রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশকে নিয়ে চীন ও ভারতের ভূ-রাজনৈতিক লড়াই

বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮
483 ভিউ
বাংলাদেশকে নিয়ে চীন ও ভারতের ভূ-রাজনৈতিক লড়াই

কক্সবাংলা ডটকম(১২ এপ্রিল) :: রাজনৈতিক, জাতীয় নিরাপত্তা ও ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী মনে করে ভারত সরকার। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশ হলো পরিবহন করিডোর। তাছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য করিডোর অতীতে চীনা সামরিক হুমকির মুখে পড়া নাজুক শিলিগুড়ি করিডোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্পও বাংলাদেশ। ভারত আরো আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের মৌলবাদ ও জিহাদবাদ সীমান্ত পেরিয়ে তাদের দেশে ঢুকে যেতে পারে।

বাণিজ্য, অর্থায়ন, সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে চীনের এশিয়াজুড়ে প্রভাব বিস্তারের বৃহত্তর কর্মসূচির মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশ হলো বিশ্বের সপ্তম জনবহুল দেশ। ভারতের সীমান্ত-সংলগ্ন দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র এ দেশেই (ভুটান ছাড়া) চীনা প্রভাব প্রবলভাবে নেই।

বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে উভয় দেশের প্রধান ক্ষেত্র হলো বাণিজ্য। এ খাতে বাংলাদেশের বিপরীতে উভয় দেশের বিপুল উদ্বৃত্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ সময়কালে চীন থেকে আমদানি করেছে ১৬-১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, রফতানি করেছে মাত্র ৭৫০ ডলারের পণ্য। বাংলাদেশে চীনা বৈদেশিক সহায়তা এক বছরে এক বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ঋণদান কর্মসূচিতে এ পরিমাণ হলো ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সফরকালে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি ১২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ভারতের রফতানি ৮ বিলিয়ন ডলার, আমদানি মাত্র ২৬০ মিলিয়ন ডলার। ভারতের সাথে বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২-৩ বিলিয়ন ডলার (ভারতের অনুকূলে)। আর বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা ২-৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায়। বাংলাদেশে ভারতের বার্ষিক বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।

বাংলাদেশে অবকাঠামোর জন্য ভারত ও চীন বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে চাচ্ছে। উভয় দেশই বিশাল রেলওয়ে প্রকল্পের প্রস্তাব করছে। উভয়েই বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করতে চায়। এখন পর্যন্ত অবকাঠামো বিনিয়োগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে বিনিয়োগ উভয় দেশেরই খুব কম।

দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক সম্ভারের প্রধান সরবরাহকারী চীন। ভারত এখানে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জামের মান নিয়ে বাংলাদেশের সামরিক ক্রয় দফতর সন্দিহানই রয়ে গেছে।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাব বিপুল। উভয় দেশের অভিন্ন ভাষা রয়েছে। ভারতের স্কুলগুলোতে অন্তত এক লাখ বাংলাদেশী পড়াশোনা করছে। উভয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। চীনা পক্ষ থেকে এ দিকে অগ্রসর হতে বাংলাদেশে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটস প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা চীনা ভাষা শেখা ও চীনে বাংলাদেশীদের পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ দিচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে চীনের বাণিজ্যিক প্রভাব দ্রুত বাড়ছে।

ইসলামপন্থী ও পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত বিএনপি সরকারের ২০০১-২০০৬ সময়কালটি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতীয় চিন্তাধারা গড়ে দিয়েছে। বিএনপির আমলে ইসলামি জঙ্গিবাদ বেড়ে যায়, বাংলাদেশের সমর্থনে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল বাংলাদেশ শাসন করলে ভারত বেশ আতঙ্কে থাকবে।

দিল্লির লক্ষ্য স্বল্প মেয়াদি। তারা চীনা প্রভাব বিস্তার রুখতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদি খেলা খেলছে। তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী, সেনাবাহিনীপন্থী বিএনপির সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়।

বঙ্গোপসাগরের এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পরোক্ষ শিকার বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একে উৎসাহিত করার জন্য তার কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করছে। ঢাকায় পূর্ণ সচেতনতা রয়েছে, ভারত ও চীন যতটুকু দিচ্ছে, তার চেয়ে বেশি নিচ্ছে। আর তাদের তৈরী করা অবকাঠামোগুলো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে নিম্নমানের।

আবার রোহিঙ্গা ইস্যুতেও সুস্পভাবে দেখা গেছে, চীন ও বাংলাদেশ কেবল সুসময়ের বন্ধু। মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা বা জাতিগত নির্মূল অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আনা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চীন ভেটো দিয়েছে। বাংলাদেশ একে অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারত বাহ্যিকভাবে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হলেও সেও ভালো কিছু করেনি। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ইস্যুতে সে সুস্পষ্টভাবে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে একে অপরকে কোণঠাসা করতে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে চীন ও ভারত তাদের সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবে। তবে তাদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ কঠোর উদ্যোগ নেওয়ায় দেশ দুটি সম্ভবত ব্যর্থ হবে।

বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন সম্ভবত বাংলাদেশে পরাশক্তিগুলোর প্রাসঙ্গিক প্রভাব বিস্তারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ থেকে রফতানি আটকাতে ভারত এখন সম্ভব সবকিছু করছে। আর চীনা বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশ করতে দেওয়ার কোনো ইঙ্গিত চীন দিচ্ছে না। উভয় দেশই ডব্লিউটিও নিয়ম লঙ্ঘন করে তাদের রফতানিতে বাংলাদেশে বিপুল আন্ডার-ইনভয়েসিং অনুমোদন করছে।

অবশ্য ভারতের চেয়ে অনেক ধনী হওয়ায় এবং ভারতের চেয়ে অনেক বড় অর্থনীতি হওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীন সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। সে যদি বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির জন্য তার অর্থনীতিকে খুলে দেয়, তবে বাংলাদেশে ক্ষমতার ভারসাম্য চূড়ান্তভাবে চীনের অনুকূলে চলে যাবে।

 SOURCE : ইস্ট এশিয়া ফোরাম
483 ভিউ

Posted ৭:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com