সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যু বেশি

রবিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৭
615 ভিউ
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যু বেশি

কক্সবাংলা ডটকম(১৩ আগস্ট) :: পরিবারে সম্পর্কের অবনতিতে ৯ আগস্ট আত্মহননের পথ বেছে নেন রাজশাহীর এক স্কুলশিক্ষিকা। এর তিনদিন আগে নাটোরের সিংড়ায় স্কুল থেকে বের করে দেয়ার অপমানে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এভাবে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আত্মহত্যার এ ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে (বিএইচআইএস)-২০১৬-এর তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৬৬ দশমিক ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয় আঘাতজনিত কারণে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় আত্মহত্যার ফলে। প্রতি এক লাখে ১৪ দশমিক ৭ জন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ দশমিক ৪ জন, পানিতে ডুবে ১১ দশমিক ৭, উঁচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে ৯ দশমিক ৪, বিদ্যুত্পৃষ্ট হয়ে ৫ দশমিক ৭ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে চারজন মানুষের মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। বয়সের কারণে তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। মানসিক আঘাত পেলে যুক্তির চেয়ে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় তারা।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘মেন্টাল হেলথ স্ট্যাটাস অব অ্যাডলসেন্টস ইন সাউথ-ইস্ট এশিয়া: এভিডেন্স ফর অ্যাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এক বা একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ ছেলে ও ৬ শতাংশ

মেয়ে। একইভাবে নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ আত্মহত্যার কল্পনা করে ৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী। আর কল্পনায় আত্মহত্যার বিষয়টি ঘুরপাক খায় ৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর।

এ বিষয়ে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক ক্ষতি, মা-বাবার ওপর অভিমান এবং মানসিক চাপে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা কম এমন মানুষরাই আত্মহত্যার পথে ঝোঁকে বেশি।

এছাড়া অবিবাহিত, বিপত্নীক, বিধবা, বেকার, দীর্ঘমেয়াদি বা দুরারোগ্য শারীরিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। প্রিয় কারো মৃত্যুশোকও আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলতে পারে ব্যক্তিকে। শারীরিক-মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরাও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, মাদকাসক্তি আত্মহত্যার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। মাদকাসক্ত আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই আত্মহত্যা করার ঝুঁকি বেশি।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে দরিদ্র ও কৃষকদের মধ্যেও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো ঋণ পরিশোধ করতে না পারা। শহরের চেয়ে গ্রামে এবং পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। গ্রামের বাড়িতে সাধারণত কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য কীটনাশকের মজুদ থাকে। সে কারণে গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি হয়।

আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারাহ দীবা বলেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে হতাশার কোনো না কোনো বিষয় থাকছেই।

নগরকেন্দ্রিক জীবনে দিনের শেষে মানুষের আর কিছুই করার থাকছে না। বর্তমানে সবাই অনেক ব্যস্ত। পরিবারকে বাঁচাতেই কিন্তু সবার এ ব্যস্ততা। আর ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সময় দেয়া হচ্ছে না, মানুষের মধ্যে একাকিত্ব বাড়ছে। হতাশা ও একাকিত্বের কারণে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। তরুণরা ধরেই নিচ্ছে তাদের ভবিষ্যত্ বলে কিছু নেই।

তারা কেন এটা ভাবছে, সেটা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। তবে তরুণদের পাশাপাশি বয়স্কদের কথাও ভাবতে হবে। জীবনের একটা পর্যায়ে যাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা হয়তো নেই, কিন্তু তারাও অনেক হতাশ। আত্মহত্যার বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এটি নিয়ে এখন সবাইকে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে, ২০১১ সালে ৯ হাজার ৬৪২, ২০১২ সালে ১০ হাজার ১০৮, ২০১৩ সালে ১৬ হাজার ২৮ ও ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৭১৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এ আত্মহত্যাকারীদের একটা বড় অংশ কিশোর-কিশোরী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটার পর আমরা আত্মহত্যার খবর জানতে পারি। তখন আর কিছুই করার থাকে না। তবে কখনো কখনো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি বা কিশোর-কিশোরীকে চিহ্নিত করি এবং তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করি। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে নারী ও শিশুদের জন্য আমাদের বিশেষ ইউনিট থেকেও এ বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হয়।

শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই আঘাতজনিত মৃত্যুর মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে ৫৮ লাখ মানুষ আঘাতজনিত কারণে মারা যায়। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় এর এক-চতুর্থাংশ, ১৬ শতাংশ আত্মহত্যা করে এবং ১০ শতাংশ খুন হয়।

615 ভিউ

Posted ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com