কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(১৭ জুলাই ) :: নানা কারণে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছে। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বহন করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। সুতরাং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি। রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব। বিশ্বনেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে।
সদ্য বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার কথায় এমন আভাসই পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে চীনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে অগ্রগতি হবে না। গত এপ্রিলে চীনের উদ্যোগের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে।
এমনকি প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ, চীন এবং মিয়ারমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছিল। এরপর থেকে এটি নিয়ে আর সাড়া নেই। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশ প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন কোনো ইস্যু দাঁড় করেনি। এর ফলে রোহিঙ্গারা যে অবস্থায় ছিল; আপাতত তাদের সে অবস্থাই থাকছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চারটি কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।
মিয়ানমার নিজেরাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো চায় না, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী চায় না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে তাতে গোপনে সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি। এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক সংস্থাও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আত্তীকরণের উদ্ভট প্রস্তাব দিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ারও উদ্যোগ নেই বললেই চলে। তবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে চলমান সংকটটির টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে।
বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ শুনছে, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।
Posted ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta