কক্সবাংলা ডটকম(২৬ জানুয়ারী) :: ভারতের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) বাংলাদেশের বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে জাল রুপি তৈরির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। হাইকমিশন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার এক সিনিয়র কর্মকর্তা।
এ কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ চক্রের কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য ও আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনার ও গোয়েন্দা উত্তর শাখার প্রধান শেখ নাজমুল আলম এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান সাজু ও গোলাম সাকলাইন সিথিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর ফার্মগেট ও রাজশাহীর শাহ মখদুমে পৃথক অভিযানে ভারতীয় জাল রুপি তৈরির মূলহোতা মাস্টার মাইন্ড জামান ওরফে দুরুদুজ্জামান বিশ্বাস তার সহযোগীকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ।
শুরুতে পাকিস্তানি জাল রুপি তৈরির কাজ করলেও ৮-৯ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানা গড়ে ভারতীয় রুপি জাল রুপি তৈরি করছে এই প্রতারক চক্রটি। প্রাথমিক তদন্তে চক্রটির জাল রুপি তৈরি, সরবরাহ ও মার্কেটিংয়ের সঙ্গে আইএসআইর সংশ্লিষ্টতার তথ্য পান গোয়েন্দারা।
ডিবি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া দেশে সবচেয়ে বড় ভারতীয় জাল রুপি তৈরির কারখানাটি চালাতেন গ্রেপ্তার জামান ওরফে দুরুদুজ্জামান বিশ্বাস। প্রতিদিন ২০ লাখ জাল রুপি তৈরি করা হতো কারখানাটিতে।
রাজশাহীর শাহমখদুম থানাধীন রায়পাড়া এলাকায় তিন রুমের একটি কক্ষ জাল টাকা তৈরির জন্য ভাড়া নেয় জামান। জাল রুপি তৈরির কাজে তার অন্যতম সহযোগী ছিল রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার জগিয়া গ্রামের তরিকুল, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার মো. জুয়েল রানা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার মাসুদ।
তারা মূলত রুপি ছাপানোর কাজ করত। আর চক্রের মূলহোতা জামান ছাপানো রুপির ফিনিশিংয়ের কাজ করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ফাঁকি দেয়াসহ কেউ যাতে সন্দেহ না করে তাই জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল দোকানের জিনিস বলে ভাড়া বাসার নিচতলাতেই ফেলে রাখত সে।
ডিবি সূত্র আরো জানায়, জাল রুপি তৈরির জন্য পাতলা কাগজ রাজধানীর নয়াবাজার ও ফকিরাপুল থেকে কিনে তা সুন্দরবন ও এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিস করে রাজশাহীতে পাঠিয়ে দিত। পরে ওই কাগজ নিজেই সংগ্রহ করে নিত জামান। জাল রুপি তৈরিতে ব্যবহৃত ফুয়েল কটন সরবরাহ করত সোহেল নামে ঢাকার এক ব্যবসায়ী। রুপি ছাপার জন্য এপসন টি ১১০০ মডেলের প্রিন্টার ব্যবহার ও দামি ১০৩ ব্র্যান্ডের কালার কার্টিজ ব্যবহার করত জামান।
রাজধানী পুরানা পল্টনের দারুস সালাম মার্কেটের মোল্লা এন্টারপ্রাইজ ও ফ্লোরা লিমিটেডের মতিঝিলের শাখা থেকে এগুলো কিনত জামান। আতাউর রহমান ভদ্র ও মনির হোসেন মনির নামের এক ব্যক্তি জামানের জাল টাকা ছড়ানোর কাজ করত। তারা জাল
রুপি সংগ্রহ করে তা সীমান্ত এলাকায় বিক্রি করত। মূলহোতা জামানের পরিবারের সদস্যরাও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার ছোট ভাই খালেদ, ভাগ্নে খাইরুল ইসলাম, শামসুল হক ও সেলিম রোজা নবী তার সঙ্গে কাজ করত। ভাগ্নে শামসুল হক প্রথমে মোবাইল মেকানিকের কাজ করলেও রাজধানীর আদাবরে জাল রুপির কারখানা দেয়।
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একবার গ্রেপ্তার হন তিনি। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এলাকায় দানবীর হিসেবেও পরিচিত ছিল জাল রুপি তৈরির মাস্টার মাইন্ড জামান।
কারখানার ভাড়া ও সহযোগীদের উচ্চ পারিশ্রমিক দেয়ার পর মসজিদ, মাদ্রাসা ও ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থ ব্যায় করত জামান। উচ্চশিক্ষার জন্য ছোট ছেলেকে চীনে পাঠানোর পরিকল্পনাও ছিল তার। রাজশাহীর ক্যান্টনমেন্ট রূপালী ব্যাংক শাখায় ও বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দুটি শাখায় তার অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে ডিবি।
Posted ২:২৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta