নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(২১ নভেম্বর) :: পেকুয়ায় এবার সংবাদকর্মীকে ফাঁসাতে কুঁড়েঘরে আগুন দিয়েছে একটি চক্র। গভীর রাতে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। এ সময় কুড়েঁঘরটির আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে আগুনের সুত্রপাত নিয়ে নানা রহস্য ও নাটকীয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা তাৎক্ষনিক এ সম্পর্কে মতামত করতে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের এ ঘটনা চক্রান্ত ও প্রহসন বলে এটি জামায়াত নেতা মৌলভী আহমদ কবিরের সাজানো চক্রান্ত বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে। মুহুরীপাড়াসহ মগনামার মানুষ এ ঘটনায় বিচলিত হয়েছে।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে এর পিছুনে কারা দায়ী সেটি উৎঘাটন করতে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ভস্মীভূত কুঁড়েঘরটির মালিক মুহুরীপাড়া এলাকার মৃত রশিদ আহমদের ছেলে মৌলভী আহমদ কবিরের।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মগনামা মৌজার বিএস ১৯৪ খতিয়ানে প্রায় ১০ শতক বসতবাড়ির জায়গা নিয়ে মুহুরীপাড়া এলাকার রশিদ আহমদের এর সাথে একই এলাকার মুহাম্মদ হাসেম গংদের বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রশিদ আহমদ জায়গার খরিদা স্বত্তের মালিক হিসেবে উপযুক্ত প্রমাণাদি দেখাতে ব্যর্থ হন।
এ সময় মুহাম্মদ হাসেম গং জায়গার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হন। ২ দিন পর রশিদ আহমদের পক্ষে স্থানীয় জামায়াত নেতা মৌলভী আহমদ কবির পরিষদে বিচার দেন। দুই বৈঠকে রশিদ ও আহমদ কবির একই জায়গা নিয়ে পৃথক বাদী হন।
সুত্র জানায়, বসতবাড়ির এ জায়গা নিয়ে বিগত ৩০ বছর পূর্বে আবদুল মাবুদকে হয়রানি করা হয়। সে সময় জায়গার মালিক আবদুল মাবুদকে নিষ্টুরভাবে একাধিকবার আঘাত করা হয়। এ পরিবারটিকে উচ্ছেদ করতে একাধিকবার বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। তাদের পরিবারে স্ত্রী ও মেয়েকেও পেশীশক্তির জোরে মারাত্মক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। যা মুহুরীপাড়ার লোকজন বর্তমানেও প্রত্যক্ষদর্শী।
সম্প্রতি মৌলভী আহমদ কবির তার ভাতিজা সাবেক ছাত্রশিবিরের ক্যাডার ও বর্তমান জামায়াতের মগনামার শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছমুদুল হুদাসহ একটি চক্র ওই পরিবারটিকে ফের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে পায়তারা চালায়।
আহমদ কবির ওই খতিয়ানের একটি অংশ থেকে পৃথক জায়গা খরিদ করেন। অপরদিকে রশিদ কোম্পানী আবদুল মাবুদের জায়গা খরিদ করেছেন মর্মে জাল দলিল তৈরী করেন। আহমদ কবির একই খতিয়ানের উমেদা খাতুনের জমি ক্রয় করে সেখানে দখলে আছে। কিন্তু আবদুল মাবুদের অংশ তিনি ক্রয় করেননি।
জায়গার মুল বিরোধ মৃত আবদুল মাবুদের ওয়ারিশদের সাথে রশিদ কোম্পানীর। তবে রশিদের পক্ষে ওই মৌলভী আহমদ কবির অহেতুক হয়রানি করছে। গত কয়েকদিন আগে জায়গা দখলে নিতে আহমদ কবির ভাড়াটে লোকজন জড়ো করে। স্থানীয়রা জায়গাটি পাহারা দিয়েছিলেন রাতে। তারা খটিয়ে যেতে থাকে।
এ দিকে দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নতুনভাবে ঘুরে দাড়ান ওই জামায়াত নেতা। তার ভাতিজা ছমুদুল হুদা বাচ্ছু মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ কাজে অর্থ ও নেপথ্যে থেকে সহায়তা করছে। ছমুদুল হুদা বাচ্ছু নাশকতাসহ রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। কয়েক বছর তার অপতৎপরতা প্রশাসনের নজরে আসে।
কয়েকবার র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাবসহ) প্রশাসন ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসমুহ তাকে ধরতে অভিযান চালায়। এ সময় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে গত ৩ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দেন। আবদুল মাবুদ মগনামায় স্বাধীনতা সংগ্রামে বলিষ্ট ভূমিকা রাখে।
৭১এর পরবর্তী ৭৪-৭৫ এর দিকে কৃষকের অধিকারের পক্ষে প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি কৃষক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। সে সময় “লাঙ্গল যার জমি তার” এ শ্লোগান নিয়ে ভূমিহীন কৃষকদের পক্ষে সংগ্রাম করেন। নিপীড়ন ও জুলুমের বিপক্ষে সোচ্ছার ছিলেন।
তিনি অত্যন্ত প্রতিবাদী ছিলেন। তার পরিবারকে ওই সময় থেকে হয়রানি করছিল জামায়াত পন্থী এ পরিবারটি। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তাকে সবাই মাবুদ চাচা হিসেবে চিনতেন। তার ছেলে মুহাম্মদ হাসেম গণমাধ্যম কর্মী। দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকা, দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। এলাকায় সর্বজন প্রশংসিত ব্যক্তি। তার অপর ছেলেরা শান্ত শিষ্ট ও উৎপাদনমুখী।
এলাকায় তারা অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র। রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধী কোন কাজে সম্পৃক্ততা নেই। থানা ও কোর্টে এ পর্যন্ত কোন মামলা মোকাদ্দমার মুখোমুখি হননি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা বর্তমানে আয় রোজগার করে ভালভাবে সংসার চালান। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তবে সাবেক চক্রান্তকারীরা আবারো সক্রিয় হয়েছে। তারা আগুন, মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করার চক্রান্ত করছে এ পরিবারটিকে নিয়ে।
স্থানীয়রা আরো জানায়, আগুনের সুত্রপাত অত্যন্ত নাটকীয়। কুঁড়েঘরটিতে যে সব মালামাল ছিল সেগুলি পূর্বে উঠানে সরিয়ে ফেলানো হয়। আগুন লাগে পুকুরের দিকে। দ্রুত সময়ে পানি নিক্ষেপে আগুন নিয়ন্ত্রন আনা হয়।
এ সময় তাদের ২/৩ গুপ্তচর এলাকায় প্রচার করে আগুন প্রতিপক্ষ দিয়েছে। এমনকি তারা চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলাবলি করেন, গুলি বর্ষণ করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষ তাৎক্ষনিক এ সব প্রচারে ফেটে পড়েন। তারা বিষয়টি সরাসরি নাকোচ করেছেন।
Posted ৭:২৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta