মোঃ ফারুক,পেকুয়া(১৩ ডিসেম্বর) :: গত ২২অক্টোবর পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন করার জন্য ৩১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি গঠন করে জেলা কমিটি। উপজেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে দ্রুত সম্মেলন শেষ করার জন্য জেলা আ’লীগ নেতা আবু হেনা মুস্তফা কামাল আহ্বায়ক ও পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমকে সদস্য সচিব মনোনীত করে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
বিগত দুই মাসের কাছাকাছি সময় আগে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হলেও কার্যত ডাক বাংলোর হলরুমে দু’টি মিটিং আয়োজন তাদের সমুদয় কার্যক্রম। এরই মাঝে জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও এমপির উপস্থিতিতে একটি সংরক্ষিত সভা করা হয়। ব্যাপক বাকবিতন্ডার মধ্যে দিয়ে শেষ হওয়া সেই সভার পর দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দরা। অতিতের ধারাবাহিকতায় সক্রিয় হয়ে ওঠে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতারা।
প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠে উপজেলা আ’লীগের কার্যালয়। প্রতিদিন মিটিং আর সভার আয়োজন করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে রাখেন তিনি। মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্দিজীবী দিবস উপলক্ষে ৫শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে বর্ধিত সভার আয়োজন করে।
অপরদিকে একই দিন মহান বিজয় দিবস উৎযাপন নিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা করেন আবু হেনার নেতৃত্বে ১০/১১জনের একটি দল। তাও ডাক বাংলোর হলরুমে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা সম্মেলন না করে কমিটি ভাগিয়ে নিতে চায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবু হেনা মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে একটি পক্ষ। গত ৩০নভেম্বর ভিতর কমিটির সম্মেলন শেষ করার কথা থাকলেও তারা মাঠে কোন ধরণের কার্যক্রম না করায় সেই সন্দেহ আরো ঘণিভূত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবু হেনা মুস্তফা কামাল ও আবুল কাশেমকে কমিটি দেওয়ার পর দুইজনে একবার মাত্র সভায় মিলিত হয়েছেন। তাও জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে। বর্তমানে সম্পূর্ণ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। আহ্বায়ক আবু হেনার নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কমিটির অনেক সদস্য ইতোমধ্যে দূরে সরে গেছেন। তারা সক্রিয় হয়ে ওঠছেন আবুল কাশেমের নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে।
সর্বশেষ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন শুধু মাত্র ১০/১১জন। অপর দিকে আবু কাশেমের নেতৃত্বে সভায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ওই সময় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বেশিরভাগ সদস্য আ’লীগ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবু হেনা মুস্তফা কামালে বাড়ি মগনামা হলেও জেলা আ’লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বেশি। সেখানে বিভিন্ন পদবীতে দায়িত্বও পালন করেন। কখনো পেকুয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি।
অপরদিকে বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে মামলা আর হামলার মুখোমুখি হয়ে রাজনীতির মাঠে অবদান রাখেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ বেশ কয়েকজন নেতা। বছরের পর বছর দেশ ছাড়া ও জেলে কাটিয়েছেন তারা। আ’লীগ সরকার আমলেও তারা পেকুয়ার রাজনীতি শক্ত হাতে ধরে রাখেন।
সর্বশেষ কিছু বিতর্কের জেরে জেলা কমিটি পেকুয়া উপজেলা আ’লীগে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন। তাতে আহ্বায়ক করা হয় পেকুয়ার রাজনীতিতে কখনো রাজনীতি না করা আবু হেনা মুস্তফা কামালকে। কমিটি গঠনের পর টইটং আ’লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারা।
ডাক বাংলোতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালেও বিতন্ডায় জড়ান তারা। আবু হেনা মুস্তফা কামাল বিতর্কহীন নেতা হলেও প্রস্তুতি কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য তাকে ভূল পথে পরিচালিত করা শুরু করেন। তারা এই বলে পরামর্শ দেন সম্মেলন করে লাভ নাই জেলা কমিটির সাথে কথা বলে কমিটি ভাগিয়ে নিতে হবে। এ পর্যন্ত কর্মকান্ডে সেই পথে তারা ধাবিত হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
এবিষয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে উপজেলা কমিটির সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা থাকলে তাদের কার্যক্রম সে কথা বলছেনা। সম্মেলন করার কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি। সম্মেলন হবে কিনাও সন্দেহ রয়েছে। এছাড়াও আহ্বায়ক আবু হেনা মুস্তফা কামালকে ঘিরে ধরেছে থানা ও ব্যাংকের দালাল নাসির উদ্দিন বাদশা নামের এক ব্যক্তি।
পেকুয়া আ’লীগের রাজনীতিতে কোন ধরণের অবদান না থাকলেও জেলা কমিটিকে ম্যানেজ করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য পদটি ভাগিয়ে নেন নাছির উদ্দীন বাদশা। এ পদ পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বিতর্কিত নাসির উদ্দিন বাদশা। আহ্বায়ক আবু হেনার মুস্তফার আশ্রয়ে সিনিয়র নেতাদের সাথে বেয়াদবি শুরু করেন। এমনকি উপজেলা ও থানা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্নজনকে চাকরি দেওয়ার কথা টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তার এসব অপকর্মের প্রভাব পড়েছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কার্যক্রমে। যার কারণে তৃণমূল আ’লীগে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নাই বললে চলে।
এমনকি তাদের ধারা সফলভাবে সম্মেলন শেষ করা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এমনকি তাদের ধারণা পেকুয়ায় কোন ধরণের সম্মেলনও হবেনা। তারা কৌশলে কমিটি ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন বাদশা বক্তব্য দিতে অপরাগত প্রকাশ করেছেন।
পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে তৃনমূল আ’লীগের কেন্দ্র হচ্ছে দলীয় কার্যালয়। নেতাকর্মীরা কার্যালয় মুখী হয়েছে তাই কার্যালয়ে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে।
এবিষয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবু হেনা মুস্তাফা কামালের মোবাইলে কল করা হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Posted ১:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta