মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লুট ও ঘুষের টাকাই সুইস ব্যাংকে ?

শুক্রবার, ৩০ জুন ২০১৭
642 ভিউ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লুট ও ঘুষের টাকাই সুইস ব্যাংকে ?

কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জুন) :: যত দিন যাচ্ছে, ততই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে লুট হয়ে যাওয়া টাকাও রয়েছে। এদিকে সরকারের চলমান বড় বড় প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে যে ঘুষ আদান-প্রদান হয়েছে, সেই ঘুষের টাকাও সুইস ব্যাংকে রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. ইব্রাহিম খালেদ। তার মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা টাকা বিনিয়োগ করছেন, সেই টাকাও সুইস ব্যাংকে তারা জমা রাখছেন। কিন্তু তা উদ্বেগের বিষয় নয়।

বিনিয়োগের নামে বিদেশে নেওয়া টাকা ও মানব পাচারের মাধ্যমে অর্জিত টাকাও সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। বিদেশে লোক পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদেশে বসে যে টাকা নেওয়া হয়েছে, ওই টাকাও এসব ব্যাংকে রাখা হয়েছে বলে মনে করেন টিাইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। একইসঙ্গে পণ্য আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং অ্যান্ড ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও দেশ থেকে টাকা পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইব্রাহিম খালেদ ও ইফতেখারুজ্জামান।

এ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের গাফিলতিতেই গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে। লুটেরারা ওই টাকা দেশে রাখা সম্ভব নয়, তাই নিরাপদ ভেবেই সুইস ব্যাংকে জমা রেখেছে তারা। আন্ডার ইনভয়েসিং অ্যান্ড ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যে টাকা পাচার হয়েছে সে ক্ষেত্রে দায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য তাদের কাজের গাফিলতি রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে ও অনেকের অভিজ্ঞতার অভাবও রয়েছে এ ক্ষেত্রে।’ সরকারের সুষ্ঠু তদারকির অভাবও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, ‘সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। এ জন্য বাংলাদেশ বাংকে অবস্থিত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআর ও এটর্নি জেনারেলের অফিসকে সংযুক্ত করা উচিত।  না হলে আগামী বছরগুলোয় এই অঙ্ক আরও বাড়ার সংবাদ শুনতে হবে।’  তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে পাচার করা দুর্নীতির টাকা দেশে ফেরত আনার দৃষ্টান্ত আছে।

একইভাবে জাতিসংঘের দুর্নীতি বিষয়ক কনভেনশন অনুযায়ী দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক আইনি সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে এ টাকা ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন। কিন্তু ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন, সিঙ্গাপুর থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয়। কারণ তাদের ব্যাংকে জমা রাখা টাকা তারা কাজে লাগাতে পারে।

জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হওয়া এই টাকা ফেরত আনতে দু’দেশের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। শুধু সুইজারল্যান্ডেই নয়, সিঙ্গাপুর, হংকং ও মালয়েশিয়ার ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অনেক টাকা জমা আছে। মালয়েশিয়ার ব্যাংকগুলোর কাছে প্রথম কাস্টমার হচ্ছেদ চীন। এরপরের অবস্থানই বাংলাদেশের।’

তিনি বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের মালিকদের নামও প্রকাশ করা উচিত। একসময় ছিল আমানতকারীর নাম পাওয়া কঠিন ছিল। এখন তা কিছুটা জটিল হলেও অসম্ভব নয়।’

উল্লখ্য, বৃহস্পতিবার (২৯ জুন, ২০১৭) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) দেশটির ব্যাংকগুলোর ২০১৬ সালের সামগ্রিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড, ২০১৬’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় পাচার হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা ভারত থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের সমান। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি আর ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি।

২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ৬২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে পাচার হওয়া টাকার পরমাণ বেড়েছে ৯৩৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন কঠোর করায় বিশ্বব্যাপী এখন কালো টাকার প্রবাহ  কমছে। এ কারণে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও ব্যাংক পাচারকৃত সম্পদের তথ্য সংশ্লিষ্ট দেশের হাতে তুলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে সুইস ব্যাংক বিভিন্ন দেশকে পাচার করা অর্থের তথ্য দিতে শুরু করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকা, কানাডা ও ভারতকে কিছু তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকেও তথ্য চাওয়া হয়েছে কিন্তু এখনও তা পাওয়া যায়নি। কয়েকজন ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য চাইলেও সুইস ব্যাংক তা দিতে সম্মত হয়নি বলে জানা গেছে।

একইসঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সরকার তাদের দেশে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কর ফাঁকি দেওয়া অর্থ রাখার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে তারা ব্যাংকিং আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্র জানায়। এসব কারণে সুইস ব্যাংকে বিদেশিদের আমানতের পরিমাণ কমলেও বাড়ছে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ।

বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা। এই অর্থ বাংলাদেশের দুটি বাজেটের প্রায় সমান। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে বশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই।

গত ২ মে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচারের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯১১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ  ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। বলা হয়েছে, আমদানি রফতানিতে আন্ডার ভয়েস অ্যান্ড ওভার ভয়েসের মাধ্যমেই প্রধানত এই অর্থ পাচার করা হয়।

বেসরকারি গবেষণ প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে পাচার হওয়া অর্থ দেশের শিক্ষা বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ গুণ বেশি, আর স্বাস্থ্য বাজেটের তুলনায় বেশি ৮ দশমিক ২ গুণ। পাচার হওয়া ওই অর্থের ২৫ শতাংশ হারে যদি কর পাওয়া যেত তাহলে স্বাস্থ্য বাজেট তিন গুণ এবং শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ করা সম্ভব হতো।

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা বা ৬৬ কোটি ২৫ সুইস ফ্রাঁ (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম)। বর্তমানে প্রতি সুইস ফ্রাঁ বাংলাদেশের ৮৪ টাকার সমান (১.০৪ ডলার)। গত বছর প্রতি সুইস ফ্রাঁর সমান ছিল ৮৮ টাকা।

২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা (বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা), ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ২৭৩ কোটি, ২০১২ সালে ২ হাজার ১৪ কোটি, ২০১১ সালে ১ হাজার ৩৪০ কোটি, ২০১০ সালে ২ হাজার ৭৩ কোটি, ২০০৯ সালে ১ হাজার ৩১৯ কোটি, ২০০৭ সালে ২ হাজার ১৩৯ কোটি, ২০০৫ সালে ৮৫৬ কোটি, ২০০২ সালে ২৭৫ কোটি, ১৯৯৯ সালে ৩৮৭ কোটি এবং ১৯৯৬ সালে ৩৩৭ কোটি টাকা ছিল সুইস ব্যাংকে।

642 ভিউ

Posted ১০:১৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ জুন ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com