প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে জানাতে গতকালের এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১ ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সরকারের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে আসা প্রতিটি দলেরই কর্তব্য। আর যে দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা নিজ দলের অভ্যন্তরে এর চর্চা করে না। তারা নির্বাচন করবে কি করবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। এতে সরকারের কিছু করার নেই।
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের মধ্যে ভদ্রতাজ্ঞান নেই, তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমার মনে হয়, বিএনপি গতবারের মতো ভুল আর করবে না, নির্বাচনে আসবে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পরও দেশের স্বার্থে তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এবার নির্বাচনে না এসে আগুন সন্ত্রাস করলে জনগণই জবাব দেবে। জনগণই ব্যবস্থা নেবে।
আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় যেকোনো সময়ই নির্বাচন হতে পারে। তবে আমরা এমন কোনো দৈন্যদশা বা সমস্যায় পড়িনি যে, আগাম নির্বাচন দিতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে উন্নয়ন কাজগুলো করে গিয়েছিলাম, তারপর আর এগোয়নি। ২০০৮-এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-১৭ পর্যন্ত যে উন্নয়ন আমরা করেছি, এত অল্প সময়ের মধ্যে তা কেউ করতে পারেনি। আমাদের সে উন্নয়নগুলো এগিয়ে নিতে চাই।
উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগ সরকারকে দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে সুষম উন্নয়ন চলছে। উন্নয়ন চলছে সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী। এর সুফল ভোগ করছে সবাই। দেশের মানুষ যদি সত্যিই উন্নয়ন চায়, তবে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে তারা বেছে নেবে। বরং আরো নতুন নতুন আসন আমরা পাব, এটা আমি আশা করি।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেছে। একটা কমিটি করা হবে, তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মিয়ানমার যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, আমি চাই, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সদ্ভাব থাকুক। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে।
এ সময় আরেক প্রশ্নের জবাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সুয়োমোটো ঘোষণা দিয়েছেন, তা কারো কাছে, মুসলিম বিশ্বের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ জেরুজালেম প্রশ্নে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত আছে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে এভাবে অগ্রাহ্য করা কেউই মেনে নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনের একটা অধিকার রয়েছে। তাদের একটা নিজস্ব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে। নিজস্ব রাষ্ট্র হতে হবে। ১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনের যে সীমানাটা ছিল, ইস্ট জেরুজালেম যেটা তাদেরই জায়গা, সেটাই থাকা উচিত। এর বিরুদ্ধে একতরফাভাবে কিছু করা মানে সারা বিশ্বে শান্তি নষ্ট করা।