রতন মালো,ঢাকা(২৮ মার্চ) :: কোন কোন গ্রামে যেয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার ফেলে দিচ্ছে। কোথাও যেয়ে বলতেছে দুধ খাওয়া যাবে না। আর কান ধরে ওঠবস করানো একটা স্কুল শিক্ষা। আজ ধরে ধরে লাঠিপেটা করে ঘরে ঢুকাচ্ছে, কাল দেখবেন, ঘর থেকে টেনে হিছড়ে বের করে গিলোটিনে দিচ্ছে। প্রশাসনের রূপ বিশ্বজুড়ে এমনই। ব্রিটিশরা এটিই আমাদের মাথায় দিয়ে গেছে। প্রশাসক মানেই লাঠি। এজন্যই হয়তো পুলিশ সুপারে হাতে ছোট্ট একটা লাঠি থাকে! ‘প্রশাসক’ শব্দটার মধ্যেই তো কান ধরে ওঠবস করানো কেউ একজন আছে। ফেইসবুকে এ নিয়ে আমার আক্ষেপের কিছু নাই। কারণ জিনিসটা নিত্তনৈমিত্তিক বিষয়। প্রতিদিন পর্যুদস্ত হচ্ছে সবলের কাছে দূর্বল। দেশে বিদেশে সবখানে।
তবে এই বাংলার জীবন যুগ যুগ ধরে সহজীয়া পথেই চলেছে। ওলা ওঠা, কলেরা, ডায়রিয়ায় কতশত মানুষ মরে গেছে তার ঠিক নাই। এসব হলে গ্রামগঞ্জের মানুষের আসলে কোন চিন্তাই হয় না। সামান্য অসুখই এটা। পোলাপানরে দুই একদিন ঘরে আটকে রাখা। আবার যা, তাই। আমার বাবার একটা জমজ ভাই ছিলো। শুনেছি সে ১৯৪০-৪৫ এর দিকে কলেরায় মারা গেছে। ৬ ভাইয়ের মধ্যে একজন মারা গেছে। গ্রামের লোকজন বললো, বাকি ৫ টা তো বাইচা আছে! ১ টা মরছে তাতে সমস্যা নাই।
আমার দাদা শশুর। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৭৫! এখনো টন টন করে ঘুরে বেড়ায়। গ্রামের বিচার শালিশ করে। ভাঙা সংসার জোড়া লাগায়।
গতকাল উনি, বললো মানুষের মধ্যে আসলেই ভয় ঢুকছে, করোনার ভয়। আমি বললাম তুমি কি ভয় পাচ্ছো দাদু? বলে খুব বেশি না। জিজ্ঞাসা করলাম বাইরে যাও? বললো, তা, ও মাঝে মধ্যে যাই একটু আধটু! বললাম যাইও না। বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। বিকাল বেলায় শুনি পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে কেমন আছে দেখতে। বাংলার জীবনতো এমনই ভাই। ওনার ছেলেরা আছে। খাওয়া পড়া দেয়। কিন্তু ষাটোর্ধ অনেক মানুষই এখনো রিকশা চালিয়ে ক্ষুন্নিবারণ করে। তাদেরকে ঢাকায় পুলিশ অহরহ পেটায়। কিল ঘুষি মারে। অপদস্থ করে। আমি আপনি শুধু হাটি ঘর ছেড়ে। মাটি ছাড়া লতার মতন। এই অফিস সেই অফিস। সরকারি বেসরকারি। সুন্দর শেকড় ছাড়া স্বর্ণলতার মতন।
আর ওই যে প্রশাসন! শব্দটা বড় শক্ত। লাঠির মতন। সহজীয়া জীবনের কোন কিছুই আর তা জানা নাই। তার মধ্যে ঢুকে গেছে ইট, পাথর, টাকা, একদুই টাকা না- হাজার কোটি টাকার হিসাব। ঘুষফান্ড, প্রোমোশন, বিদেশবিহার, বড়বড় কাইকারবার। এসব সহজীয়া জীবন থেকে বহু দূরে। তবে প্রশাসনে যে সহজীয়া জীবনঘেসা পরিবারের লোক নাই তা না। তবে হাতে গোনা। আর থাকলেও, তারা চাকুরির কয়েক বছর পার হলেই বেমালুম ভুলে যায় শেকড়। করোনায় ছুটি পেয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাড়ি ফেরা। বিষয়টা আমার কাছে খুব বেশি অবাক করার না। এদেশের জন্য খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু এদেশের শিক্ষা, সরকারি বেসরকারি উঁচু পদস্থ লোকদের মনন খুব কমই বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবার সময় এসেছে যার যার জাতির নিজস্বতার দিকে ফিরে তাকানোর। পরিবারের সাথে একান্তে সময় কাটানোর। বাইরে যেতে যেতে আমরা শেকড়হীন স্বর্ণলতা হয়ে গেছি। এবার সময় এসেছে নিজের মাটিতে ভালো করে শেকড় বসানো। তারপর যেথায় খুশি সেখানে যাও।
লেখক : রতন মালো,ইউএনবি,ঢাকা
Posted ৪:২৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৮ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta