রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিএনপির রাজনীতি সংকটে

শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
280 ভিউ
বিএনপির রাজনীতি সংকটে

কক্সবাংলা ডটকম(১১ অক্টোবর) :: বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিএনপির রাজনীতি ও দলের নেত্বত্বে কি কোনো প্রভাব পড়বে? এমনকি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনের পথেও কি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে? চৌদ্দ বছর পর বুধবার নৃশংস এ হামলার মামলার রায়ে দেশজুড়ে জনমনে, রাজনৈতিক অঙ্গন ও সুশীল সমাজে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় দলের শীর্ষ পদে তার থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় রাজনীতিতে এই রায় খুব একটা প্রভাব না ফেললেও বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। সংকটে পড়বে দলটি।

মামলার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়। জনগণ এ রাজনীতি চায় না।

রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কেউ কেউ বলছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ডিত হওয়ায় বিএনপি এখন নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। নির্বাচনী মাঠে দুই শীর্ষ নেতা নেতৃত্ব দিতে না পারলে নেতৃত্ব সংকটে পড়বে দলটি।

আবার কোনো কোনো বিশ্নেষক বলছেন, তারেক রহমান ইতিমধ্যে বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হয়েও দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাজেই নতুন করে এ মামলার রায়েও বিএনপিতে তার নেতৃত্ব নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে না। অবশ্য একই সঙ্গে নেতৃত্বে থাকায় ‘নৈতিকতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একুশে আগস্টের খুনি হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত হন, সে দলের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীরা কীভাবে জাতীয় ঐক্য করেন? জনগণ এ ঐক্য কোনো দিনই গ্রহণ করবে না।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক রায়। এ রায় দলের রাজনীতি, নেতৃত্ব এবং জাতীয় ঐক্যে কোনো প্রভাবই পড়বে না। তবে নাম প্রকাশ না করে দলের অল্পসংখ্যক নেতা এ রায়ে দলে সুদূরপ্রসারী কিছুটা প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ রায়ে তারা হতাশ ও বিব্রত। এ কলঙ্কের বোঝা তাদের দীর্ঘদিন ধরেই বইতে হবে। যদিও প্রকাশ্যে তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কথা বলছেন, তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।

এ বিষয়টি তারা যতই অস্বীকার করুক না কেন- জনগণকে এটি বোঝানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যতদিন উচ্চ আদালত থেকে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাসহ অন্য নেতারা নির্দোষ প্রমাণ না হবেন, ততদিনই বিএনপিকে এর দায় বহন করে যেতে হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে অনেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানের থাকার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। তবে আপাতত তারা এ রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বলেই দাবি করে এর প্রতিবাদ জানানোর কৌশল নিয়েছেন। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তারা আশা করেন, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই রায়ে বিএনপির রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। দেশবাসী জানে, এই রায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম প্রথম চার্জশিটে ছিল না। পরে সরকারের নির্দেশে যুক্ত করা হয়েছে। এটা সরকারের ফরমায়েশি রায়। এ রায়ের মাধ্যমে সরকার আরেকটি নোংরা রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এটি বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২১ আগস্টের খুনি, মাস্টারমাইন্ড ও প্ল্যানার তারেক রহমান যাবজ্জীবন কারাদম্যোন, সেই খুনি দলের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী কোন নৈতিকতায় তথাকথিত জাতীয় ঐক্য করছেন? খুনিদের সঙ্গে করা জাতীয় ঐক্য জনগণ কোনোদিনই বিশ্বাস করবে না, সমর্থন এবং গ্রহণও করবে না।

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐক্যের অন্যতম উদ্যোক্তা গণফোরাম সভাপতি ও গণতদন্ত কমিশনের সাবেক প্রধান ড. কামাল হোসেন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বুধবার যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার প্রতিক্রিয়া দেবেন।

যোগাযোগ করলে তিনি আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঐক্যের আরেক উদ্যোক্তা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে এ রায় কোনো প্রভাব পড়বে কি-না, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অবশ্য জাতীয় ঐক্যের অন্যতম উদ্যোক্তা ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, এটা খুব স্বাভাবিক, এ ধরনের একটি জঘন্য হিংসাত্মক কাজ রাজনীতিতে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে মামলার বিচারের রায় সম্পর্কে মতামত দেওয়ার এখনও সময় আসেনি। সর্বোচ্চ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে। কাজেই ওই পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট করার ব্যাপারে কোনো নৈতিকতার প্রশ্ন উঠবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত এ রায়ে ঐক্য গড়ার পথে তেমন কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটানো হয়। এই হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা। ১৪ বছর আগের সেই লোমহর্ষক ঘটনার মামলার রায়ের প্রভাব কী হবে বাংলাদেশের রাজনীতি বা বিএনপির রাজনীতিতে?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ড. দিলারা চৌধুরী বলছেন, রাজনীতিতে তার মতে এই রায়ে বাড়তি কোনো প্রভাব ফেলবে না। তার মতে, তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলায় দি দলের মধ্যে যে গভীর তিক্ততা তৈরি হয়েছে, সেটি কাটবে কি-না সন্দেহ আছে। হত্যাকাে র মধ্য দিয়ে একটা দল যদি আরেকটি রাজনৈতিক দলের মূল উৎপাটন করতে চায়- তার রাজনৈতিক দল তো সেটা ভুলে যাবে না।

বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাজা হওয়ার পর অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, ওই হামলার নৈতিক দায় কি বিএনপি এড়াতে পারে? ২০০৪ সালের বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলেই ঘটেছিল এ বর্বরোচিত হামলা। ঘটনায় ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নিহত এবং কয়েকশ’ আহত হন। তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক। ছয়বার পরিবর্তন হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তা। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার এমন নীলনকশা ইতিহাসে নজিরবিহীন বলা হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে। এর পরও এ দায় বিএনপি কীভাবে এড়াবে?

অবশ্য এ ঘটনার দায় বিএনপির ওপর বর্তায় না বলে দাবি করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। তাকে জড়ানো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। তারেক রহমানের জড়িত থাকার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তারপর ২০০৯ সালের পর কী হয়েছে- সেটা দেখতে হবে। আগে এফবিআই ও ইন্টারপোলের প্রতিবেদনে তার নাম আসেনি। এ ঘটনার বিচারের জন্য বিএনপি সরকার সব ধরনের চেষ্টা করেছে। সে সময় আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করেনি।

অবশ্য বাংলাদেশে বড় কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব স্বীকার করে নেওয়ার সংস্কৃতি নেই বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা। তিনি বলেছেন, এ ঘটনার দায় বিএনপি এড়াতে পারে না। বিএনপি তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হলে পিছিয়ে থাকে। পিছিয়ে থাকলেও এক ধরনের ‘সহযোগিতা’ হয়। জনমনে বিশ্বাস তৈরি হওয়ার মতো কাজ দেখাতে হয়।

280 ভিউ

Posted ২:৪৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com