কক্সবাংলা ডটকম(২৪ ডিসেম্বর) :: বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের বাজারে কয়েক বছর ধরে আধিপত্য করছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল ও কোরিয়ার স্যামসাং। এদের পাশাপাশি রয়েছে চীনের কয়েকটি ব্র্যান্ড। এর মধ্যেও ব্যতিক্রম হিসেবে দেশের বাজারে শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছে স্থানীয় ব্র্যান্ড সিম্ফোনি। তবে সম্প্রতি চীনা ব্র্যান্ডগুলো এ আধিপত্যে ভাগ বসাতে শুরু করেছে।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে স্মার্টফোনের স্থানীয় বাজারে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর দখল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে দেশে স্মার্টফোনের বাজারে সিম্ফোনি এখনো শীর্ষেই রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ বাজারের ২৬ শতাংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। তবে শীর্ষে থাকলেও গত এক বছরে স্থানীয় ব্র্যান্ডটির স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ২৪ শতাংশ। বাজারের ১৪ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড স্যামসাং।
চীনা বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হুয়াওয়ের দখলে রয়েছে বাজারের ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় আরেকটি ব্র্যান্ড ওয়ালটন। বাজারের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ তাদের দখলে। দেশের বাজারে শীর্ষ পাঁচ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের তালিকায় রয়েছে আরো একটি চীনা ব্র্যান্ড, আইটেল। তাদের দখলে রয়েছে বাজারের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
এ হিসাবে সামগ্রিকভাবে স্থানীয় বাজারের ২৯ শতাংশ দখলে নিয়েছে চীনা ব্র্যান্ডগুলো। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের বাজার দখল বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনা ব্র্যান্ডের দখলে ছিল বাজারের ১৩ শতাংশ।
যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গত দশকের শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেলফোন। নানা সুবিধাসংবলিত সেলফোন হ্যান্ডসেটের প্রতি গ্রাহকদের আকর্ষণ কম নয়।এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় স্মার্টফোনের চাহিদা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আর এতে স্মার্টফোনের বাজারে বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাশাপাশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ কিছু দেশীয় ব্র্যান্ডও।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, থ্রিজি সেবা চালুর পর দেশে স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সুবিধাসংবলিত স্মার্টফোনের দাম আগের তুলনায় কমে আসায় এ ধরনের হ্যান্ডসেটের বিক্রি বাড়ছে। দেশের ক্রেতারা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সর্বোচ্চ সুবিধাসম্পন্ন হ্যান্ডসেট কিনতে আগ্রহী। বাজারে এ ধরনের হ্যান্ডসেটের সরবরাহ বেড়েছে।
তবে চলতি বছরের জুনে হ্যান্ডসেটের ওপর কর বাড়ানোয় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পণ্যটি বিক্রিতে।
এছাড়া লং টার্ম ইভল্যুশন (এলটিই) প্রযুক্তির হ্যান্ডসেট কিনতে আগ্রহী ক্রেতাও রয়েছে, যাদের আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে দেশে সেবাটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হ্যান্ডসেটের ব্যবহার ও বিক্রি প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উত্পাদন কারখানা স্থাপনে উত্সাহ দিচ্ছে সরকার। এজন্য গত আগস্টে খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ক্যাটাগরি ‘এ’ ও ক্যাটাগরি ‘বি’ দুই শ্রেণীতে হ্যান্ডসেট সংযোজন, উত্পাদন ও বাজারজাতের সনদ দেবে বিটিআরসি।
‘এ’ শ্রেণীর সনদ নিতে ফি ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। নবায়ন ফি ১০ লাখ টাকা। আর ‘বি’ শ্রেণীর সনদের ফি ২৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে নবায়ন ফি ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে বছরে তিন কোটি হ্যান্ডসেট বৈধ পথে আমদানি হয়। এর বাইরে আরো প্রায় অর্ধকোটি হ্যান্ডসেট আমদানি হয় অবৈধ পথে। প্রতি বছর হ্যান্ডসেট আমদানিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে খাতটির।
অপারেটর ও আমদানিকারকদের হিসাবে, স্মার্টফোন ও সাধারণ ফোন মিলিয়ে দেশে বর্তমানে নয় কোটি সেলফোন হ্যান্ডসেট রয়েছে। এর মধ্যে আড়াই কোটি স্মার্টফোন। ২০২০ সাল নাগাদ স্মার্টফোনের ব্যবহার আরো ১০ শতাংশ বাড়বে।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিক্রি হওয়া তিন কোটি ইউনিট সেলফোন হ্যান্ডসেটের মধ্যে স্মার্টফোন বিক্রি হয় ৮০ লাখের বেশি। এ হিসাবে গত বছর বিক্রি হওয়া ফোনের মধ্যে স্মার্টফোনের পরিমাণ ২৬-২৭ শতাংশ। আগের বছর দেশের বাজারে ৬০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল।
Posted ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta