সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিশ্বজিৎ হত্যা : আট আসামির মধ্যে শুধু দু’জনের ফাঁসি বহাল

রবিবার, ০৬ আগস্ট ২০১৭
465 ভিউ
বিশ্বজিৎ হত্যা : আট আসামির মধ্যে শুধু দু’জনের ফাঁসি বহাল

কক্সবাংলা ডটকম(৬ আগস্ট) :: পুরান ঢাকায় দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং অপর দু’জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দু’জন আপিল করেছিলেন তারা খালাস পেয়েছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাকি পলাতক ১১ আসামির ব্যাপারে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি।

ময়নাতদন্ত করার ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. মাহফুজুর রহমানের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা- তা তদন্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ডেন্টাল কাউন্সিলকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ আদেশ ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা- তা মানবাধিকার বিষয়ের আইনজীবী মনজিল মোরসেদকে সময়ে সময়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া লাশের সুরতহাল করার ক্ষেত্রে সূত্রাপুর থানার এসআই জাহিদুল হকের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা- তাও তদন্ত  করে আইজিপিকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায়ের পর বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত কুমার দাস বলেন, আমরা কী যে দুঃখ পেয়েছি, তা বলার মতো নয়। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এ জাতীয় ঘটনা ছাত্র রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। কারণ তারাই ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন হলেন রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদার। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৪ জন হলেন- মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, জিএম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, নূরে আলম ওরফে লিমন, ইমদাদুল হক এমদাদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে খালাস পেয়েছেন কাইয়ুম মিয়া ও সাইফুল ইসলাম। যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা ও এএইচএম কিবরিয়াকে খালাস দেয়া হয়েছে।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর রোববার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলায় নিন্ম আদালতের দেয়া সাজা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হয়তো সুরতহাল বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অজ্ঞতা বা গাফিলতি ছিল। অথবা সাক্ষী দুর্বল বা বাদীপক্ষের আইনজীবী জোরালো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে আঘাতের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষীদের বর্ণনার মিল পাননি আদালত।

এ ব্যাপারে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, হাইকোর্টের রায় সর্বশেষ রায় নয়। তবে তদন্তে গাফিলতির কারণে বিচারে প্রভাব পড়েনি বলে মনে করেছেন আদালত, তাই আদালত রায় দিয়েছেন। যদি আদালত মনে করতেন গাফিলতি বা অবহেলার কারণে বিচারে প্রভাব পড়বে, তাহলে আদালত পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিতেন।

রোববার জনাকীর্ণ আদালতে বেলা পৌনে এগারোটা থেকে রায় পড়া শুরু করেন আদালত। দুপুর একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত  এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দীর্ঘ রায় পাঠ করেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস। সকাল থেকেই গণমাধ্যমের কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, ছাত্র রাজনীতির নামে তারা চাঁদাবাজি, হত্যা, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ছাত্র রাজনীতিতে মাদক এবং অস্ত্র বিরূপ প্রভাব ফেলছে।  ফলে কোনো কোনো সময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা হিংস  ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। কিছু রাজনৈতিক নেতা এ ব্যাপারে প্রণোদনাও দিচ্ছেন। তারা মনে করেন এতে তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি সমৃদ্ধ হবে। যদি সাধারণ শিক্ষার্থীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করেন তবে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ রকম ঘটনাও দেখা গেছে যে, পরীক্ষার হলে নকল করতে না দেয়ায় দায়িত্বরত শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। এটি ছাত্র রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। কারণ তারাই ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে।

আদালত বলেন, বিশ্বজিৎ কোনো রাজনৈতিক দল করত না। সে ছিল নিরস্ত্র এবং নিরীহ। এই হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত না হলেও হামলাকারীদের উন্মত্ত আক্রমণেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। সাক্ষ্য এবং ভিডিও চিত্রে বিশ্বজিতের শরীরে একাধিক আঘাতের উল্লেখ থাকলেও মামলার সুরতহাল, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে একটি মাত্র আঘাতের কথা এসেছে। তবে প্রতিবেদন দুটিতে আঘাতের স্থান নিয়ে গরমিল রয়েছে।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, একটি অস্বচ্ছ বা ভ্রান্ত তদন্ত সমাজকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে এবং সমাজে এ ধরনের অপরাধ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে পারে। ফলে ন্যায়বিচারের স্বার্থেই এ দুটি (সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত) বিষয়ে অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন। যারা বা যিনি সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তারা তাদের কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা বা গাফিলতি করেছেন কিনা সেটিও অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিশ্বজিতের লাশের সুরতহাল করার ক্ষেত্রে সূত্রাপুর থানার এসআই জাহিদুল হকের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা- তা তদন্ত করে আইজিপিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত তারা পূর্ণাঙ্গ রায় দেখার পর নেবেন।

হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিয়া এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম শাকিলের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, খালাসপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম এবং কাইয়ুম মিয়ার অপরাধ সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়নি।  ফলে তারা খালাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, এ মামলায় চাক্ষুষ কোনো সাক্ষী নেই। ভিডিও ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে সাজা দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম শাকিল বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করেছিল। ফলে তিনি সর্বোচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।

খালাস পাওয়া গোলাম মোস্তফার আইনজীবী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালত অন্য এক অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই গোলাম মোস্তফাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। ফলে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।

বিচার পরিক্রমা :

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এছাড়া বেআইনি সমাবেশের আরেকটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই ১৩ জনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

যেভাবে হত্যা :

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেস্বর গ্রামের তরুণ বিশ্বজিৎ পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারে একটি দর্জি দোকানে কাজ করতেন। ঘটনার দিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছ দিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন।

সাক্ষীদের জবানবন্দিতে বলা হয়, ওইদিন বাহাদুর শাহ পার্কের পাশ দিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল যাওয়ার সময় বোমা বিস্ফোরণ হলে সবাই যখন পালাচ্ছিল, তখন পলায়নরত বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করে তার ওপর হামলা চালানো হয়।

সাক্ষী রিকশাচালক রিপন রায় হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় বলেন, বোমার শব্দে এক ব্যক্তি (বিশ্বজিৎ) পার্কসংলগ্ন পেট্রুল পাম্পের দিকে দৌড় দেয়। মিছিল থেকে ধাওয়া করে কয়েকজন ওই ব্যক্তিকে মারতে থাকে। ওই ব্যক্তি মার খেতে খেতে পাশের ভবনে উঠে যান। লোকগুলো সেখানেও তাকে চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মারতে থাকে। এরপর তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে নিচে নেমে শাঁখারিবাজারের গলির মুখে গিয়ে পড়ে যান। তখন পানি চাইলে পাশের এক দোকানি পানি খাওয়ান। পরে রিপনের রিকশায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বজিৎকে, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রায়ে বিশ্বজিতের পরিবারের বিস্ময় :

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামির ছয়জনই আপিলে রেহাই পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্বজিৎ দাসের পরিবারের সদস্যরা। রায়ের আগে পরে বিশ্বজিতের বাড়িতে আত্মীয়স্বজনদের ভিড় লেগে যায়। টেলিভিশনের সামনে বসে রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বিশ্বজিতের মা কল্পনা রানী দাস ও বাবা অনন্ত দাস। তারা নিহত বিশ্বজিতের স্মৃতি নিয়ে বিলাপ করতে থাকেন।

রায় শোনার পর বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত দাস বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। আমরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। সারাদিন না খেয়ে রায় শোনার অপেক্ষায় ছিলাম। এই রায় শুনে খাব কী করে? আমরা সরকারের কাছে নিন্ম আদালতের রায় বহাল রেখে খুনিদের শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

বিশ্বজিতের মা কল্পনা রানী দাস বলেন, আমার বিশ্বজিৎকে যারা প্রকাশ্যে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের শাস্তির রায় আমি যেন দেখে যেতে পারি। উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা খুশি হতে পারিনি। আগের রায়েই বহাল হোক।
বিশ্বজিতের ভাই উত্তম কুমার দাসের প্রশ্ন আটজন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির মধ্যে দু’জন খালাস পেল! তা কী করে হয়।

465 ভিউ

Posted ৬:০৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com