রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারতকে ঘিরে ফেলছে চীন

শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৮
444 ভিউ
ভারতকে ঘিরে ফেলছে চীন

কক্সবাংলা ডটকম(১১ জানুয়ারী) :: নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মতো একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে ধনবাদী গোষ্ঠীর সমর্থন ও অর্থ জোগানের ফলে লোকসভার নির্বাচনে জিতে বিশাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে উঠে এসেছেন ২০১৪ সালে। ১২ বছরব্যাপী গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সফলভাবে রাজ্য সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে সবাই মনে করেছিলো দিল্লির নেতৃত্বেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দেবেন।

নরেন্দ্র মোদির বিদেশ বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। জয় শঙ্করকে পররাষ্ট্র সচিব এবং অজিত দোভালকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদষ্টো হিসেবে বেছে নেওয়া হলো দক্ষতার কথা বিবেচনা করে। অজিত দোভালকে তো তুলনা করা হতো জেমস বন্ডের সঙ্গে।

দেশরক্ষা বিষয়েও মোদির কোনও পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই। অথচ উভয় দফতর সম্পর্কে মোদির অফুরন্ত উৎসাহ ছিল। সবাই মনে করেছিলেন জয় শঙ্কর এবং অজিত দোভালের মতো দুই আমলার নিয়োগের কারণে মোদির অনভিজ্ঞতার কোনও চাপ পড়বে না এই দু’দফতরের কাজ কর্মে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এই দু’আমলার সম্পর্ক নাকি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চেয়েও খারাপ। আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণেও মোদি ওভার স্মার্ট। তাই দেখা যায় ৪৪ মাসব্যাপী ক্ষমতায় থাকার পরও উল্লেখযোগ্য সফলতা এই দুই দফতরে নেই।

এখন গত ৫ তারিখ জয় শঙ্কর বিদায় নিয়েছেন। ক্ষমতার শেষলগ্নে এসে এই রদবদল আদৌও কোনও ফলপ্রসূ কিছু হবে বলে মনে হয় না। এই দুই দফতরে কেউ মোদির হস্তক্ষেপের কারণে স্বাধীনভাবে নাকি কাজ-কর্ম করতে পারেন না। তাই দেখা যায় এই দুই দফতরের কাজ-কর্মে পরিণত মানসিকতা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সম্ভবতো সে কারণে বড় বেশি আঞ্চলিক হয়ে পড়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি।

ভারতের ‘বিশ্ব’ মনে হয় যেন পাকিস্তান আর চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিচ্ছবিও পড়েছে। আমরা দেখি ভারতের প্রধানমন্ত্রী একগুয়ে মানুষ। পাকিস্তানের প্রতিটি মানুষ ভারতের ব্যাপারে অমননীয়। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে লিপ্ত। আবার চীনের প্রেসিডেন্টও নির্বাক এবং একরোখা। সুতরাং পরিস্থিতি খুবই জটিল।

আমেরিকা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর আফগানিস্তানে আটকে আছে। এখন আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে পরিত্রাণ চায় তবে যাওয়ার আগে দায়িত্বটা ভারতকে বুঝিয়ে দেওয়াই তার কামনা। অন্যদিকে পাকিস্তান আফগানিস্তানে ভারতের সামরিক উপস্থিতি মানতে নারাজ।

চীন গত ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চীনে ডেকেছিলো। চীন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক টেবিলে বসেছে পাক-আফগান বিরোধ মেটানোর জন্য। চীন বলেছে আফগানিস্তানের উন্নয়নে অকাতরে অর্থ জোগাবে তারা। অথচ ভারত ইরানের চাহাবারে একটা ছোট বন্দর স্থাপন করেছে আফগানিস্তানের আমদানি-রফতানি কাজের সুবিধার জন্য। কারণ আফগানিস্তান স্থলভূমি দ্বারা বেষ্টিত দেশ। চাহাবার থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত রাস্তা তৈরির জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণও মঞ্জুর করেছে ভারত।

এখন চীন আফগানিস্তানকে প্রস্তাব করেছে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর ব্যবহার করার জন্য। পাকিস্তানের গোয়াদরে চীন বিশাল বন্দর স্থাপন করেছে। চীন থেকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের ওপর দিয়ে বিরাট সড়কও নির্মাণ করেছে গোয়াদর পর্যন্ত। প্রকৃতপক্ষে গোয়াদর বন্দরের পশ্চাত ভূমি হলো আফগানিস্তানের জালালাবাদ, কাবুল, কান্দাহার, গজনী, মাজার-ই শরিফ ইত্যাদি। এগুলোর সঙ্গে ভালো সড়ক যোগাযোগ রয়েছে গোয়াদর বন্দরের আর আফগানিস্তানের অধিকাংশ জনবসতি এই এলাকাগুলোতেই।

আফগানিস্তানের সঙ্গে চীন যে আলোচনার প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্ট। কারণ যুদ্ধে যুদ্ধে দেশটা দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটাকে গড়ে তুলতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা ইচ্ছে করলে চীন দিতে পারে কিন্তু ভারতের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ ভারতের অর্থনীতি চীনের অর্থনীতির এক পঞ্চমাংশ। চীন গোয়াদরে নৌঘাঁটিও প্রতিষ্ঠা করেছে। গত ৫ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার ও চীন সরকার ঘোষণা করেছে গোয়াদরের পাশে সামরিক ঘাঁটিও প্রতিষ্ঠা করবে চীন।

২০১৭ সালের ১৬ চীন বেইজিংয়ে ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (সংক্ষেপে ওবিওআর) প্রতিষ্ঠার অভিলাষ নিয়ে সম্মেলন ডেকেছিলো। এই সম্মেলনে চীন তার দেশের দুই অংশকে বিশ্বের তিন মহাদেশের ৬১টি দেশকে সড়ক, রেল, সমুদ্র পথে সংযুক্ত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো। এখন সে মহাপরিকল্পনার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত সেই সম্মেলনে যোগ দেয়নি। বরং ভারত তার পাল্টা বাণিজ্য পথ কটন রুট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। চীনের সিল্করুট যেমন প্রাচীন বাণিজ্য পথ ভারতের কটন রুটও প্রাচীন বাণিজ্য পথ। এই পথে ভারতের সুতিবস্ত্রের ব্যবসায়ীরা জাভা, সূমাত্রা হয়ে চীন পর্যন্ত ব্যবসা করতো।

পরস্পর পরস্পরের বাণিজ্য রুটে অংশগ্রহণ করাই উত্তম ছিল। ভারত চীনের ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোডের সম্মেলনে যোগ দিলে তখন চীনকে ভারতের কটন রুটে যোগ দেওয়ার কথা বলতে পারতো। তা না করে ভারত পাল্টা মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। অথচ ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এখন চীন সফরে আছেন আর তিনি বলেছেন ইউরোপ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের ইনেশিয়েটিভে অংশীদার হবে এবং চীনের সঙ্গে ব্যাপক ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করে অগ্রগতির পথ সুগম করবে।

চীন শ্রীলঙ্কা থেকে হাম্বানটোটা বন্দর লিজ নিয়েছে ৯৯ বছরের জন্য। সেখানে চীন নৌঘাঁটি স্থাপন করছে।

২০১১ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপে চীনের কোনও দূতাবাস পর্যন্ত ছিল না। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক সহযোগিতা নিয়ে মালদ্বীপে উপস্থিত হয়েছেন। এখন মালদ্বীপ উপকূলে চীনের নৌ-বাহিনীর জাহাজ টহল দিচ্ছে। মালদ্বীপে চীন এখনও কোনও নৌঘাঁটি স্থাপনের কথা বলেনি তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মালদ্বীপেও চীন নৌঘাঁটি স্থাপন করবে। মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূলেও চীন বন্দর স্থাপন করছে। এখানেও নৌঘাঁটি স্থাপন করবে।

নেপাল হিমালয়ের দক্ষিণ পাশের দেশ। চীন আগে নেপালের প্রতি মনযোগী ছিল না। ২০০৮ সালে মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড যখন সরকার গঠন করেছিলেন তখন বড় মুখ করে চীন গিয়েছিলেন। চীনের নেতারা বলেছিলেন তোমরা পর্বতের ওপারের দেশ, ওপারে একটা বড় দেশ রয়েছে সব কথা তার সঙ্গে গিয়ে বলো। মানে ভারতের সঙ্গে কথা বলো।

চীনের আগের নেতৃত্ব এখন নেই। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিন্তু পূর্বের নেতৃবৃন্দের মতো ভদ্রলোক নন। ভারত যাদের সঙ্গে দাদাগিরি করে চীন তাদের পাশ্বে গিয়ে দাঁড়ায়। নেপালে ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়ে গেলো। এখন কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসছে। চীন তাদের সড়কপথ-রেলপথ করে দিয়েছে। উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনায় সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তরিক সম্পর্ক থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে চীনও ভালো সম্পর্ক রাখছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী দেশ। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় ২৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বলে অবহিত করেছেন।

বিজেপি এর আগেও একবার পূর্ণ মেয়াদে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় ছিল। তখন অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অভিজ্ঞ লোক পূর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি পাঁচ বছরব্যাপী চেষ্টা করেছেন পাকিস্তান আর চীনের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বাস সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করার সময় তিনি বাসে করে লাহোরও গিয়েছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে জিতে না আসায় তিনি তার মিশন পরিপূর্ণ করতে পারেননি।

বিজেপি ১০ বছর পর যখন ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন তখন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হন। এখন ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় ‘জাতীয়তাবাদ’ তুষ্টির প্রয়াজনে। দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিও একই। এসব কারণে ভারতের রিজিওনাল আইসোলেশন বাড়ছে এবং পাশ্ববর্তী দুই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ পাকিস্তান ও চীনকে চটিয়ে রেখেছে তারা। অন্যদিকে এই অঞ্চলে চীন এমন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়েছে যে, দুই বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে চীন ভারতকে ঘেরাও করে ফেলেছে।

ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বন্ধুত্ব আছে সত্য এবং জাপান, ভারত, আমেরিকা কয়দিন আগে-বিপুল সমারোহে নৌ-মহড়াও করেছে। কিন্তু আমেরিকা বর্তমানে পিছুটান নীতি গ্রহণ করেছে। ইউক্রেনে আমেরিকা কোনও কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি। আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিস্তার গুটিয়ে প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেনি। ট্রাম্প বলছেন, আফগানিস্তানে তাদের যুদ্ধে জড়ানো সঠিক হয়নি। সব মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বন্ধুত্ব দৃঢ় হলো এমন সময় যখন আমেরিকার পড়ন্ত বেলা। ঘরমুখী হয়ে যাওয়ার সময়।

দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া সম্ভবতো উপলব্ধি করতে পেরেছে যে বন্ধুত্বের ওপর নির্ভর করে থাকা আর উচিত হবে না। তাই তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিরোধ মেটাবার উদ্যোগ নিয়েছে এবং আমেরিকার সঙ্গে যৌথ নৌ-মহাড়ার পরিকল্পনাও বাতিল করেছে। আমেরিকা জাপানকে নিজের সমর শক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে। ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট থেকে আমেরিকা বের হয়ে গেছে অথচ এটা ছিল বারাক ওবামার বৃহত্তম উদ্যোগ যাতে সব বন্ধু একসঙ্গে মিলেমিশে পরস্পরের কল্যাণে আসে।

জাতীয়তাবাদের স্পর্ধাকে বাড়িয়ে তুললে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের ‘জাতীয়তাবাদ’ তুষ্টির উপকরণ জোগাতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি ভারতের বিশেষ কোনও উপকার করেননি। এই উপলব্ধি যত দ্রুততার সঙ্গে আসবে ততই ভারতের মঙ্গল হবে।

লেখক-বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী : রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট

444 ভিউ

Posted ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com