নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৪ ডিসেম্বর) :: পেকুয়ায় টাকা কমিউনিটি নিউট্রেশন ওয়ার্কার (সিএনডব্লিউ) পদে নিয়োগ নিয়ে টাকার ছড়াছড়ির খবর পাওয়া গেছে। মোটাংকের অর্থ বাণিজ্যে নিয়োগ পেয়েছে জামায়াত-বিএনপি পন্থীরা। কমিউনিটি নিউট্রেশন ওয়ার্কার সিএনডব্লিউ পদে নিয়োগ নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনবল নিয়োগ হয়েছে। হয়নি নিয়োগ কমিটি। এ ছাড়া জনবল নিয়োগে সরকারী নীতিমালাও মানা হয়নি। গোপনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করানোর জন্য পুষ্টিকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগ হয়েছে অনেকটা গোপন ও আত্মীয়করনের ভিত্তিতে।
সুত্র জানায়, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ পেকুয়ায় ২৮ জন কমিউনিটি নিউষ্ট্রেশন ওয়ার্কার সিএনএন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। কমিউনিটি ভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে এ সব জনবল নিয়োগ করন করা হয়েছে। মা ও শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি সহায়তা করতে এ সব কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে পুষ্টি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হবেন। কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসির) আওতাধীন ক্যাচমেন এরিয়ায় কাজ করতে পুষ্টিকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
সুত্র জানায়, পেকুয়া উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়নে কমিউনিটি নিউট্রেশন ওয়ার্কার সিএনডব্লিউ নিয়োগ চুড়ান্ত হয়েছে। পেকুয়ায় ১৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। এ সব ক্লিনিকের জন্য ২৮ জন সিএনডব্লিউ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সুত্র জানায়, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য দু’জন করে কমিউনিটি নিউট্রেশন ওয়ার্কার নিয়োগ পেয়েছে। কমিউনিটি বেইজড নিউট্রেশন প্রোগ্রাম (সিবিএমপি) মাঠ পর্যায়ে পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে এ সব কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ এ সব জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। দাতা সংস্থা ইউনিসেফ ওই কার্যক্রমে অর্থের যোগান দিচ্ছেন।
সুত্র জানায়, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত ও এর বিকাশ ঘটাতে ইউনিসেফ এ কাজে অর্থ ব্যয় করছেন। কমিউনিটি নিউট্রেশন ওয়ার্কার সিসির আওতাভূক্ত এলাকায় কাজ করবে। কয়েকটি ধাপে এ সব পুষ্টি কর্মীরা স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য বার্তা জনগনের উপর পৌছিয়ে দেবে।
সুত্র জানায়, চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর নিয়োগ সংক্রান্ত পত্র জারি করা হয়েছে। সিভিল সার্জন কক্সবাজারের কার্যালয় থেকে সিএনডব্লিউ পদে নিয়োগ প্রাপ্তদের অনুকুলে পত্র পৌছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: মো: আবদুল মতিন স্বাক্ষরিত এ সব নিয়োগপত্র পুষ্টিকর্মীদের অনুকুলে প্রেরিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, কমিউনিটি নিউট্রেশন ওয়ার্কার নিয়োগে অর্থের লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় পুষ্টিকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একটি দালাল চক্র টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক বলয়ের সন্তানদের ওই পদে নিয়োগ পেয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সন্তানদের ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ভিন্ন ভোটারও নন। এমন বহিরাগত লোকজনকে এক ইউনিয়ন থেকে অপর ইউনিয়নে চাকরী দিয়েছে।
সুত্র জানায়, ২৮ জন পুষ্টিকর্মী নিয়োগের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ২৫ টি পদ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওই ২৫ জন পুষ্টিকর্মী বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ পদবীর নেতাদের সন্তান। রাজাখালী ইউনিয়নে দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। পালাকাটা ও মাতবরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মাতবরপাড়া সিসিতে নিয়োগ পেয়েছেন হুমায়রা আক্তার ও তসলিমা বেগম নামক দু’জন।
এ দু’জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক ঘরানার বলে স্থানীয়রা জানায়। পালাকাটা সিসিতেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে দু’জনকে পুষ্টিকর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
মাতবরপাড়া সিসির সভাপতি ইউপি সদস্য ওসমান গণি জানায়, এ নিয়োগ আমরা মেনে নিতে পারি না। টাকার বিনিময়ে গোপনে পুষ্টিকর্মী নিয়োগ দিয়েছে। আমি কিছুই জানিনা। কেন এ সব হয়েছে এর রহস্য বের করা প্রয়োজন।
ওই কেন্দ্রের সিএইচসিপি রুবি আক্তার বিউটি জানায়, আসলে তারা আমাদেরকে সহায়তা করবে। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে এ সব আমিও জানিনা। মগনামা ইউনিয়নের সাতঘরপাড়া ও উত্তর মগনামা ফুলতলা ষ্টেশনসহ দুটি সিসিতেও পুষ্টিকর্মী নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফুলতলা সিসিতে পুষ্টিকর্মী নিয়োগ পেয়েছেন। সিরাজুম মুনিরা পপি ও ফিরোজা জন্নাত নামক দুই মহিলা। এদের মধ্যে সিরাজুম মনিরা পপির বাড়ি শরতঘোনায়। ওই মহিলার পিতা এস,এম জাকের হোসাইন, মগনামা ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক।
সিরাজুম মুনিরা জামায়াতের সংগঠন ছাত্রী সংস্থায় জড়িত বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। তার চাচা সিএইচসিপি শাহাদাত হোছাইনের মাধ্যমে ভাতিজীকে চাকুরী দেয়। সাতঘরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকেও নিয়োগ প্রাপ্ত ২ জন বিএনপি-জামায়াতের মতাদর্শী বলে জানা গেছে। টইটং ইউনিয়নে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। গুদিকাটা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক দেখা দেয়।
ওই কেন্দ্রের সিএইচসিপি সেলিনা জানায়, আমি কিছুই জানিনা। আমাদেরকে জানানো হয়নি। আশরাফুন্নেছা ও হামিদা বেগম নামে ২ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এরা পুরাদিয়া থেকে এখানে নিয়োগ পায়। একই পরিবারের পুত্রবধূ ও ননদকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছে।
সিসির সভাপতি মনজুর মেম্বার ও সহসভাপতি সাবেক মেম্বার বিডিআর আবুল কালাম জানায়, জায়গা আমরা দিয়েছি ক্লিনিকের জন্য। কমিটিতেও আছি। তারা কিভাবে গোপনে নিয়োগ দেয় এ টা বুঝার শক্তি নেই। আমরা এ নিয়োগ বাতিল চাই। শিলখালীর জারুলবুনিয়া জনতা বাজার সিসিতেও আত্মীয়করন ও দলীয়করণ করা হয়েছে পুষ্টিকর্মী নিয়োগে। এ ইউনিয়নে দুটি কেন্দ্রে নিয়োগ প্রাপ্ত ৪ জনই কট্টর জামায়াত বিএনপির সন্তান।
স্থানীয়রা জানায়, পেকুয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের নেজাম ও মকছুদ নামক কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে এদেরকে নিয়োগ দিয়েছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নে তেলিয়াকাটা কেন্দ্রে নিয়োগ পেয়েছেন রাজাখালীর বাসিন্দা। ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক রমিজ মাষ্টারের মেয়েকে ওই সিসিতে পুষ্টিকর্মী নিয়োগ দেয়।
স্থানীয়রা জাানয়, মোটাংকের টাকা নিয়ে ভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারকে ওই কেন্দ্রে নিয়োগ দেয়। উজানটিয়া ইউনিয়নের গোদারপাড়া ও ফকিরপাড়া সিসিতে ৪ জন নিয়োগ পেয়েছে। গোদারপাড়া কেন্দ্রে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ কেন্দ্রে যে ২ জন নিয়োগ পেয়েছেন তারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান বলে জানায়। ফকিরপাড়ায় একজন বিএনপি পরিবারের সন্তান অন্যজন আ’লীগ পরিবারের সন্তান।
ওই কেন্দ্রের সভাপতি জিয়াবুল মেম্বার জানায়, আমরা আগে থেকে জনবল নিয়োগের এ বার্তা মানুষের কাছে পৌছিয়েছি। কেউ চাকুরী নিতে যায়নি। যে ২ জন গিয়েছেন এদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানায়, এ নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি। নিয়োগ টাকা ও অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছে।
বারাইয়াকাটা সিসির রিনা বিলকিস ও শাহীন আক্তার নামক দু’পুষ্টিকর্মী জানায়, আমাদেরকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয়নি। টিএইচ স্যার তার অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। টাকা দিতে হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে এ ২ জন বিভ্রত হন। তারা বলেছেন, আমরা টাকা দেয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিলখালী ইউনিয়নের নিয়োগ প্রাপ্ত নিউট্রেশন ওয়ার্কার জানায়, আমরা টাকা দিয়েছি। কাউকে না জানাতে বলেছেন। বলা হয়েছে এ চাকুরী পরবর্তীতে সরকারীকরণ হবে। তাই আমরা টাকা দিয়ে চাকুরী নিয়েছি। বর্তমানে চাকুরীর বেতন পাচ্ছি ৭ হাজার ৫শ টাকা। চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর আমরা চাকুরীতে যোগদান করেছি।
এ বিষয়ে পেকুয়ার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা: ছাবের আহমদ জানায়, আসলে এমন একটি অভিযোগ সিভিল সার্জন মহোদয়কে পেকুয়ার মিডিয়াকর্মীরা দিয়েছেন। তিনি আমলে নিয়েছেন। আস্বস্থ করেছেন কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তিনি এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: আবদুল মতিন জানায়, ইউনিসেফের অর্থায়নে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাত্র তিন মাসের জন্য এদেরকে আমি নিয়োগ দিয়েছি। সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
Posted ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta