ভারতের প্রতিরক্ষার একটা বড় অঙ্গ হল বায়ুসেনা। বিভিন্ন সময় দেশের জন্য যুদ্ধে এবং উদ্ধারকাজে বায়ুসেনার ভূমিকা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘদিন ধরেই নতুন যুদ্ধবিমানের অভাব রয়েছে ভারতের এয়ার ফোর্সে। কিন্তু কখনও লাল ফিতে আবার কখনও দরাদরির সমস্যায় আটকে যাচ্ছে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করার প্রক্রিয়া। ফলে, বাধ্য হয়ে ওড়াতে হচ্ছে মেয়াদ ফুরনো বিমান।

২০০৭-এ নতুন যুদ্ধবিমান কিনতে চুক্তি করা হয়েছিল। ফরাসি সংস্থা ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে হয়েছিল সেই চুক্তি। ১১০০ কোটি ডলারে ১২৬টি রাফায়েল কেনার জন্য সেই চুক্তি হয়। কিন্তু দরাদরি আর গুণমান নিয়ে আলোচনায় আটকে যায় প্রক্রিয়া। ২০১৫ তে বন্ধ হয়ে যায় সেই চুক্তি। প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে ভারত পৃথকভাবে ২৬টি রাফায়েল কিনেছে। ২০১৯ থেকে যা ভারতে আসতে শুরু করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ১১০টি বিমান কিনতে চায় ভারত। বছর তিনেকের মধ্যে ভারতে আসবে সেসব বিমান, এমনটাই চায় কেন্দ্র। অন্তত ১৫০০ কোটি ডলারের হবে সেই চুক্তি। ২০২৫-এর মধ্যে প্রতিরক্ষায় আধুনিকীকরণের জন্য ২৫০ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন নরেন্দ্র মোদী।

৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভারতের সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ের থেকে ১৫ গুন বেশী সময় নিয়ে নেয় পুরো প্রক্রিয়া।

রাফায়েল চুক্তির আগে ভারত অন্তত তিন দশক ধরে দেশীয় বিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে। আজও ভারতকে রাশিয়ার সোভিয়েত আমলের MiG-21-এর উপর নির্ভর করতে হয়। যে যুদ্ধবিমান প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। এই বিমানকে ‘ফ্লাইং কফিন’ও বলা হয়। ১৯৭০ থেকে এই ধরনের দুর্ঘটনায় মোট ১৭০ জন ভারতীয় পাইলটের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪০ জন সাধারণ নাগরিকেরও।

ভারতীয় সেনার রিপোর্ট বলছে, ভারতের ৬৮ শতাংশ সরঞ্জামই মেয়ার উত্তীর্ণ। আর প্রত্যেক বাজেটে ১০-১২ শতাংশ টাকা বরাদ্দ হয় এই খাতে। ফলে অভাব পূরণ করা বেশ কঠিন হয়ে যায়।

বিশ্বের বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে ভারত

এবার আঁটঘাট বেঁধেই ময়দানে নামছে ভারতীয় বায়ুসেনা৷ বিশ্বের সবথেকে বড় চুক্তি করার জন্য তৈরি তারা৷ প্রায় ১১০টি ফাইটার জেটের অর্ডার দিতে চায় তারা৷ এর জন্য প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত ভারতীয় বায়ুসেনা৷

ইতিমধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে মজুত রয়েছে তেজস, গরুড় এবং মিগের মত যুদ্ধবিমান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বিমানগুলি প্রযুক্তিগত ভাবে পিছয়ে পড়ছে। এদের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করতে গিয়েও কালঘাম ছুটছে মন্ত্রকের। তাই এখন প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। যেগুলি আয়তনে হবে হালকা এবং খরচ হবে কম।

১১০টি ফাইটার জেটের জন্য বিশ্বের সমস্ত কোম্পানির কাছে তাদের প্রস্তাব পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে৷ মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের আওতায় এটি তৈরি হতে চলেছে৷ বায়ুসেনার পক্ষ থেকে সিঙ্গল ও টুইন সিটের জেট তৈরির কথা বলা হয়েছে৷

ভারত এর আগে ১২৬টি ফাইটার জেটের চুক্তি বাতিল করেছে৷ দসাল্ত অ্যাভিয়েশন এস এ-র থেরে এটি নেওয়া কথা হয়েছিল৷ কিন্তু এর পরিবর্তে ৩৬টি রাফায়েল এয়ারক্র্যাফ্ট নেওয়ার কথা ঘোষণা করে৷

১১০টি ফাইটার জেটের জন্য একাধিক প্যারামিটার রেখেছে ভারতীয় বায়ুসেনা৷ জানানো হয়েছে, ফাইটার জেটের ৮৫ শতাংশ তৈরি করবে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনে বা ইন্ডিয়ান প্রোডাকশন এজেন্সি৷

চুক্তি সই করার দিন থেকে ৩ বছরের মধ্যে সেগুলি সেনার হাত পর্যন্ত পৌঁছে যেতে হবে বলেও শর্ত আরোপ করেছে বায়ুসেনা৷ জুলাই পর্যন্ত প্রস্তাব জমা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে৷

সেনা সূত্রে খবর, এই জাতীয় ফাইটার জেট তৈরি করে আমেরিকার লকহেড মার্টিন ও বোয়িং৷ এছাড়া ফ্রান্সের দসাল্ত, সুইডেনের SAAB, ইউরোপের ইউরো ফাইটার ও রাশিয়ার MiG এই জাতীয় বিমান তৈরি করে৷

কিছুদিন আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষা দফতর জানায়, বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থায় তৈরি হবে ২৫০ টি ফাইটার জেট৷ এগুলি ব্যবহার করা হবে ভারতীয় বায়ুসেনার কাজে৷ ১০০টি সিঙ্গল ইঞ্জিন ফাইটার জেট তৈরি হবে ভারতে৷

এছাড়া ৯০টি ডবল ইঞ্জিন ফাইটার জেট তৈরি হবে৷ এছাড়া ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য প্রয়োজন ৫৭টি জেট৷ নেক্সট জেনারেশন এয়ারক্রাফট কেরিয়ারে ব্যবহারের জন্য নৌসেনায় ওই ৫৭টি জেট লাগবে৷

এছাড়া কমপ্লেক্স অ্যারোনটিক্যাল ইকোসিস্টেম তৈরির জন্যও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলবে কেন্দ্র৷ যার জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে৷