মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(৩ জুলাই) :: মিয়ানমার ঘাতক সামরিক জান্তার নিশ্চিত হত্যাকান্ডের কবল থেকে রক্ষায় আশ্রয় পাওয়ার জন্য প্রাণ রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে রোহিঙ্গারা আজীবন ঋনি হয়ে থাকবে। তাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে। এখানে ইচ্ছামতো চলাফেরা করার সুযোগও দিচ্ছে। তথাপিও রোহিঙ্গারা মাতৃভুমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।
সরকারের স্বদিচ্ছার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব নেতারা রোহিঙ্গাদের দেখার জন্য ক্যাম্পে এসেছে। ঘুরে দেখেছেন রোহিঙ্গাদের জীবন যাত্রা। নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী পুরুষের সাথে কথা বলে নাগরিক অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশ্বস্থ করায় রোহিঙ্গাদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রান চাঞ্চল্য।
মঙ্গলবার সকালে রোহিঙ্গাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা এসব কথা বলেন। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ৫ ব্লকে বিশ্ব নেতাদের সাথে কথা বলেছেন, এমন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীরা তাদের উপর যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা বর্ণনা দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের চোখ থেকে পানি পড়তে দেখে এবং তাদের কোলে ছোট ছোট শিশুদের প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব নেতারা অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ছৈয়দ নুর, মোঃ শরিফ জানান, নির্যাতনের কথা শুনে মিয়ানমারের উপর বিশ্ব নেতাদের প্রচন্ড ক্ষোভ দেখা গেছে। এসময় গুতেরেস তার নিজের নাতী নাতনীর এমনটি হলে কি হতো তা উপলব্দি করে মনের ব্যাথা টুকু তাদের মাঝে প্রকাশ করায় রোহিঙ্গারা বিশ্ব নেতাদের প্রতি বিশ্বাস এনেছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গাদের হেড মাঝি আবু ছিদ্দিক (৫৫) জানান, তারা ২০১২ সাল থেকে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। দেশী বিদেশী অনেক রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে গেছেন। অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। ওই রোহিঙ্গা নেতা আরো বলেন এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও নেপিডোর মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যেও প্রত্যাবাসন চুক্তিভিত্তিক ফলাফল এ পর্যন্ত আশার আলো দেখেনি।
কিন্তু গত সোমবার বিশ্ব নেতারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে যেসব কথা বলেছে তাতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তার বক্তব্য এক পর্যায়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারকে তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে। এমন বক্তব্য নিয়ে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে অনাবিল আনন্দেও সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গারা বলছে হয়তো এবার দেশের মাটিতে যাওয়ার কপাল খুলবে।
উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বিশ্ব নেতাদের ক্যাম্প পরিদর্শন ও তাদের বক্তব্যেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সমগ্র বিশে^র জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তারা রোহিঙ্গাদের পরবাস জীবন যাত্রা দেখে আশাহত হয়েছেন। মিয়ানমারের উপর ক্ষুব্দ হয়েছেন। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন। যাতে রোহিঙ্গারা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে রাখাইনে বসবাস করতে পারে।