নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১২ এপ্রিল) :: পেকুয়ায় গোপনে গঠিত হয়েছে মাদ্রাসা কমিটি। মোটাংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গোপনে অনুমোদন দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উজানটিয়া এ,এস সিনিয়র মাদ্রাসায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
অধ্যক্ষ, পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারন করে। একই পরিবার থেকে পরিচালনা কমিটিতে ৫ জনকে ক্যাটাগরীতে সদস্য অন্তর্ভূক্ত করে।
এমনকি ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কমিটির সকল অনুগত সদস্য গোপনে এস,এম,সি কমিটি গঠনে তৎপর হন। এ দিকে গোপনে কমিটি গঠন নিয়ে উজানটিয়া এ,এস সিনিয়র মাদ্রাসায় দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারন করে। সরকারের নীতিমালা লংঘন করে অধ্যক্ষ এ কমিটি অনুমোদন নেয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ¯œায়ু বিরোধ দেখা দেয়।
চলতি বছরের ২০ মার্চ পরিচালনা কমিটির অনুমোদন দেয়। ওই দিন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফম হাসান স্বাক্ষরিত এ কমিটি গঠিত হয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকারের অনুসৃত নীতিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে। অনেকটা নির্জীব ও নিষ্ক্রিয়তাসহ গোপনে এ কমিটি গঠিত হয়। পদাধিকারে শিক্ষা কর্মকর্তা নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। তিনি একক ক্ষমতা বলে নির্বাচন গোপনে সম্পন্ন করে। ওই দিন তার কার্যালয়ে স্বল্প সংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তারাই পরিচালনা কমিটির সভাপতি সহ ক্যাটাগরীতে নির্বাচিত হন।
এ দিকে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন অনুষ্টিত না হওয়ায় এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সচেতন মহল। বিধি মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্টিত হয়ে থাকে প্রতিষ্টান কেন্দ্রিক। তবে উজানটিয়া এ,এস মাদ্রাসায় এ ভোট অনুষ্টিত হয়নি। শিক্ষা কর্মকর্তা আফম হাসান দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করে তার দপ্তরে বসে।
আবদুল মান্নানসহ আরও একাধিক শিক্ষক জানায়, এ নির্বাচন বিধি মতে হয়নি। বিধিতে উল্লেখ আছে পরিচালনা কমিটি যে সব শর্তাবলী আরোপ আছে এ গুলো উপেক্ষিত। বিশেষ করে তফশীল প্রকাশ করা হয়নি। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হয়নি। যারা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছিল তারা অবগত ছিলেন না।
অধ্যক্ষ নোটিশ দেননি নির্বাচন সম্পর্কে। এমনকি বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারাও অবৈধ। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় ভোটাধিকারে। সেটিও গোপনে হয়েছে। অভিভাবক প্রতিনিধিসহ নির্বাচনের আগে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে একটি স্বচ্ছ ক্যাবিনেট প্রতিষ্টিত হয়। কিন্তু এ মাদ্রাসায় এ সব কিছুই হয়নি।
অধ্যক্ষ নুরুল হক মকছুদী একজন দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ ব্যক্তি। মাদ্রাসায় মুল সমস্যার কারন হচ্ছেন তিনি। একটি পকেট কমিটি হয়েছে। এ কমিটি শিক্ষা বিস্তারে কোন ধরনের ভূমিকা রাখার প্রশ্ন অবান্তর। এ দিকে গোপনে কমিটি গঠিত হয়েছে।
এ খবর উজানটিয়ায় জানাজানি হলে সর্বত্রে তোলপাড় দেখা দেয়। মালেকপাড়া, মধ্যম উজানটিয়াসহ পূর্ব উজানটিয়ায় এ নিয়ে টালমাটাল অবস্থা দেখা দেয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল এ পকেট কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
তারা জানায়, এ ধরনের অগনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার বিকাশমান ধারাকে অকার্যকর করবে। অধ:পতন দেখা দেবে শিক্ষা প্রতিষ্টানটিতে। নুরুল হক মকছুদী একজন বর্বর দুর্নীতিবাজ। পড়ালেখা কি হচ্ছে সে সম্পর্কে তার নৈতিক ধারনা ও দায়বদ্ধতা নেই। কেরানী আরিফ আহমদ এ মাদ্রাসার প্রধান কর্তা। সবকিছু তার আদেশ ও হুকুমে হয়ে থাকে। অধ্যক্ষ একজন পুতুল। প্রশাসনিক দক্ষতা তার মাঝে নেই। এখন প্রশ্ন চলছে এ মাদ্রাসার প্রশাসনিক ব্যক্তি কে? আসলে আরিফ আহমদ নাকি নুরুল হক মকছুদী এ মাদ্রাসার প্রধান এ নিয়ে দোদুল্যমান প্রশ্ন সবার মাঝে।
এ দিকে গঠিত এস,এমসি কমিটি বাতিল দাবীতে উজানটিয়ায় আন্দোলন কর্মসুচীর দিকে এগুচ্ছে এ মাদ্রাসার অভিভাবকসহ সচেতন মহল।
তারা জানায়, অধ্যক্ষ মকছুদী ও আরিফ আহমদের অনুগত এ পকেট কমিটি মাদ্রাসায় মেনে নেওয়া যায় না। তারা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিপুল অর্থ দিয়েছেন। এ কমিটি টাকা নিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সুত্র জানায়, একই পরিবারের ৯ জন সদস্য বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে স্থান দেয়ায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালে আদালতে মামলা রুজু করা হয়। কক্সবাজারের যুগ্ম জজ আদালতে এ মামলা বিচারাধীন। যার নং ১৭৮। পরিচালনা কমিটি গঠনসহ এ সম্পর্কিত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে আদালতের নির্দেশনা আছে। এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পেকুয়া ও অধ্যক্ষ উজানটিয়া সিনিয়র মাদ্রাসাকে অনুলিপি প্রেরন করা হয়। মাদ্রাসার নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়টি এখনও আদালতে অমিমাংসিত। তবে বিচারাধীন মামলা চলমান সময় অনেকটা গোপনে ওই দিন এ মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
সুশীল সমাজ জানায়, তারা বিচারিক ব্যবস্থা ও আদালতকে পর্যন্ত গুরুত্ব দেয়নি। মাদ্রাসায় কমিটি নিয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা এ কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরীর সম্ভাবনা দেখা দেয় এ মাদ্রাসায়।
সুশীল সমাজের পক্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ ধরনের গোপন কমিটি গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এর উপযুক্ত সমাধান নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন।
১২ এপ্রিল বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান এম,শহিদুল ইসলাম শিক্ষা কর্মকর্তা আফম হাসানের কার্যালয়ে গিয়ে তার সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সৃষ্ট বিরোধ নিরসন সহ গোপনে গঠিত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করতে অনুরোধ জানানো হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল হক মকছুদীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফম হাসান জানায়, ভোট হয়নি। আমার দপ্তরে কমিটি হয়েছে। আসলে আমি তাদেরকে বিশ^াস করেছি। তারা আমাকে তাহলে ভূল বুঝিয়ে কমিটি অনুমোদন নেয়। আমি বিষয়টি সেভাবে ধরে নিয়েছি। মাদ্রাসায় আসলে আমি যায়নি সেটি সত্য।
Posted ৮:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta