নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(২৫ ডিসেম্বর) :: পেকুয়ায় ব্যাপক সংঘর্র্ষ হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দু’রাজনৈতিক দল অনুসারী ও দু’প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে পৃথক স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিএনপির প্রার্থী এড.হাসিনা আহমদের সমর্থনে মিছিল থেকে বিএনপি ও তাদের মিত্র জামায়াত শিবিরের কর্মীরা ব্যাপক তান্ডবসহ হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ক্ষমতাসীনদলের ৪ জন আহত হয়েছে।
পেকুয়া থানা পুলিশ পৃথক স্থান থেকে বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতিসহ ৫ জনকে আটক করে। সৃষ্ট ঘটনার জের ধরে পেকুয়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। যে কোন ধরনের সংঘাত নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ টহল জোরদার করে। বিজিবি ও সেনা সদস্যরাও সড়কে টহল জোরদার করে।
২৫ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিকাল ৪ টার দিকে উপজেলার উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নের পৃথক তিনটি স্থানে সংঘর্ষ ও ২৪ ডিসেম্বর সোমবার গভীর রাতে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়েেনর সওদাগর হাটে আগুন দিয়ে আ’’লীগের নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে দেয়ার এ ঘটনা ঘটে।
আহত ছাত্রলীগ নেতার নাম সাইদুর রহমান কাফি(১৬)। তিনি ্উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ্উজানটিয়া নুরীরপাড়ার মৃত রুকন উদ্দিনের ছেলে ও পুর্ব উজানটিয়া ্উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনণীর ছাত্র।
অপর ২ আহতের নাম পাওয়া যায়নি। তবে উজানটিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ থেকে জানানো হয়েছে ্এ ঘটনায় ছাত্রলীগের এ নেতাসহ দলটির ৩ জন আহত হয়েছে।
পৃথক ঘটনায় ওই দিন একই সময়ে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নেও ক্ষমতাসীনদলের ১ জন কর্মী জখম হয়েছে। কাজী বাজারে সংঘর্ষ হয়েছে।
এ সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ছুড়া আংটার আঘাতে ক্ষমতাসীনদলের এক কর্মী আহত হন। তার নামও জানা যায়নি। এ সময় পেকুয়া থানা পুলিশ মগনামা ইউনিয়নের ফুুলতলা নামক ষ্টেশন থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফায়সাল চৌংকে আটক করে।
পেকুয়া থানা পুলিশ ওই দিন বিকেল ৫ টার দিকে উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন সুতাচোরা থেকে ওই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকদল সাধারন সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সহ ৪ জনকে আটক করে। ওই দিন তারা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট হাসিনা আহমদের সমর্থনে মিছিল নিয়ে সড়ক প্রদক্ষিন করে।
মালেকপাড়া থেকে মিছিল সড়ক প্রদক্ষিন হয়। এ সময় বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম এমজারুলের নেতৃত্বে মিছিলটি পূর্ব উজানটিয়া নুরীরপাড়া হয়ে গোদারপাড়া ষ্টেশনে পৌছে। ওই স্থানে এসে তারা ব্যাপক তান্ডব চালায়। এক পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদলের প্রার্থী জাফর আলমের নির্বাচনী কার্যালয়ে তারা ভাংচুর চালায়।
এ সময় নৌকার কর্মী সমর্থকরা এদের প্রতিরোধ করতে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় মিছিল থেকে আংটা দিয়ে মার্বেল ছুড়ে মিছিলকারীরা। ছুড়া আংটার আঘাতে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাফির বা’চোখে মারাত্মক জখম হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ক্ষমতাসীনদলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়। এর প্রতিবাদে দক্ষিনসুতাচোরা গোদারপাড়া নুরীরপাড়া থেকে অন্তত ২ থেকে ৩ হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে মিছিলকারীদের ধাওয়া দেয়।
এ সময় চারদিকে এদের ঘিরে ফেলে। হাসিনা আহমদের সমর্থনে মিছিল নিয়ে আসা লোকজন দ্রুত সটকে পড়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন দক্ষিন সুতাচোরায় আক্তারের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। উত্তেজিত লোকজন এদের ঘিরে ফেলে। পরে তারা আটকিয়ে সালাহ উদ্দিনসহ এ ৪ জনকে পুলিশে দেয়।
পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান সহ পুলিশ ফোর্স ওই স্থানে পৌছে। এ দিকে পৃথক ঘটনায় উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাজী বাজারে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ওই দিন বিকেলে হাসিনা আহমদের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুর নেতৃত্বে মিছিলটি প্রথম দফায় কাজী বাজার চক্কর দেয়।
এ সময় মিছিলে স্বল্প সংখ্যক লোকজন ছিল। প্রথম দফায় শান্তিপূর্ণ বিএনপির মিছিল সড়ক প্রদক্ষিন হয়েছে। এর কিছুক্ষনের মধ্যে নাপিতারদিয়ার রাস্তার মাথায় লেড়াইয়ার দোকান নামক স্থানে ওই মিছিলটি আরও অধিক সম্প্রসারিত হয়।
এ সময় লাঠিসোটাসহ তারা দ্বিতীয় দফায় কাজী বাজারে ফের মিছিল নিয়ে পৌছে। এসময় কাজী বাজারে আ’লীগের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। স্বল্প সংখ্যক আ’লীগ কর্মীরা জড়ো হয়ে প্রতিহতের চেষ্টা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিছিল থেকে ৪ রাউন্ড গুলি ছুড়ানো হয়েছে। এ সময় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় ক্ষমতাসীনদলের একজন কর্মী আহত হয়েছে দলটির সুত্র দাবী করে। খবর পেয়ে মগনামার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আ’লীগের কর্মী সমর্থকরা কাজী বাজারে জড়ো হয়।
এ সময় ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল এনামের নেতৃত্বে একটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল কাজী বাজারসহ দক্ষিন মগনামায় প্রদক্ষিন করে ওই দিন সন্ধ্যার দিকে। উত্তর মগনামা ফুলতলায় বিএনপির মিছিল নিয়ে সড়ক প্রদক্ষিন করে।
এ সময় আ’লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ ওই স্থান থেকে বিএনপি ইউনিয়ন সভাপতি ফায়সাল চৌধুরীকে আটক করে।
অপরদিকে এর আগের দিন সোমবার গভীর রাতে বারবাকিয়ায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ সংঘটিত হয়েছে। মুখোশ পরিহিত দুষ্কৃতিকারীরা রাতে সওদাগর হাটের জাফর আলমের নির্বাচনী অফিসটি পুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় সড়কে টাঙ্গানো একটি গাছের নৌকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই অফিসের চেয়ার ও আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়েছে।
এর প্রতিবাদে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ বারবাকিয়া বাজারে এক প্রতিবাদ সভা আহবান করে। ইউনিয়ন আ’লীগের উদ্যোগে বিকেলে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা ও ইউনিয়ন আ’লীগের নেতৃবৃন্দ। বিকেলে একটি প্রতিবাদ মিছিল সড়ক প্রদক্ষিন করে।
মিছিলের নেতৃত্ব দেয় শিলখালী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী। এ সময় বক্তব্য দেন জেলা আ’লীগ নেতা এড. কামাল হোসেন, এস,এম গিয়াস উদ্দিন, জিএম কাসেম, মোহাম্মদ হোসাইন বিএ, শিক্ষাবিদ ফজলুল কাদের, যুবলীগ নেতা এড.ওসমান গণি ও ছাত্রলীগ নেতা সালাহ উদ্দিন মাহামুদ প্রমুখ।
Posted ১০:২৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta