কক্সবাংলা ডটকম(২৩ অক্টেবর) :: বিশ্ব শাসনের গ্রহণযোগ্য তত্ত্বের একটি হার্টল্যান্ড তত্ত্ব। ১০০ বছর আগে দেয়া এ তত্ত্বে হ্যালফর্ড ম্যাকিন্ডার বলেন, পূর্ব ইউরোপ যে শাসন করবে, হার্টল্যান্ড (ইউরেশিয়ার মূল ভূখণ্ড) থাকবে তার নিয়ন্ত্রণে। হার্টল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ মানে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে শাসন করা। আর এ তিন মহাদেশ নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব শাসন করবে সে। ভূ-রাজনীতি নিয়ে হ্যালফর্ড ম্যাকিন্ডারের বিপরীত তত্ত্বটি তারও আগের আলফ্রেড থেয়ার মেহ্যানের। তার যুক্তি, সমুদ্র যে দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বিশ্ব শাসনের কর্তৃত্বও থাকবে তার হাতেই। যথার্থতা প্রমাণ করেছে দুটি তত্ত্বই। তবে একই সময়ে নয়, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে একসময় ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রে ছিল পণ্য পরিবহনে করিডোর প্রদান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড করতে না দেয়া এবং অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের মতো বিষয়গুলো। এখন তা বদলেছে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতির কেন্দ্রে এখন সমুদ্র। বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে অর্থনৈতিক হাব। গড়ে উঠছে একাধিক মেগা প্রকল্প। আর এসব প্রকল্পে সম্পৃক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্র বিরোধের শুরু আশির দশকে, বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে। এর সুরাহা হয় ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের (পিসিএ) মাধ্যমে। ১৯৭৪ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপপুঞ্জকে বাংলাদেশের ধরে নিয়েই মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিরোধ দেখা দিলে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যায় বাংলাদেশ। এর মীমাংসা হয় ২০১২ সালে। প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারে সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের।
ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ এখন বাংলাদেশের। সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌম এ অধিকার প্রতিষ্ঠার পরই ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বড় প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে ক্ষমতাধর দেশগুলো।
বঙ্গোপসাগরের চেয়েও বড় পরিসরে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখতে হবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, অর্থনীতি পশ্চিম থেকে পুব দিকে আসছে। যারা ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণ করবে, তারাই আগামী দিনে বিশ্বের মহাশক্তি হবে।
ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলো খুব দ্রুত উন্নতি করছে, তাদের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। ফলে এদিকে সমুদ্রপথে যোগাযোগ বাড়ছে। ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে মার্কিনরা। চীন মনে করছে, ভবিষ্যতে সে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হবে। ফলে এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে চীনের বাণিজ্য প্রসারিত হবে না।
ভারত মহাসাগরে চীনের সঙ্গে ভারতের প্রতিযোগিতাই বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের নৌ-ব্যবস্থা চীনের মতো শক্তিশালী না হলেও ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রে থাকার কারণে ভৌগোলিকভাবেই দেশটি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আর মালাক্কা প্রণালি ভারতের খুব কাছেই। সেদিক থেকে চীনের একটি ঝুঁকি থেকে যায়। ফলে ভারতকে চাপে রাখার জন্য স্ট্রিং অব পার্লস কৌশল তৈরি করেছে চীন। সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দর করতে না পারলেও পায়রায় তাদের উপস্থিতি ভারতের জন্য শঙ্কার। এছাড়া সেন্ট মার্টিনে মার্কিনদের ঘাঁটি করার ইচ্ছা রয়েছে।
জানা গেছে, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ সেন্টারে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এরই মধ্যে বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম বাংলাদেশ সফরকালে এ প্রস্তাব দেন। এছাড়া বাংলাদেশকে সামরিক লজিস্টিক চুক্তির প্রস্তাব দেয় দেশটি। ভারত মহাসাগরের সবচেয়ে নিকটবর্তী হলো বঙ্গোপসাগর।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সূত্রমতে, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ানো। চীনকে অবরুদ্ধ করা নয়, বরং সমুদ্রে অবাধ চলাচল, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বাড়াতেই এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এ অঞ্চলে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার রয়েছে সিঙ্গাপুরে।
এর মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের তথ্য বিনিময় করা হয়, যাতে সমুদ্রযাত্রায় কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। তারই আদলে যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে এ সেন্টার খুলতে চায়। বাংলাদেশেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য উন্নয়ন ও মেরিটাইমের নিরাপত্তা সহযোগিতা।
চীনের ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোডের (ওবিআর) প্রবর্তন থেকেই মূলত বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার বাড়ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন।
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলো এখানে প্রতিযোগিতায় রয়েছে। আগে শুধু স্থলভাগকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা হতো। এখন বলয় সৃষ্টির নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সমুদ্র। এখানে প্রতিটি দেশের স্বার্থ হচ্ছে সমুদ্র থেকে ট্যানজিবল ও ইনট্যানজিবল সব ধরনের সম্পদ থেকেই ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা। এখান থেকে কোন দেশ কতটা সুবিধা নিতে পারে, সেটাই মূলত লক্ষ্য। বাস্তবিক অর্থেই এর বাইরে থাকার উপায় নেই বাংলাদেশের। তবে নিজ স্বার্থ রক্ষা করে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলোর যে সহাবস্থান, তাতে ভারসাম্য আনতে হবে।
মার্কিন বলয় থেকে বের হতে ওবিআর প্রবর্তন করেছে চীন। এ থেকেই দক্ষিণ ও পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় এক ধরনের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে দেশটি। চীনের স্ট্রিং অব পার্লসের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বন্দর ব্যবস্থাপনা, শ্রীলংকায় হাম্বানটোটা বন্দর ব্যবস্থাপনা, মিয়ানমারের রাখাইনে বন্দর নির্মাণসহ চীনের পণ্য পরিবহন ও সামরিক চলাচলের জন্য সমুদ্রপথ নিজেদের আধিপত্যে রাখার পরিকল্পনা চীনের। মেরিটাইম সিল্করুটে মালাক্কা প্রণালি নৌ-রুটটি এড়িয়ে যেতে চাইছে চীন। এক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের ভেতর দিয়ে খননের মাধ্যমে একটি চ্যানেল তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটটি হলো ব্যবসা, খনিজ ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রথমত, বাংলাদেশকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক হাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ একটি বড় বাজারও। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বর্তমানে ভারতের উন্নয়নের অন্যতম অগ্রাধিকার।
আর ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে ভারত কখনই চাইবে না, তার উন্নয়ন ব্যাহত হোক। অন্যদিকে চীন বর্তমানে যে পণ্য বিক্রি করছে, তা মূলত অবকাঠামোকেন্দ্রিক। বাংলাদেশ এর বড় একটি বাজার। এ কারণেই চীনের কাছে আমরা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে সমুদ্রের এ রুট দিয়েই বিশ্বে বেশির ভাগ বাণিজ্য হয়।
ফলে রুটটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীনা জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বঙ্গোপসাগর তাদের প্রয়োজন রয়েছে। এশিয়ার অর্থনীতি যেহেতু উত্থানের পথে, তাই যুক্তরাষ্ট্রও চাইছে এখানে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে।
বাংলাদেশও চীনের স্ট্রিং অব পার্লসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রায় সবকিছুই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় এ নিয়ে চুক্তি সইয়েরও কথা ছিল। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেষ মুহূর্তে তা আর হয়নি। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে না পারলেও উপকূলীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর পায়রায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ পেয়েছে চীন।
পায়রার মূল বন্দর নির্মাণে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোং লিমিটেড (সিএইচইসি) ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেডের (সিএসসিইসি) সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালে সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের লক্ষ্যে মূল অবকাঠামো এবং তীর রক্ষা বাঁধ ও আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের স্থাপনা নির্মাণ করবে এ দুই প্রতিষ্ঠান। এছাড়া পায়রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করছে চীন।
এগুলোকে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা হিসেবেই দেখছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. জমির। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর আমাদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা। সমুদ্রসীমা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে তৈরি হওয়া ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা কীভাবে আরো কাজে লাগানো যায়, সে চেষ্টাই আমরা করছি। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশ, যারা ব্লু ইকোনমি নিয়ে কাজ করেছে ও অভিজ্ঞতা আছে, তারা যদি আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে, তাহলে তা নিতে আমরা প্রস্তুত।
বাংলাদেশে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব ছিল ভারতেরও। বন্দর নির্মাণের কাজ না পেলেও দ্বিপক্ষীয় সামরিক সমঝোতা হয়েছে দেশটির সঙ্গে। দেশের দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চলে সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে।
এদিকে রাশিয়া বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও এর সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি দিয়ে নিজেদের যুক্ত রাখতে চায়। ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজেন্ডার ইগনাতোভ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্কালীন সচিব অশোক মাধব রায়ের সঙ্গে বৈঠক করে রাশিয়ার এ আগ্রহের কথা জানান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বড় প্রকল্পগুলোয় নিজেদের যুক্ত রাখার কথাও বৈঠকে জানান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির একটি তালিকা মস্কোয় পাঠিয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে রাশিয়া বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
অবশ্যই বঙ্গোপসাগরে প্রতিযোগিতার একটি জায়গা আছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, তবে সে প্রতিযোগিতায় বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিকতার চেয়ে ভূ-রাজনৈতিকতা বেশি প্রখর। জাপানের মাতারবাড়ী প্রকল্পটিতে বঙ্গোপসাগরে বলয় তৈরির চেয়ে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বেশি কাজ করেছে। কারণ মাতারবাড়ীর আগে সোনাদিয়ায় আমরা আরেকটি বন্দর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের আপত্তি থাকার কারণে বিকল্প হিসেবে মাতারবাড়ী হাজির হলো।
বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার চেয়ে সহযোগিতার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এ রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা ব্যবস্থাপনা করার সক্ষমতা আমাদের নেই। এ সক্ষমতা হওয়ার সম্ভাবনাও কম। সেক্ষেত্রে আমরা সবার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে আমাদের উন্নয়নটা নিশ্চিত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারি।
সুযোগ-সুবিধার জন্যই মূলত উপকূলকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলো হয়ে থাকে জানিয়ে এম হুমায়ুন কবির বলেন, নদী বা সমুদ্র ঘিরেই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এলএনজি টার্মিনাল সমুদ্রের বাইরে করার উপায় নেই। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহন একটি বড় বিষয়। এখানে বঙ্গোপসাগরে কর্তৃত্ব তৈরির চেয়ে পানিপথে পরিবহনের সুবিধাই প্রাধান্য পেয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে যেভাবেই দেখেন না কেন, বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের উপস্থিতি ব্যাপক মাত্রায় দৃশ্যমান। চীনের সোনাদিয়া সমুদ্রবন্দর নির্মাণ পিছিয়ে পড়ার কারণে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। সেটি নির্মাণ করছে জাপান। গত কয়েক বছরে প্রকল্পের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছেও।
সেই সঙ্গে মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করছে দেশটি। আর কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরুও হয়েছে।
Posted ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta