কক্সবাংলা ডটকম(৩১ জানুয়ারী) :: লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলাকে নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দেশটির বামপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের নেতা হুয়ান গুয়াইদো নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করার কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে স্বীকৃতি বসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের আহ্বানে ইতোমধ্যে বেশকিছু দেশ গুয়াইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে। পাশাপাশি ভেনিজুয়েলার তেল সম্পদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের হঠকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে রাশিয়া ও চীন। পাশাপাশি বন্ধু দেশ রাশিয়া কেবল ভেনিজুয়েলার বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সমর্থনই দেয়নি ইতোমধ্যে দেশটির সমর্থনে অসংখ্য ভাড়াটে সেনা ও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দুইটি বোমারু বিমানও পাঠিয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, ৯০-এর দশকে বিদায় নেওয়া স্নায়ুযুদ্ধ কি ফের ভেনিজুয়েলার মাধ্যমেই ফিরে আসছে?
ভেনিজুয়েলায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির জিমিস্কি রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাসকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বর্তমানে ভেনেজুয়েলার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে দ্বৈত ক্ষমতার যে বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে তা মোটেই সঠিক নয়। বিরোধী দলীয় নেতা গুয়াইদোর কোনো ক্ষমতাই নেই। সব ভুয়া কথা। দেশটির মূল ক্ষমতা মাদুরোর হাতেই রয়েছে। তবে গুয়াইদো এ ক্ষমতা পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বিষয়টি স্নায়ু চাপ তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটা অবৈধ বলে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। একইসঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে ভেনিজুয়েলাকে সমর্থন জানিয়েছে ইরান, বলিভিয়া, বেলারুশ, কিউবা, নিকারাগুয়া, এল সালভেদর, তুরস্ক ও মেক্সিকো।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা গুয়াইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, জর্জিয়া ও ইসরায়েল। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্স ঘোষণা করেছে মাদুরোর সরকার যদি ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা না দেয় তাহলে তারা বিরোধী দলের প্রধান গুয়াইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবার গুয়াইদোকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য টেলিফোনে কথাও বলেছেন। ফলে বিষয়টি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে।
এমতাবস্থায় ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নিজের সেনাবাহিনীকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সেনাঘাঁটিতে সেনাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন কূটনৈতিকদের দেশত্যাগে নিষেধ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যদি তার দেশের কূটনৈতিকদের কোনো ধরনের ক্ষতি সাধন করা হয় তাহলে সেটার কঠিন জবাব দিবে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে মাদুরোর এ দুঃসময়ে বসে নেই তার বন্ধু দেশ রাশিয়া। ইতোমধ্যে তাকে রক্ষায় ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়েছে পুতিন। একইসঙ্গে দেশটিতে পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম দুটি বোমারু বিমান পাঠিয়েছে রাশিয়া। এর হিসেবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নিজেদের সৈন্যের উপস্থিতি রাখতে চায় রাশিয়া। অন্যদিকে চীনও মাদুরোর সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। কারণ ভেনিজুয়েলা থেকে দেশটি কম দামে তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র স্বল্প মূলে আমদানি করে। একইসঙ্গে গত কয়েক দশকে দেশটিতে ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত গুয়াইদো যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে নতুন করে চীনের হিসাবনিকেশ নিমিষেই পাল্টে যেতে পারে।
ঠিক এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যদি ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে তাহলে সেটা বিরাট ধ্বংসযোজ্ঞ ডেকে আনতে পারে। আবার বিরোধী দলীয় নেতাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভেনিজুয়েলার উপর যদি চাপ সৃষ্টি করে তাহলে সেটাও হিতে বিপরীত হতে পারে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কেউবাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল সেটা এবার ভেনিজুয়েলাকে কেন্দ্র করেই হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Posted ২:০৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta