শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পোপকে নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্প’র ১৬ রোহিঙ্গা

শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৭
268 ভিউ
পোপকে নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্প’র ১৬ রোহিঙ্গা

কক্সবাংলা রিপোর্ট(১ ডিসেম্বর) :: ঢাকা সফররত খ্রীষ্ঠান ধর্মের প্রধান পোপ ফ্রান্সিসকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্প’র ১৬ রোহিঙ্গা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কাকরাইলের আর্চ বিশপ হাউসের মাঠে পোপের বক্তব্য শেষে মঞ্চে তোলা হয় কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্প থেকে আসা এক শিশুসহ ১৬ রোহিঙ্গাকে। মঞ্চে উঠে লাইনে দাঁড়িয়ে একজন একজন করে পোপের কাছে নিজেদের দুঃখ-দুর্দশা আর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দেন তারা। এই প্রতিনিধি দলের মধ্যেই ছিলেন জাফর। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনবাহিনী গুলি করে আমার পরিবারের ১১ সদস্যকে হত্যা করেছে।’

এরপর শরীরে গুলির ক্ষতচিহ্ন দেখালেন ২৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা জাফর আলম। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে সময় তার বাম হাতের কনুইতে গুলি লেগেছে। তিনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে। স্থানীয় হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি; এখনও সেই গুলির ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন।

ঢাকায় পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ১৬ জন রোহিঙ্গা সদস্যকে শুক্রবার সকালে ঢাকায় আনা হয়। কারিতাসের ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় আনা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক মাঈনুদ্দিনসহ সাত জন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃমাণ্ডলিক সমাবেশে পোপ ফ্রান্সিস যোগ দেওয়ার আগেই মঞ্চের বাম পার্শ্বে রোহিঙ্গাদের আলাদা করে বসিয়ে রাখা হয়।

হাতে গুলির ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়ানো জাফর জানান, তিনি রাখাইনের মংডুর তুলাতুলি গ্রামের বাসিন্দা। বাবা গুরা মিয়া। কোরবানির ঈদের তিন দিন (৩০ আগস্ট) আগের ঘটনা। সকালে হঠাৎ করেই তাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনা সদস্যদের সঙ্গে ছিল মগরাও। এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে তারা। এতে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন মিলে ১১ জন মারা যান। তার বাম হাতেও এসে লেগেছিল একটি গুলি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ই কোনও রকমে বাড়ি থেকে পালিয়ে পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যান তিনি।

জাফর আলম বলেন, ‘ওই দিন হাতটা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখি। তারপর রাতে নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফে যাই। সেখানে একটা হাসপাতালে তিন দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রাম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চার দিন চিকিৎসা চলে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বালুখালী ক্যাম্পে চলে আসি।’

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বেঁচে প্রসঙ্গে জাফর বলেন, ‘আমার ভাগ্য ভালো যে গুলিটা হাতে লেগেছিল, তাই আমি প্রাণে বেঁচে গেছি। ওই ঘটনায় আমার মেজ ভাই নূরুল আমিন, আরেক ভাই খায়রুল আমিন, মা ফরিদা খাতুন, বোন খুরশিদা, ভাইয়ের ছেলে জামাল হোসেন, ভাতিজি তাহসিন আরা, আরেক ভাইয়ের ছেলে মুরতাজাসহ ১১ জন মারা যান।’

পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে জাফরের নিহত বোনের এক কন্যাও এসেছে। শুকতারা নামে দশ বছরের এই কিশোরীকে পোপ মাথায় হাত বুলিয়ে আদরও করেন।

পোপ যখন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আসা একজন দোভাষী তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বুঝিয়ে বলেন।

জাফর বলেন, ‘পোপকে আমি আমার হাতের গুলির চিহ্ন দেখিয়ে পরিবারের ১১ সদস্য নিহত হওয়ার কথা বলি। আমাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা বলি। আমাদের ধন-সম্পত্তি লুট হওয়ার কথা বলি। আমাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে নেওয়ার কথাও বলি। পোপ আমাদের কথা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবেন বলে জানান।’

পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসা দুই নারীর একজন, সৈয়দা খাতুন (২৫) বলেন, রাখাইনের বুছিডংয়ের মুড়াপাড়ায় তার বাড়ি ছিল। স্বামীর নাম ইসমাইল। কোরবানির ঈদের সাতদিন পর তাদের বাড়িতে হামলা চালায় সেনাবাহিনী। এরপর স্বামী ও চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। পোপকে তিনিও অন্যদের মতো নিপীড়নের কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

ষাটোর্ধ্ব রোহিঙ্গা আহমেদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সাহায্য চেয়েছি। আমরা যেন সুন্দরভাবে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করার কথা বলেছি।’

মংডু নর্থের নারিবিলের বাসিন্দা কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিজের দেশে যাইতে চাই। এক মুহূর্তও ক্যাম্পে থাকতে চাই না। কিন্তু রাখাইনে সবকিছু ঠাণ্ডা করে আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে, সব অধিকার দিয়ে পাঠানো হোক। পোপকে আমি তাই বলেছি।’

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলা শেষে মঞ্চে দাঁড়িয়েই অনির্ধারিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পোপ ফ্রান্সিস। এ সময় স্প্যানিস ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানানো পোপ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন, যেটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল।

পোপ বলেন, ‘এই রোহিঙ্গাদের মাঝেও আজ ঈশ্বরের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যারা আপনাদের অত্যাচার করেছে, কষ্ট দিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। আপনারা বিশাল মনের পরিচয় দিয়ে আমাদের ক্ষমা করে দিন।’

268 ভিউ

Posted ১১:৫৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com