকাল সময় থেকে এ সড়কে যাতায়াত ব্যবস্থার সুগম হয়েছিল। হাই স্কুল সড়কটি অবিভক্ত মগনামা ইউনিয়নের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। তবে কালের বিবর্তনে প্রাচীন এ সড়কটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী গ্রামবাসী আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও উত্তাল ৭১ এর সময় এ গ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনের নেতৃত্বে পরিস্ফুটিত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য পোষন করছিলেন এ গ্রামের সন্তান এডভোকেট জহিরুল ইসলাম ও তার বড় ভাই অবিভক্ত মগনামার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। তারা আ’লীগের রাজনীতি এ অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়। সে সময় থেকে মধ্য মগনামা মুহুরীপাড়ার গ্রামবাসীরা আওয়ামী রাজনীতি ও এ চেতনাকে ধারন করছিলেন।
স্বাধীনতার পর সড়কটি মাটি ভরাট দ্বারা সংষ্কার হয়েছিল। সে সময় সড়কটির নাম ছিল মগনামা বাজার সড়ক। ৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে মগনামা বাজারে পতন ঘটে। সে সময় থেকে সড়কটি অকার্যকর হচ্ছিল। ১৯৯২ সালে এ সড়ক সংষ্কার হয়।
প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে গ্রামীণ অবকাঠামো বিনষ্ট হয়েছিল। সে সময় উপদ্রুত এলাকায় যাতায়াত ও ত্রাণতৎপরতা জোরদার করতে সড়কটি উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়। জলোচ্ছাসের এক বছর পর সড়কটির নামকরন হয়েছে হাই স্কুল সড়ক।
সে সময় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি ওই সড়কটি উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। তারা বাইন্নাঘোনা থেকে মুহুরীপাড়া হয়ে মগনামা ইউনিয়নের চেপ্টাখালী নাশি পর্যন্ত সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন করে। বাইন্নাঘোনা সড়ক ও জনপথ রাস্তার মাথা থেকে আধা কিলোমিটার নুরুল আলমের বাড়ি পর্যন্ত ব্রীক সলিং দ্বারা উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে।
অপরদিকে চেপ্টাখালী নাশি থেকে সাতঘর পাড়া মগনামা হাই স্কুল হয়ে মুহুরীপাড়ার পূর্বাংশ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ব্রীক সলিং দ্বারা উন্নয়ন করে। বাইন্নাঘোনার পশ্চিম অংশ ও মুহুরীপাড়ার পূর্ব অংশ ব্যাঙওয়াল ঘোনা চিংড়ি ঘের পয়েন্টে সড়কে মাটি ভরাট করা হয়েছিল।
সে সময় ইট বিছানো হয়নি এ পয়েন্টে। মগনামা হাই স্কুল সড়কটি উন্নয়ন সময় থেকে এ পর্যন্ত আর কোন ধরনের সংষ্কার কিংবা উন্নয়ন হয়নি। প্রায় আড়াই যুগ সময় অতিবাহিত হচ্ছে। তবে সড়কটির নেই কোন উন্নয়ন। স্থানীয়রা জানায়, বর্তমানে এ সড়কে যাতায়াত ব্যবস্থা থেমে গেছে। মুহুরীপাড়া বাজার থেকে ব্যাঙওয়াল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারে বেহাল দশা হয়েছে। ইট নেই সড়কটিতে।
অধিকাংশ স্থানে বড় বড় গর্ত হয়েছে। পরিনত হয়েছে কাঁচা সড়কে। বাইন্নাঘোনা পয়েন্টেও ইট নেই। ব্যাঙওয়াল ঘোনার জলসীমায় সড়কটি প্রায় বিলুপ্ত। মাটি নেই এ সড়কে। কিছু অসাধূ লবণ মাঠের মালিক ও চিংড়ি চাষীরা এ সড়ক কেটে মাটিতে একাকার করে। জমিতে মিশে দিয়েছে সড়কটির প্রায় ২ কিলোমিটার।
চিংড়ি চাষী বর্ষার সময় রিংবাঁধ দিয়ে হাই স্কুল সড়কটির আংশিক নমুনা আছে। মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানায়, এ সড়ক ইউনিয়নের অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম ছিল। এক সময় উজানটিয়া করিমদাদ মিয়ার জেটিঘাটের যাতায়াত ছিল এ সড়ক। কেনাকাটা করতে মগনামা বাজার ছিল অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। সে সুবাধে এ সড়ক এ অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান প্রাণ ভ্রমরা ছিল।
এখন মৃতপ্রায় সড়কটি। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কাজের কাজ কিছু হয়না হাই স্কুল সড়কে। মুহুরীপাড়া গ্রামে শত শত মানুষ আ’লীগ করে। এ গ্রামকে মুজিবের টুঙ্গীপাড়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখনও শতকরা ৯৮% মানুষ আ’লীগ করে।
নির্বাচনী পরিসংখ্যানে বার বার প্রতিফলিত হচ্ছে এ গ্রামের মানুষ নৌকা প্রতীকে রায় প্রদান করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থীকে একক রায় দেয় এ গ্রামে। জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের অন্ধ সমর্থক এ গ্রামের ভোটাররা।
গত ইউপি নির্বাচনে মুহুরীপাড়া ভোট কেন্দ্রে ১১শ ভোটারের মধ্যে ৯৭৭ ভোট পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এ ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থীর বিপর্যয় হলেও গ্রামের মানুষ এ চেতনায় বিশ^াসী। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে বিপরীত শক্তি থেকে। তারা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করছে এ সড়ক।
শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মামুন, রিফাত, সোমাইয়া সোলতানা লিলিসহ মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বর্ষার সময় পায়ে হেঁেটও যাওয়া যায় না। আমরা এ সড়ক নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছি।
লবণ ব্যবসায়ী ছরওয়ার, মনিরুল করিম, মো: ইউনুছ জানায়, কোন ধরনের উন্নয়ন নেই এ সড়কে। আমরা লবণ পরিবহন করছি এ সড়ক দিয়ে। খানা খন্দকে সময় সময় ইট ও বালি দিয়ে সংস্কার করি। জনপ্রতিনিধিরা এ সড়কে একটি টাকাও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয় না।
সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি খাইরুল এনাম জানায়, সারা দেশ শাসন করছে আ’লীগ। তবে এ মগনামার শাসকরা বিএনপি জামায়াতের। তারা এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত কারীদের বাঁকা চোখে দেখেন। তারা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করছে সড়কটি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি থেকে নির্বাচিত। তারা আ’লীগের রাস্তা কিভাবে উন্নয়ন করবে। আমি চেয়ারম্যান থাকা সময় কিছু কাজ করেছিলাম। এখন কাজ নেই। দুরে থেকে গেছে সড়কটির উন্নয়ন কাজ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি) এর উপসহকারী প্রকৌশলী হারু কুমার জানায়, একবার উর্ধতন অফিসে বরাদ্ধের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। বরাদ্ধ না পাওয়ায় কাজ বাস্তবায়ন করা যায়নি।
Posted ১০:৫৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta