কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৭ ডিসেম্বর) :: বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠেছে। সমুদ্র সৈকত,বিপণী কেন্দ্রসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের কোলাহলে প্রাণচাঞ্চল হয়ে ওঠেছে।আর চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষ পক্ষকাল পর্যটকদের আনাগোনায় জমজমাট থাকবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।
কক্সবাজারের কলাতলী কেন্দ্রীক হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা জানান,বিজয় দিবসের ছুটিতে ইতোমধ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেলের প্রায় সমস্ত কক্ষ ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর, ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকড হয়ে গেছে। এখন বাকী দিনগুলোরও চলছে বুকিং। আশাকরি এ অবস্থা কয়েকমাস বহাল থাকবে। এছাড়া প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষে ছুটির দিনগুলোতে অবকাশ যাপনের জন্য দলে দলে হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন।
আর লাখ লাখ পর্যটকের কক্সবাজার আগমনকে পুঁজি করে যথারীতি গলাকাটা ব্যবসা ফেঁদেছেন ব্যবসায়ীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফালোভী হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিকরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রুম ভাড়া চারগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।শহরে প্রায় সকল প্রকার পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরাও।
এদিকে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ঝর্ণা হিমছড়ি, ইনানি, রামু বৌদ্ধ মন্দির, রামকোট, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির,কানাইরাজার সুড়ঙ্গ, কুদুম গুহা, টেকনাফের গেম রিজার্ভ, সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এখন পর্যটকে মুখরিত। এতে করে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা পর্যটন শিল্প আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
রবিবার দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম এই সৈকতটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। সমুদ্র সৈকতে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক সাগরে গোসল এবং বালুরচরে শিশুদের খেলাধূলায় ব্যস্ত দেখা গেছে।
এছাড়া দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি ছিল বিদেশি পর্যটকরাও। পর্যটকদের উপলক্ষ করে চালু হয়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ পর্যটন রিসোর্ট সেন্টমার্টিনের চলাচলকারী জাহাজগুলোও।
ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক ঢাকার শিব শংকর মোদক,চট্রগ্রামের লিটন ও রাজীব জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারের সাগরপাড়ে রাত কাটাতে বেশ ভালোই লাগছে। কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও ইনানী পাথুরে সৈকত, হিমছড়ি আদিনাথ মন্দির ও সেন্টমার্টিন’র পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।তবে থাকা,খাওয়া,কেনাকাটা ও ভ্রমনে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেন তারা।এব্যাপারে প্রশাসনকে আরও কঠোর ও নজরদারী বাড়ানোর আর্জি জানান।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক শফিকুর রহমান কক্সবাংলাকে জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে চার শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ পর্যটকে ভরে গেছে। গেল তিনদিনে প্রায় দুই লাখ পর্যটক এসেছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ভরপুর থাকবে পর্যটক। শীত মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বেশি ঘটে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল সী-গাল এর সিইও রুমী কক্সবাংলাকে জানান,সীমান্তে রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকেই আমাদের হোটেলে প্রচুর বিদেশী এনজিও কর্মকর্তা রয়েছেন।এছাড়াও তারকা হোটেলগুলোতে প্রতিদিন বিদেশী পর্যটক আসছেন।আর বিজয় দিবস থেকে থার্টিফাস্ট নাইট পর্যন্ত আমাদের হোটেলে অনেক আগেই বুকড হয়ে আছে।
কক্সবাজার সৈকত কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের মতো ডিসেম্বর মাস বিজয় দিবসের ছুটিতে সৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি বেশ ভালো। আর পর্যটকেরা সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগের জন্য চেয়ারে বসলে হকার কিংবা টোকাই যাতে উৎপাত করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া খান কক্সবাংলাকে জানান, পর্যটকদের জন্য আমরা সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি। পর্যটকদের উপলক্ষ করে অনেকদিন পর চালু হয়েছে প্রবাল দ্বীপ পর্যটন রিসোর্ট সেন্টমার্টিনের চলাচলকারী জাহাজগুলোও। এ কারনে বিগত সময়ের তুলনায় বেড়েছে পর্যটক।
নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতার দায়িত্বে নিয়োজিত ইয়াসির লাইফ গাইড স্টেশন পরিচালক মোস্তাফা কামাল কক্সবাংলাকে জানান,সাগরে গোসল করতে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতের সী ক্রাউন, সী ইন, সী-গাল ও লাবণী পয়েন্টে লাইফগার্ড কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।
কক্সবাজার রিজিয়ন এর ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান কক্সবাংলাকে জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামে কক্সবাজার সৈকতে। সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। গত শুক্র,শনি ও রবিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম লক্ষ করা গেছে। সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়েছে। যেকোন মূল্যে পর্যটকদের নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আলী হোসেন কক্সবাংলাকে জানান, জেলা প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কক্সবাজারে এসে পর্যটকরা যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন এবং হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য বেশ কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ছিনতাই, বখাটেদের উৎপাত ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় আছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন কক্সবাংলাকে বলেন,পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।দর্শনীয় স্থান ও বিপণিকেন্দ্র গুলোতেও পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া চুরি, ছিনতাই এবং ইভটিজিং ঠেকাতেও পুলিশ সতর্কাবস্থানে রয়েছে।
Posted ১২:২৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta