শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৮.৬ বিলিয়ন ডলার

মঙ্গলবার, ০৬ নভেম্বর ২০১৮
334 ভিউ
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৮.৬ বিলিয়ন ডলার

কক্সবাংলা ডটকম(৬ নভেম্বর) :: বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবেশিত তথ্যে চলতি বছরের অক্টোবর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে রক্ষিত স্বর্ণ ও নিউইয়র্ক ফেডে ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রায় এ পরিমাণ সম্পদ সংরক্ষণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পরিসংখ্যানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডারের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ রিজার্ভের এ হিসাব করা হয়েছে দায়-দেনাসহ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং’ বিভাগের তৈরি পরিসংখ্যান বলছে, গত অক্টোবর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ ২৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। দেশের রিজার্ভ সম্পর্কে একই তথ্য দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)।

সংস্থাটির উপাত্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিসংখ্যান দিয়েছে আর্থিক খাতের তথ্য সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিইআইসি।

তাতে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কখনই দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের গণ্ডি পেরোয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস ও নিট দুই ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করে। সম্পদ থেকে দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই গ্রস রিজার্ভের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। অন্যদিকে আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিজার্ভের নিট হিসাবকে প্রকৃত রিজার্ভ হিসেবে গণ্য করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। এ রিজার্ভের মধ্য থেকে চলতি সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে ১ দশমিক ১১২ বিলিয়ন ডলারের (১১১ কোটি) আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হবে।

রিজার্ভের হিসাবায়নের মধ্যেই দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টের (এফসিএ) প্রায় ৮০ কোটি ও আইএমএফ থেকে নেয়া ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণও সম্পদ হিসেবে ধরা হয়েছে। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে এসব দায় বাদ দেয়া হয়।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।  তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হয়ে আগামীকাল তা আমদানি ব্যয় কিংবা অন্য কোনো দায় পরিশোধে ব্যয় হতে পারে। আমরা রিজার্ভের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করি, তাতে কোনো ভুল নেই।

সাধারণত স্বর্ণ ও সাতটি বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের অর্থ জমা রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে স্বর্ণ জমা রাখা আছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে। মার্কিন ডলার, পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার ও চাইনিজ ইউয়ান সংরক্ষণ করা হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। দেশের রিজার্ভের প্রায় ৮০ শতাংশই রাখা হয় নিউইয়র্ক ফেডে।

সিংহভাগ রিজার্ভ নিউইয়র্ক ফেডে রাখা হয়েছে মূলত নিউইয়র্কের রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বন্ডে বিনিয়োগ, আমদানি বিল পরিশোধ ও দাতা সংস্থার ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য। সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনের (সুইফট) মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় এসব পেমেন্ট দেয়া হয়।

নিউইয়র্ক ফেড ছাড়াও ইউরোপে রয়েছে রিজার্ভের ১৭ শতাংশ এবং কানাডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের প্রত্যেকটিতে ২ শতাংশের নিচে। স্বর্ণ আছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে।

রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে গ্রস ও নিট দুটিই সঠিক বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, রিজার্ভের সম্পদের বিপরীতে কিছু দায়ও থাকে। দায়গুলো বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ কত আছে, এ প্রশ্নে নিট রিজার্ভের পরিসংখ্যানই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমাদের দায়গুলো পরিশোধ করতে হবে।

গ্রস রিজার্ভের ক্ষেত্রে যে সম্পদ হাতে আছে, তার সবটুকুই আমাদের সম্পদ নয়। রিজার্ভের মধ্যে আমি কতটুকুর মালিক, এ হিসাব বের করতে হলে অবশ্যই দায়গুলো বাদ দিতে হবে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি দায় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এখনো আমাদের হাতে পর্যাপ্ত রিজার্ভ আছে। এ মুহূর্তে খাদ্য আমদানি ব্যয় কিছুটা কমেছে। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আমাদের আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।

এছাড়া ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হবে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি এখনো আশাব্যঞ্জক নয়। শুধু রিজার্ভের ওপর ভর করে বেশি দিন চলা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের আমদানি ব্যয় হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে আমদানিতে ৮ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি মাসেই দেশের আমদানি ব্যয় হচ্ছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। দেশের বিদ্যমান ২৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অনেক সময় পণ্য রফতানি হলেও সে অর্থ দেশে ফেরত আসে না। যেসব নস্ট্রো হিসাবের বিপরীতে রফতানি হয়, সেসব হিসাবের অর্থও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অংশ ধরে হিসাবায়ন করা হয়। তবে এ ধরনের অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সাধারণত সারা বছর রিজার্ভের গ্রস হিসাব করা হলেও বছর শেষে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের দিয়ে অডিট করে সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। অনেক সময় স্বর্ণের দাম বাড়া-কমা কিংবা ডলারসহ অন্য মুদ্রাগুলোর দর হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে বছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক মুনাফা বা লোকসান করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়গুলো ধরে গ্রস রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হয়। অনেক সময় নস্ট্রো অ্যাকাউন্টের টাকা বছরের পর বছর ধরে দেশে আসে না। এসব অর্থকেও রিজার্ভের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। তবে এ ধরনের অর্থের পরিমাণ অনেক কম।

রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের তুলনায় রাষ্ট্রের অনেক বেশি ব্যয় হচ্ছে আমদানিতে। অনেক দিন ধরে ঘাটতি নিয়েই চলছে সরকারের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স)। চলতি হিসাবের দীর্ঘদিনের ঘাটতি নেতিবাচক ধারায় নিয়ে গিয়েছিল ব্যালান্স অব পেমেন্টকেও। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ দুই নির্দেশকের নিম্নমুখিতায় কমতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অক্টোবরে রিজার্ভ আবার ৩২ বিলিয়নে উন্নীত হলেও চলতি সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধ করা হলে রিজার্ভ কমে যাবে।

জ্বালানি তেলসহ বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের নিম্নমুখী দর কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমিয়ে রেখেছিল। ফলে বাড়তে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সাল শেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ৩২ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এর পর থেকে হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওড়সহ দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় চালসহ খাদ্যশস্যের উৎপাদন। ফলে আমদানি করতে হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য। একই সঙ্গে চলছে পদ্মা সেতু, রূপপুর ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো বৃহৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি। আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় সেভাবে বাড়েনি। এতে দুই বছর ধরেই নেতিবাচক চলতি হিসাবের ভারসাম্য। এর ধাক্কা লেগেছে ব্যালান্স অব পেমেন্টে। ফলে ক্রমবর্ধমান রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে।

334 ভিউ

Posted ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ নভেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com