কক্সবাংলা ডটকম(২৮ এপ্রিল) :: এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে এমএসসিআই ফ্রন্টিয়ার ইনডেক্স ২.৫ শতাংশ পড়ে যাওয়ার পর বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখনও পুঁজিবাজার এড়িয়ে চলছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংখ্যা আট লাখে পৌঁছানোর খবর এবং খারাপ ঋণের (ব্যাড লোন) পরিমাণ ১০ শতাংশ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের ব্যালান্স শিট ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে দুর্দশা দেখা যাচ্ছে, সে কারণেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।
নির্বাচনও এ বছরেই হওয়ার কথা রয়েছে যদিও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বিরোধী দলীয় নেতা এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া ইসলামী সন্ত্রাসী হুমকি এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের গুজবের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাঝে মধ্যেই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হচ্ছে এখানে ওখানে।
রানা প্লাজা গার্মেন্টস কারখানা ধসের ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ ওই দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছিল। ওই ঘটনার পর রফতানির প্রধান খাত গার্মেন্টসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের টনক নড়ে।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়দের নিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ নিয়েই সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা।
আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) সহায়তা অনুমোদন দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত – যার বয়স আশি পেরিয়ে গেছে এবং শিগগিরই অবসরে যাচ্ছেন যিনি – তিনি ওয়াশিংটনের কাছে জরুরি আবেদন করায় ওই সহায়তা অনুমোদন দেয়া হয়। গৃহহারা মানুষদের সহায়তার জন্য আইডিএ’র অধীনে ২ বিলিয়ন ডলারের তহবিল রয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের।
বাংলাদেশ জর্ডানের আগের মডেল অনুসরণ করতে পারে এবং একটা নীতি গ্রহণ করতে পারে যেখানে শ্রমবাজার পুনর্গঠনসহ বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অন্যান্য প্রণোদনা দেয়া হবে যাতে বড় বড় বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলো থেকে বাড়তি শুল্ক-মুক্ত সুবিধা ও সহায়তা পাওয়া যায়।
গত বছরের শেষ দিকে ফার্মার্স ব্যাংককে উদ্ধার করার পর ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রী আধা ডজন রাষ্ট্রীয় ও প্রাইভেট ব্যাংককে রক্ষার জন্য পুনর্মূলধনী বিল প্রকাশ করেন।
অব্যাহত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে এবং আইনী প্রক্রিয়া যেটা সম্পন্ন হতে বহু বছর লেগে যায় – এই সব মিলিয়ে বিদেশী অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এইসব প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে চলছেন। যদিও জনগণের এক-তৃতীয়াংশই এখানে ব্যাংকের সাথে যুক্ত নয়, খুচরা পণ্য বাজারেও তারা পিছিয়ে আছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ, কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি দ্বিগুণ হয়েছে। চীনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) অবকাঠামো প্রকল্পের অংশ হিসিবে মূলধনী পন্য আমদানির কারণেই মূলত এই ঘাটতি বেড়েছে।
৭ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ, রেল এবং টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ডাটাবেজ এ তথ্য দিয়েছে।
সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো ঢাকা-যশোর উচ্চ গতিসম্পন্ন রেলওয়ে নির্মাণ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণের চিন্তা করা হচ্ছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবির রয়েছে।
নিজস্ব কর ব্যবস্থা থেকে খুব সামান্যই অবদান রাখা যায় এইসব প্রকল্পে, কারণ জিডিপির মাত্র ১০ শতাংশ হলো সরকারের রাজস্ব। অন্যদিকে, রেজিস্টার্ড কোম্পানিগুলোর মধ্যে পাঁচ শতাংশেরও কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দিয়ে থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
স্থানীয় ব্যাংকগুলো লেনদেনে অংশ নেয়, কিন্তু সিস্টেমের ৬০টি প্রতিযোগীই আসলে একই পরিবার এবং রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি ব্যবসার পেছনে ছুটছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে যে বছরের শেষ নাগাদ ঋণ ও ডিপোজিটের অনুপাত ৮৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
অনেক প্রতিষ্ঠানের এই অনুপাত রয়েছে ৯০ শতাংশের উপরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার কারণে আরও সতর্ক হয়ে গেছে তারা। এই সিদ্ধান্তের ফলে ডিপোজিটের দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। এতে রেট দ্বিগুণ বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে।
কারণ ২০১৭ সালের ধারের কারণে এবং রেমিটেন্স প্রবাহ কম হওয়ার কারণে আগে থেকেই তারল্য সঙ্কট রয়ে গেছে। অনুন্নত বন্ড মার্কেটের জন্য অর্থায়নের প্রধান মাধ্যমই হলো ব্যাংক। আর ২০১৯ সালে ব্যাসেল থ্রি পুঁজি ও ঝুঁকি স্ট্যান্ডার্ড পূরণের প্রস্তুতি হিসেবে ডলারগুলো চেপে রাখছে তারা। সে কারণে মুদ্রা বাজার নিয়ে অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।
চীনের সাংহাই এবং শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জও ঢাকার শেয়ার বাজারে ২৫ শতাংশ শেয়ার নেবে। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয়দের টপকে তারা এই অবস্থানে গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, কোন রাজনৈতিক প্রভাব এখানে কাজ করেনি এবং চীনের শেয়ার প্রতি মূল্য অনেক বেশি।
একইসাথে তারা ক্ষুদ্র ব্যবসা সুবিধা এবং ফ্রি প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়টির উপরেও জোর দিয়েছেন। ২০১০ সালের পতনের পর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে।
এর ফলে ডিএসই’র লেনদেন উন্মুক্ত হয়ে যাবে ইটিএফের মতো নতুন পণ্য এবং আরও শক্তিশালী মূলধনী ব্যবস্থা চালু হবে। চলতি বছরে ৫০টি আইপিও’র প্রত্যাশা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী শ্রীলংকার মতো অগ্রসর বাজারগুলোর পর্যায়ে যাওয়ার জন্য আরও প্রশস্ত অর্থনৈতিক নীতিমালার কথাও ভাবা হচ্ছে।
Posted ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta