কক্সবাংলা ডটকম(১ আগস্ট) :: ভারতের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ন্যাটো মিত্রদের সমান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র। উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বেসামরিক পণ্য বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশে দেশটিকে এই তালিকায় উন্নীত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তালিকাভুক্ত না হলে এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামের আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজ দেশের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রোজ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতকে কৌশলগত বাণিজ্য অনুমোদন মর্যাদা এসটিএ-১ মঞ্জুর করেছি। সরকারের রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা। আর এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সর্ম্পকের স্বীকৃতি পেলো।
এর ফলে ভারতে মার্কিন রফতানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের সংখ্যা কমে যাবে। অর্থাৎ ভারত এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে সহজ প্রবেশাধিকার পেলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সিওএমসিএএসএ চুক্তি করতে আগ্রহী। দিল্লিকে ওই চুক্তিতে প্রলুব্ধ করার জন্য ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এই সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্রদের সঙ্গে করা যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি চুক্তির অন্যতম হলো যোগাযোগ, সক্ষমতা ও নিরাপত্তা চুক্তি। এই চুক্তিটি করা হলে ভারতের কাছে বিক্রি করা প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতির সঙ্গে উচ্চ নিরাপত্তার যোগাযোগ সংক্রান্ত সামগ্রী যুক্ত করার অনুমতি পাবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে স্পর্শকাতর সামরিক যোগাযোগে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে।
দিল্লির সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ই ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ এসটিএ-১ মর্যাদা দিলো ট্রাম্প প্রশাসন।
ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অবকাঠামো, জ্বালানি ও ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের তহবিল ঘোষণা করেন।
কোনও দেশের নাম উল্লেখ না করেই তিনি চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগের বিকল্প হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের নেওয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক ভিশন উন্মুক্ত করেন। তবে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য প্রভাব বিস্তারের পরিবর্তে অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কৌশলগত কর্তৃত্বে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদারিত্বে বিশ্বাস করে।
বাণিজ্যমন্ত্রী রোজ বলেন, নতুন মর্যাদা ভারতকে প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কার্যকর সরবরাহ সুবিধা দেবে। এই সুবিধার অভাবে গত সাত বছরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতে প্রায় ৯৭০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি দেশকে এসটিএ-১ মর্যাদা দিয়েছে। এসব দেশের বেশিরভাগই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত অথবা ন্যাটো বহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মর্যাদার এই উত্তরণে ভারতকে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আলোচনা এগিয়ে নিতে এটি একটি পদক্ষেপ।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতকে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা বেনজামিন শোয়ার্জ। তিনি বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে বর্তমান রফতানিতে দেখা যায়, এর ৫০ শতাংশই এসটিএ-১ মর্যাদার আওতায় রয়েছে।
এর ফলে ২১০ কোটি ডলারের বাণিজ্য মুক্ত করে দিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে মার্কিন রফতানিকারকরা বিশ্ব বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর এটা ভারতকে আরও উন্নত মার্কিন প্রযুক্তি পেতে সহায়তা করবে।
ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।
Posted ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta