কক্সবাংলা ডটকম(২৪ ডিসেম্বর) :: বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধীরে ধীরে ‘বায়ার নেভি’ থেকে ‘বিল্ডার নেভি’তে পরিণত করার আশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ মিডশিপম্যান পরিদর্শন ও বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একদিন যুদ্ধজাহাজ রফতানি করব ইনশাআল্লাহ। খবর বাসস।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের সময়ে এসেই দেশে নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে দেশীয় প্রযুক্তিতে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মিত হচ্ছে। গত মাসে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত দুটি সাবমেরিন বিধ্বংসী লার্জ প্যাট্রল ক্রাফট ‘দুর্গম’ ও ‘নিশান’ নৌবহরে কমিশন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জলসীমায় নজরদারি বাড়াতে আরো মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে এভিয়েশন সুবিধাসংবলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহত্ নৌঘাঁটি ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া সাবমেরিনের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেটি সুবিধা প্রদানের জন্য কুতুবদিয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সন্দ্ব্বীপ চ্যানেলে জাহাজ বার্থিং সুবিধাসংবলিত ফ্লিট সদর দপ্তরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর ফলে সমুদ্র এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা আরো জোরদার হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সি, ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সম্পদের অধিকার লাভ করেছি।
এ সমুদ্রসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরিতে নৌবাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমায় রয়েছে মত্স্য, খনিজ তেলসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ। জাতীয় অর্থনীতিতে এ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। এ সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কার্যপরিধি অনেক বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গোড়াপত্তন ও আধুনিকায়নে জাতির পিতার ভূমিকা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই ১৯৬৬-এর ৬ দফায় পূর্ববঙ্গে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় থেকেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খাঁ কমিশন করেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি দক্ষ নৌবহর গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সাবেক যুগোস্লাভিয়া ও ভারত থেকে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে তিনি দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন।
ক্যাডেটদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে তোমরা সর্বদা ঊর্ধ্বতনদের প্রতি আনুগত্য ও অধস্তনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে। চেইন অব কমান্ড মেনে চলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্ব দরবারে আরো গৌরবোজ্জ্বল আসনে অধিষ্ঠিত করবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে তিন বছরের প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী ক্যাডেটকে সোর্ড অব অনারও প্রদান করেন তিনি। ২০১৫ ব্যাচের সোহানুর রহমান সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘সোর্ড অব অনার’ নেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মিডশিপম্যান সীমান্ত নন্দী আকাশ ‘নৌবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ ও অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট এজেডএম নাসিমুল ইসলামকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে পৌঁছলে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আবু আশরাফ তাকে স্বাগত জানান।
এদিকে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলিত হয়ে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা তুলে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের সমবেদনা জানান। চশমাহিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় প্রায় ৩৫ মিনিট অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী।
Posted ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta