রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালন : বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয় বেশি বাংলাদেশে

রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১৮
384 ভিউ
ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালন : বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয় বেশি বাংলাদেশে

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জুলাই) :: চীনের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত ব্যাংকটি পরিচালন আয়ের মাত্র ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ ব্যয় করে। বাকি ৬৯ দশমিক ৩৯ শতাংশই ব্যাংকটির নিট মুনাফা। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় করলে প্রায় ৭০ টাকাই  ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার ব্যালান্সশিটে নিট মুনাফা হিসেবে যোগ হয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক ‘ব্যাংক অব চায়না’ও পরিচালন আয়ের মাত্র ৩৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ব্যয় করে।

বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী এইচএসবিসি হোল্ডিংস ব্যয় করে পরিচালন আয়ের ৫১ দশমিক ২৭ শতাংশ। পরিচালন আয়ের ৫৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিটি গ্রুপ। বিশ্বের অন্য বৃহৎ ব্যাংকগুলোর মধ্যে জেপি মর্গান চেজ অ্যান্ড কোং পরিচালন আয়ের ৫৮ দশমিক ৬৩, ব্যাঙ্কো সান্তান্দার ৪০ দশমিক ৫৩, এগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়না ৩৮ দশমিক ৫৯ ও ব্যাংক অব আমেরিকা ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ব্যয় করে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র এর ঠিক উল্টো। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন আয়ের মাত্র ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ গেছে নিট মুনাফায়। বাকি ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশই পরিচালন ব্যয়, সঞ্চিতি সংরক্ষণ ও সরকারকে কর পরিশোধ বাবদ চলে গেছে।

দেশের অনেক বেসরকারি ব্যাংকের আয় অনুপাতে পরিচালন ব্যয় আরো বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যয় আবার বেসরকারি ব্যাংকের চেয়েও নাজুক। একই কথা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও।

দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশই ব্যয় হয়েছে। আয়ের মাত্র সাড়ে ২১ শতাংশ নিট মুনাফা হিসেবে বণ্টন করতে পেরেছে ব্যাংকগুলো।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পরিচালন আয়ের তুলনায় ব্যয় বিবেচনায় সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘দ্য ব্যাংকার’ ম্যাগাজিনের তথ্য বলছে, বিশ্বের ব্যাংকিং খাতের পরিচালন আয়ের বিপরীতে গড় ব্যয় ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম চীনে ৩৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এশিয়া মহাদেশের ব্যাংকিং খাতে পরিচালন আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয় ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে এ হার ৪১ দশমিক ৩৩, লাতিন আমেরিকায় ৫৫ দশমিক ৪, পশ্চিম ইউরোপে ৫৬ দশমিক ১৪, পূর্ব ইউরোপে ৫১ দশমিক ৪১, আফ্রিকায় ৬১ দশমিক ৮৭ ও উত্তর আমেরিকায় ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।

ব্যাংকারদের উচ্চবেতন-ভাতা, বোনাসসহ পরিচালন ব্যয়ের বাহুল্য, খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের চাপ ও উচ্চ করপোরেট ট্যাক্সের কারণেই দেশের ব্যাংকিং খাতের আয়ের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বিপুল এ পরিচালন ব্যয় ও খেলাপি ঋণ দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোরও প্রতিবন্ধক বলে মনে করছেন তারা।

আর বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের দাবি, ব্যাংকারদের বেতন আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে ব্যাংকের আয়ের বড় অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে। জ্যেষ্ঠ ব্যাংকারদের পেছনে ব্যাংকের খরচ ধারণার চেয়েও বেশি।

বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, প্রতি মাসে শুধু বেতন-ভাতা বাবদ আমাদের ব্যাংকের প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। দেশের অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে এত বেশি ব্যয় হয় না।

ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে পরিমাণ বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নেন, তা অপ্রত্যাশিত। পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে পারলে ব্যাংকের মুনাফা বাড়বে। ব্যাংক স্বল্প সুদে গ্রাহকদের ঋণ দিতে পারবে।

দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক ন্যাশনাল। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন আয় ছিল ১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। বড় অংকের এ আয় করতে গিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংককে ব্যয় করতে হয়েছে ৬০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৮৭ কোটি টাকা বা ৬৪ দশমিক ২৮ শতাংশই ব্যয় হয়েছে ব্যাংকটির কর্মীদের বেতন পরিশোধে।

পরিচালন মুনাফা থেকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) ও সরকারকে কর পরিশোধের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ৪৭৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যাংকটির পরিচালন আয়ের মাত্র ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশ নিট মুনাফা। বাকি প্রায় ৭১ শতাংশই গেছে পরিচালন ব্যয়, কর পরিশোধ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণে।

বিদায়ী বছরে বেসরকারি এবি ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালন আয়ের ৯৯ শতাংশের বেশি ব্যয় হয়ে গেছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে বিপুল অংকের সঞ্চিতি সংরক্ষণের কারণে মাত্র ৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা পেয়েছে ব্যাংকটি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক পরিচালন আয়ের ৭৮ শতাংশই ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে কর্মীদের বেতন-ভাতা খাতে, যা ব্যাংকটির মোট ব্যয়ের ৬২ শতাংশ।

দক্ষতা, সেবার মান, করপোরেট গভর্ন্যান্সসহ সামগ্রিক সূচকে দেশের ব্যাংকগুলো এখনো বৈশ্বিক মানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা পদটিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। এজন্য ব্যাংকের টাকায় নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা চলে। ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের অপব্যয় করে। এসব কারণে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

ব্যয়কৃত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করতে গিয়ে ব্যাংক আমানতকারীদের সুদহার কমিয়ে ঋণ গ্রহণকারীদের সুদ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক ফি আরোপ করে।

ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা অনেক বেশি বলেও মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর। তার মতে, এ কারণেও ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। ব্যাংকগুলো সেবার মান না বাড়িয়ে মুনাফা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। আমি ব্যাংকের মুনাফা বাড়িয়ে বছর শেষে বণ্টন করে দেয়ার বিরোধী।

ব্যাংক মুনাফার অংশ দিয়ে মূলধন বাড়াতে পারে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনে গ্রাহকদের কম সুদে ঋণ দেয়া ও আমানতকারীদের বেশি সুদ দেয়ার ব্যবস্থা করার মধ্যেই দেশের ব্যাংকিং খাতের কল্যাণ নিহিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আয়ের বিপরীতে ব্যয়ের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এ খাতের ব্যাংকগুলো আয়ের মাত্র ১২ শতাংশ নিট মুনাফায় নিতে পেরেছে। সরকারি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিস্থিতি আরো নাজুক।

ব্যাংক দুটি ১০০ টাকা আয় করতে গিয়ে ১৩২ টাকা ৮০ পয়সা ব্যয় করেছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর আয় অনুযায়ী ব্যয়ের হার ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এ খাতের ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আয় করে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা নিট মুনাফায় নিতে পেরেছে।

তবে ব্যয় কমিয়ে ভালো মুনাফা করেছে দেশে কার্যরত বিদেশী ব্যাংকগুলো। এ ব্যাংকগুলো আয় অনুপাতে ব্যয় করেছে মাত্র ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংকগুলো আয়ের ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশই ২০১৭ সালে ব্যয় করেছে। এর আগে ২০১৬ সালে আয় অনুপাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় ছিল ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

ব্যাংকের আকার ছোট হওয়ার কারণেই পরিচালন ব্যয় বেশি বলে দাবি করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান। তিনি বলেন, দেশে বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে ৪০টি। বেশির ভাগ ব্যাংকের সম্পদ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে। ছোট-বড় সব ব্যাংকেরই প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শাখা আছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর সংস্থাপন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকের অনুপাতে দেশে দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যাংকারের সংকট আছে জানিয়ে আনিস এ খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংকে বেশ কয়েকজন ডিএমডি পর্যায়ের ব্যাংকার থাকতে হয়। এর বাইরে ব্যাংকের করপোরেট, রিটেইল, এসএমই, মানবসম্পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোয় জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার লাগে। এ পর্যায়ের ব্যাংকারদের পেছনে ব্যয় অনেক। ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ার পেছনে খেলাপি ঋণও বড় একটি কারণ।

পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ার জন্য করপোরেট ট্যাক্সের উচ্চহারকেও দায়ী করছেন ব্যাংকাররা। খেলাপি ঋণের হার বেশি হওয়ায় এর বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণকেও আরেকটি কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকগুলোকে উচ্চহারে কর পরিশোধ করতে হয়। খেলাপি ঋণের হার বেশি হওয়ায় ব্যাংককে সঞ্চিতি সংরক্ষণের জন্য পরিচালন মুনাফার বড় একটি অংশ রেখে দেয়া হচ্ছে। এ দুটি খাত বাদে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ততটা বেশি নয়।

তিনি বলেন, উন্নত দেশে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা নিতে ব্যাংকে যেতে হয় না। ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে গ্রাহকরা যাবতীয় কাজ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে কিছু হলেই গ্রাহকরা ব্যাংকে ছুটে যান। এ কারণে শাখা পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তাকে কাজ করতে হয়। তবে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যাংকগুলোর আধুনিকায়নের ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পারলে ব্যাংকঋণের সুদহার সবসময়ের জন্য ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।

384 ভিউ

Posted ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com