মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো গভীরতা ঘাটতিতে জাহাজ ভিড়তে পারছে না

মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭
451 ভিউ
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো গভীরতা ঘাটতিতে জাহাজ ভিড়তে পারছে না

কক্সবাংলা ডটকম(২৪ অক্টোবর):: আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্র বলা হচ্ছে বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা সমুদ্রবন্দরের। যদিও বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।

দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর গভীরতা এত কম যে, প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামেও সাড়ে ৯ মিটারের বেশি ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারছে না। মংলা সমুদ্রবন্দরের অবস্থা আরো নাজুক। সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে সমুদ্রবন্দরটিতে।

এতে ভুগতে হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের। পণ্য পরিবহনে সময় যেমন বেশি লাগছে, যোগ হচ্ছে বাড়তি খরচও।

দক্ষিণ এশিয়ায় সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। সংস্থাটির হয়ে সমীক্ষাটি করেছে যৌথভাবে জাপানের চারটি প্রতিষ্ঠান প্যাডেকো কোম্পানি লিমিটেড, ওভারসিজ কোস্টাল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট অব জাপান, জাপান ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল কোম্পানি।

সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে গত বছর প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো সমুদ্রবন্দরই বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরের মতো এত অগভীর নয়।

যদিও দেশের আমদানি-রফতানির প্রায় পুরোটাই হয় সমুদ্রপথে। অথচ দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের গভীরতাও মাত্র সাড়ে নয় মিটার। অর্থাত্ এর বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাও আবার শুধু নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালেই (সিসিটি) এ গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে।

বন্দরের বাকি ১২টি সাধারণ জেটিতে সাড়ে আট মিটারের বেশি গভীরতার কোনো জাহাজ ভেড়ার সুযোগ নেই। আর মংলা সমুদ্রবন্দরের গভীরতা আরো কম, মাত্র সাড়ে সাত মিটার। দক্ষিণ এশিয়ার সুমদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন গভীরতা।

জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর শ্রীংলকার হামবানটোটা। সমুদ্রবন্দরটির গভীরতা ১৭ মিটার। শ্রীলংকারই আরেক সমুদ্রবন্দর ত্রিনকোমালির গভীরতা সাড়ে ১২ মিটার। গল সমুদ্রবন্দরটি নয় মিটার গভীর হলেও বর্তমানে বড় পরিসরে পরিচালিত হয় না এটি।

দেশটির সবচেয়ে বেশি গভীরতার সমুদ্রবন্দরগুলোর একটি বিশাখাপত্তম। বন্দরটির গভীরতা সাড়ে ১৪ মিটার। মুম্বাইয়ে জওহরলাল নেহরু সমুদ্রবন্দরের গভীরতাও ১৪ মিটার। ভারতের অন্য সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে কৃষ্ণপত্তম ও পারাদ্বীপের গভীরতা সাড়ে ১৪ মিটার করে।

এছাড়া দেশটির মান্দ্রা সমুদ্রবন্দরের গভীরতা ১৪ দশমিক ৩, চেন্নাইয়ের ১৩ দশমিক ৪, কোচিনের ১২ দশমিক ৫ ও নিউ ম্যাঙ্গালোরের ১৪ মিটার। ভারতের সবেচেয় অগভীর সমুদ্রবন্দর কলকাতার হলদিয়া। বন্দরটির গভীরতা ৮ দশমিক ৪ মিটার। যদিও অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর হিসেবেই ব্যবহার হয় হলদিয়া বন্দরটি।

এছাড়া পাকিস্তানের তিনটি সমুদ্রবন্দরের কোনোটিই সাড়ে ১২ মিটারের নিচে নয়। দেশটির সবচেয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর পোর্ট বিন কাশিমের গভীরতা ১৪ মিটার। দেশটির অন্য দুই সমুদ্রবন্দর করাচির গভীরতা ১৩ ও গোয়াদারের সাড়ে ১২ মিটার।

কিন্তু বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরের গভীরতা অনেক কম হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকায় সরাসরি কনটেইনারবাহী বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার তানজুং পেলিপাস ও পোর্ট কেলাং এবং শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরে ফিডার জাহাজে কনটেইনার আনা-নেয়া হয়। এরপর ওই চারটি বন্দরে অপেক্ষমাণ বড় কনটেইনারবাহী জাহাজে তুলে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনটেইনার পরিবহন করতে হয়।

এ হিসাবে বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরই আন্তর্জাতিক মানের নয় বলে মনে করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারকারী সমুদ্রগামী এক জাহাজ মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা চার থেকে ছয় হাজার কনটেইনারের একটি জাহাজ শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরে একদিনে আনলোড ও লোড করে ছেড়ে দেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে একটি জাহাজ খালি করে ছেড়ে দিতে তিন-চারদিন সময় নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় প্রতি ক্রেনে ৩৩-৩৫টি কনটেইনার খালি করার মানদণ্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সেখানে ১০টির মতো করতে পারছে।

এ কারণে পুরো তিনদিনের জন্য জাহাজকে বন্দরের মাশুল গুনতে হয়। এতে ব্যবসায়িকভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণও পরিত্যক্ত হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে বন্দর নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই আমাদের।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা অর্জনে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে জানান রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মূর্শেদী।

তিনি বলেন, আমরা এখন ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে ১৫-২০ দিন পিছিয়ে আছি।

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সবার আগে প্রয়োজন বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি। রফতানির ক্ষেত্রে আমরা আগে ফিডার ভেসেলে করে পণ্য পাঠাই। মাদার ভেসেল পর্যন্ত পৌঁছলে কখন ছাড়বে, তা নিয়ে ভাবতে হয়। এতে সময় যেমন নষ্ট হয়, পাশাপাশি খরচও বেড়ে যায়। তাই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের প্রয়োজন।

গভীরতার পাশাপাশি অন্যান্য অবকাঠামো দুর্বলতাও আছে বন্দরটিতে। ২০১৭ সালে এসে ২০০৭ সালের অবকাঠামো দিয়েই সেবা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিন বছর পরপর একটি জেটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও গত ৪৫ বছরে যুক্ত হয়েছে মাত্র সাতটি। জেটিতে ভেড়ার অনুমতি পেতে কনটেইনারবোঝাই একেকটি জাহাজকে ১০-১১ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেড়ে পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

যন্ত্রপাতি সংকটও কম নয় চট্টগ্রাম বন্দরে। জেটি ও ইয়ার্ডে বর্তমানে চাহিদার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট গ্যান্ট্রি ক্রেন। পণ্য ওঠানামার কাজে সর্বশেষ ২০০৬ সালে চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এরপর বারবার আশ্বাস সত্ত্বেও আর কোনো গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয়নি।

তবে সম্প্রতি প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে ছয়টি রেল মাউন্টেড কি গ্যান্ট্রি ক্রেন ক্রয়ের চুক্তি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দেড় বছরের মধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছার কথা এগুলো।

বন্দর ব্যবহারকারী ও চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, অগভীর সমুদ্রের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো মাদার ভেসেল আসতে পারে না। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য যে গতিতে এগোচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে গভীর সমুদ্রবন্দরের বিকল্প নেই। গভীর সমুদ্রবন্দর করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

দুঃখজনক হলো, আমরা বন্দরের বিদ্যমান সক্ষমতারই পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছি না। যদিও প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন বাড়ছে ১৭-১৮ শতাংশ হারে। কিন্তু এ গতিতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না। বন্দরের বিদ্যমান সমস্যা কাটিয়ে অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দরের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

তবে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, সংকট মোকাবেলায় বর্তমানে জেটি, ইয়ার্ড সম্প্রসারণসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার কাজ চলমান রয়েছে। শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবিকই দৃশ্যমান হবে প্রকল্পের অগ্রগতি।

451 ভিউ

Posted ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com