নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১৮ নভেম্বর) :: পেকুয়ায় অবশেষে বিয়ের শর্তে মূলতবি হল প্রেমিক জুটির নিষ্পত্তি বৈঠক। বিয়ের দাবীতে কীটনাশকসহ প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছিলেন প্রেমিকা। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশসহ প্রেমিকাকে উদ্ধার করে। উপযুক্ত নিস্পত্তিসহ মেয়েটির যৌক্তিক বিষয়ে ফায়সালার প্রতিশ্রুতিতে রাতে তাকে পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরদিন (রবিবার) ১৮ নভেম্বর বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের আন্নরআলী পাড়া ইসলামিক সেন্টার জামে মসজিদের ২য় তলায় বৈঠক হয়েছে।
বৈঠকে মেয়েটিসহ তার অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ওই বৈঠকে প্রেমিক ওই যুবক ছিলেন অনুপস্থিত। তবে তার পিতাসহ সালিশি প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন। বারবাকিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এ,এইচ,এম বদিউল আলম এ বৈঠকের প্রধান সালিশকার।
তিনি ছাড়াও দু’পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন টইটং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, বারবাকিয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আনিসুল করিম, ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি (সংরক্ষিত) নারী ইউপি সদস্যার স্বামী আবুল হোসাইন শামা, ইউপি সদস্য ছরওয়ার আলম, সাহাব উদ্দিন মেম্বার ও আ’লীগ নেতা নুরুল ইসলামসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
মসজিদের দ্বিতীয় তলায় প্রেমিকার বিয়ের দাবীতে অনশন সংক্রান্ত বিষয়ে দু’পক্ষকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মেয়েটি ও ছেলের মধ্যে গভীর মন দেয়া নেয়াসহ প্রেমের সম্পর্কের যথেষ্ট তথ্য প্রমানাদি উপস্থাপন করা হয়েছে।
মেয়েটি বিচারকদের জানায়, তারা প্রায় আড়াই বছর ধরে সম্পর্ক করছিলেন। পরষ্পর পরষ্পরকে ভালবাস ছিলেন। গভীর সম্পর্ককে বাস্তবে রুপ দিতে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলে প্রবাসে থাকতেন। মেয়ের সাথে প্রায় সময় মুঠোফোনে যোগাযোগ রক্ষা ছিল। বিদেশ থেকে বিভিন্ন দ্রব্যাদি পাঠানো হয়েছিল।
দামী একটি মুঠোফোন সেট প্রেমিক তাকে উপহার দেয়। সম্প্রতি নুরুল আবছার নামের ওই যুবক দেশে আসে। বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে তারা ভ্রমনে যায়। সেখানে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে কটেজে দু-রাত্রিযাপন করে।
কক্সবাজারও ভ্রমনে যায়। সেখানেও পৃথক সময়ে রাত্রিযাপন করে প্রেমিক জুটি। ১৭ নভেম্বর মুঠোফোনে প্রেমিক জুটির আলাপ হয়। প্রেমিক নুরুল আবছার প্রেমিকা ডেজিকে তার বাড়িতে চলে আসতে বলছিলেন।
এর সুত্র ধরে মেয়েটি ওই দিন রাত ৯ টার দিকে আন্নরআলী পাড়া নুরুল আবছারের বাড়িতে যায়। এ সময় তাকে টানা হেচড়া করে বের করে দেয়। মেয়েটি কীটনাশকসহ বিয়ের দাবীতে অনশন করছিলেন। পেকুয়া থানা পুলিশ ও ইউপির গ্রাম পুলিশসহ ইউপি সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা সেখানে যায়।
ইউপির চেয়ারম্যান এ,এইচ,এম বদিউল আলমও নুরুল আবছারের বাড়িতে পৌছে। এ সময় বিনা শর্তে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েটিকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। রবিবার বৈঠক হয়েছে। প্রধান সালিশকার চেয়ারম্যান এ,এইচ,এম বদিউল আলম বৈঠকে তার মতামত পেশ করেন।
এ সময় তিনি জানান, এর সঠিক সমাধান হচ্ছে মেয়েটির বিবাহ কার্য নিষ্পত্তি করা। নারীর প্রতি মানুষের মর্যাদা থাকতে হবে। এ দিকে মেয়ে পক্ষ জানায়, বিচার নিয়ে সন্দিহান তৈরী হয়েছে। ছেলে বিত্তশালী ও টাকাওয়ালা।
ইউপির এক নারী সদস্যের স্বামী ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়নের শীর্ষ পদবী ব্যক্তিত্ব বিচার কার্যে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। মেয়েটির পিতা দরিদ্র। তার কোন অর্থ বিত্ত নেই। এতে করে ওই প্রভাবশালীরা ছেলের পক্ষে একাট্রা হয়েছে। সে দিন বৈঠকে মেয়েটিকে ধমকি দেয়া হয়েছে। তাকে বিচার থেকে নিরুৎসাহিত করার প্রচেষ্টা চলছে।
এ ব্যক্তি মেয়েকে ধমকি দিয়ে বের করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। সালিশি প্রতিনিধি বারবাকিয়া ইউপির ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য ছরওয়ার জানায়, মেয়ের ইজ্জত ও সম্ভ্রম নিয়ে তামাশা করার প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। আমরা ওই ব্যক্তির এহেন আচরনে মর্মাহত হয়েছি। এটি দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা নুরুল ইসলাম জানায়, আমাদের দলের এ নেতা জামায়াতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মেয়ের পিতা অসহায়।
তাছাড়া তিনি আ’লীগ করেন। আর ছেলে ও ছেলের পরিবার জামায়াত করে। তারা ধনবান। এ নেতা ধনের পক্ষে বাড়াবাড়ি করছে। টইটং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ জানায়, বিয়ে ছাড়া আর কোন উপায় আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ছেলেকে উপস্থিত করানো হয়নি।
বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ,এইচ,এম বদিউল আলম জানায়, বিবাহের দিকে যেতে হবে। মেয়েটি ক্ষতিগ্রস্ত। আমার স্পষ্ট জবাব হচ্ছে মেয়ের পূর্নতা ফিরিয়ে আনতে হলে তাকে সম্পর্কের মুল্যায়ন বিয়ের মাধ্যমে নিস্পত্তি করতে হবে। ছেলে গরহাজির ছিল। মঙ্গলবার সকালে পুনরায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক মুলতবি করা হয়েছি।
Posted ৩:১০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta