রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারত বিরোধিতা বদলাচ্ছে কি বিএনপি ?

মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮
360 ভিউ
ভারত বিরোধিতা বদলাচ্ছে কি বিএনপি ?

কক্সবাংলা ডটকম(১২ জুন) :: বিএনপি কি তার ভারতবিরোধী অবস্থান পাল্টাচ্ছে? দলটির কয়েকজন নেতার সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে এ প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে গিয়ে দলের এক নেতা বলে ফেলেছেন, সরকারে থাকার সময় ভারতের সঙ্গে বিএনপির বৈরী আচরণ ‘ভুল ও বোকামিপূর্ণ ছিল’।

বিএনপির তিন নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সম্প্রতি দিল্লি গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে ‘প্রকৃত গণতান্ত্রিক আবহ প্রতিষ্ঠায়’ সাহায্য করার আরজি নিয়েই তাঁরা সেখানে যান।

বিএনপির নেতাদের এই সফরের পর দলটির অনেক নেতাই বলছেন, এর মাধ্যমে তাঁদের দল ভারতবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসছে। বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যমে হুমায়ুন কবীরের দেওয়া বক্তব্য ‘ভারতের সঙ্গে বিএনপির বৈরী আচরণ ভুল ও বোকামিপূর্ণ ছিল’ কথাটিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন দলের নেতারা। কেননা হুমায়ুন কবীর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন। আর তারেক রহমানই এখন দলের সবকিছু। ফলে সেখান (তারেক রহমান) থেকে যে ভারত বিষয়ে বিএনপির অবস্থানই দলের অবস্থান হবে, এটাই স্বাভাবিক।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সম্পর্কটা কখনো একপক্ষীয় হয় না। এটা দুই পক্ষ থেকেই আসতে হয়। বিএনপি ভারতে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিজেপি ও কংগ্রেসের কাছে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেছে। যেসব বিষয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয় ছিল, সেগুলো দূর করেছে। কিছু আশ্বাসও দিয়েছে। দেশটির থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত কয়েকটি সংগঠনের কাছেও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। বিএনপির ওই নেতা বলেন, তাঁদের মতো ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোও চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনঅবশ্য এই সফর সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দলের পক্ষ থেকে কেউ ভারতে গেছেন বলে তিনি জানেন না।

তারপরেও নির্বাচনের আগে ভারতে বিএনপির এ সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষক এবং প্রধান দুই দলের তাত্ত্বিকেরা। তাঁরা বলছেন, চলমান বাস্তবতা বুঝে বিএনপি তাদের ভারতবিরোধিতার নীতিতে পরিবর্তন আনছে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসছে—এই সফর ও সেখানে গিয়ে তাঁদের কথাবার্তায় তা স্পষ্ট বলেও মনে করেন কেউ। তবে কেউ কেউ আবার মনে করছেন, এ সফর বা নমনীয় আচরণ কেবল নির্বাচনী কৌশল। দলটি এখনো নানা কর্মকাণ্ডে অকারণ ভারতবিরোধিতায় মেতে থাকে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘পেছনে না তাকিয়ে আমাদের সামনের দিকে তাকানো উচিত। গত শতকের ৮০ ও ৯০-এর দশকের রাজনীতি এখন বাতিল হয়ে গেছে।’ ৮০ ও ৯০-এর দশকের রাজনীতিটা আসলে কী, তা আরও স্পষ্ট করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর।

বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে খারাপ সম্পর্ক ছিল, তা ‘ভুল ও বোকামিপূর্ণ’ নীতির ফসল। পত্রিকাটিকে হুমায়ুন কবীর এ-ও বলেছেন, ‘তারেক রহমান চান, আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি।’

হুমায়ুন কবীরের এ মন্তব্য সম্পর্কে বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘তাঁকে আমি চিনি না। কে কোথায় কী বলল, তার ব্যাখ্যা আমি দেব না।’

দ্য হিন্দু পত্রিকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘বড় প্রতিবেশী ভারতের গঠনমূলক ভূমিকা চায় বিএনপি। কোনো একটি দলকে ভারত সহায়তা করুক, এটাও চায় না।’

উল্লেখ্য, ভারতবিরোধিতা বিএনপির রাজনীতির একটি বড় অনুষঙ্গ। দলটির উদ্ভব, বিকাশ, নির্বাচনী কর্মকাণ্ড, এমনকি নিত্যদিনের রাজনৈতিক বিবৃতিতে এ বিরোধিতার উদাহরণ স্পষ্ট। বিএনপি তার প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে ভারতের কাছে নতজানু বলে বরাবরই কোণঠাসা করতে চেয়েছে।

সাম্প্রতিক সফর সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, ভারতের বিভিন্ন থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও সেখানকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে সংকট চলছে, সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মতো ভারতও এ দেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য কী প্রয়োজন, সে সম্পর্কে বিএনপির চাওয়াগুলো তাদের জানানো হয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে ভারতের দূরত্ব কমেছে কি না, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির কোনো নেতাই সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তাঁরা বলেছেন, এই সফর ভবিষ্যতে ইতিবাচক ধারার সূচনা করবে। ভারতের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ বাড়াবে।

হঠাৎ ভারতের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর ব্যাপারে বিএনপির আগ্রহের কারণ কী, জানতে চাইলে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভৌগোলিক ও বিশ্বে রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। দেশটিকে এড়িয়ে বাংলাদেশের শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নও কঠিন। তা ছাড়া ঢালাও বিরোধিতা এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলে না।

এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যাপারে ভারতের নেতিবাচক অবস্থান রয়েছে। ভবিষ্যৎ দলীয় প্রধানের ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশটির অবস্থান ইতিবাচক হওয়া দরকার। এটিও বিএনপির চিন্তায় রয়েছে।

এযাবৎকালের রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে নিবিড় বাণিজ্য ও কানেকটিভিটির বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান তাঁর ‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে লিখেছেন, কোনো সুনির্দিষ্ট এবং একক কোনো বৈশিষ্ট্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিকে পৃথক করা যায় তা হলো, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে দলটির ভারতবিরোধী মনোভাব। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটির ভিত্তিমূল ছিল এই বিরোধিতা।

তবে ভারতের গত সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপি ভারত সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ী হওয়ার লক্ষণ টের পেয়ে দেশের বিএনপিমনস্ক সংখ্যালঘুদের একটি দলকে ভারতে পাঠায় বিএনপি। হিন্দু মহাজোট নামের সংগঠনের একটি অংশকে বিএনপি পেছনে থেকে সমর্থন করে। তাদের আমন্ত্রণে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেতা এবং বর্তমানে ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় বাংলাদেশে আসেন। হিন্দু মহাজোটের একাধিক নেতা এ  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তথাগত রায় হিন্দু মহাজোটের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে নেননি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি এবং আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে কয়েকজন সংখ্যালঘু নেতা কাজ করেন। এরপরও কয়েকজন বিএনপি নেতা একাধিকবার ভারত সফরে গেছেন। তবে এবারের সফর, তা যদি দলীয় সিদ্ধান্তে না-ও হয়, এরপরও এমন খোলামেলা কথা কোনো বিএনপি নেতা বলেননি। এর কারণ কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমাদঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদবিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদ বলছেন, ‘রাজনীতি কোনো নিশ্চল বিষয় নয়। এটি গতিশীল। বিএনপির একটি রাজনৈতিক অবস্থান ছিল ভারত প্রশ্নে। পরিবর্তিত সময়ে সেটিও পরিবর্তিত হয়েছে। এটি ইতিবাচক লক্ষণ।’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভারত প্রশ্নে বিএনপির আগের নীতিকে ভুল বলে চিহ্নিত করা যাবে না। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অবস্থান মাত্র।

আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেকোনো কর্মকাণ্ডকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেছে বিএনপি। বিএনপি মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে ‘দাসত্বের চুক্তি’ বলে বারবার সমালোচনা করে এসেছে। ১৯৯৭ সালে এ চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত একে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে সমালোচনা করে গেছে বিএনপি। ফারাক্কার পানিবণ্টন চুক্তিকে বিএনপি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে সমালোচনা করেছে।

১৯৯৭ সালে স্বাক্ষর হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে বিএনপি। খোদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন, পার্বত্য চুক্তি হলে ফেনী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে। ক্ষমতায় গেলে ফারাক্কা ও পার্বত্য চুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতিও দেয় বিএনপি; যদিও তা তারা করেনি।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশ ভারত হয়ে যাবে। এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা বক্তৃতায় শুধু নয়, বিভিন্ন সময় রূঢ় আচরণে বিএনপি ভারতের প্রতি তার নেতিবাচক মনোভাব তুলে ধরে। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশে এলে আগে থেকে নির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাতে যাননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বিএনপির আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল দেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের চোরাচালান ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজারের (সিইউএফএল) জেটিঘাটে খালাস করার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি আটক করে টহল পুলিশ। অস্ত্রের চালানটি উলফার জন্য যাচ্ছিল।

এ নিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি দুটি মামলার রায় দেন আদালত। এর মধ্যে একটিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেন।

বিএনপি ভারতের সহানুভূতি পেতে আগ্রহী কেন? 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা আছে, নির্বাচনে জিততে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক দরকার। এ জন্য সব দল এই দুই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে, এটা দেখাতে চায়।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ মনে করেন, বিএনপির এই সফর এবং সেখানে গিয়ে আন্তরিক কথা বলায় একটি কথা স্পষ্ট—বিএনপি নির্বাচনে আসছে। তিনি মনে করেন, ভারতের কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক আছে। এখন সেখানে ক্ষমতায় বিজেপি এসেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে যে পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ছিল, সেই স্তরে আছে, এমনটা না-ও হতে পারে। এখন বিএনপি হয়তো বিজেপিকে বোঝাতে চাইবে যে তারা কংগ্রেস-বৈরী ছিল। বিজেপির সঙ্গে তাদের বৈরিতা নেই।

বিএনপি কি আসলেই ভারতবিরোধী অবস্থান পাল্টাচ্ছে, নাকি সামনে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলছে? কেননা একেবারে সাম্প্রতিক সময়েও তাদের একাধিক নেতা তাঁদের ভারতবিরোধী চিরাচরিত অবস্থানের আদলেই কথা বলেছেন।

গত ২৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারি অর্থ ব্যয় করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের কাছে আকুতি জানাতে ওই সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গণমাধ্যমের খবরে এটা পরিষ্কার, প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে ভারতে যাননি, তিনি তিস্তার পানিচুক্তি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে যাননি। তিনি ভারতে গেছেন ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেনদরবার করার জন্য।’

ভারত সফর শেষ করে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনার বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি; আমরা কিন্তু ওদের শান্তি ফেরত দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা ওগুলোর প্রতিদান চাই না।’

শেখ হাসিনা ‘প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি’ বলতে মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বন্ধে তাঁর সরকারের সহযোগিতার কথাই উল্লেখ করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা থেকে ধরা হয় আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অনুপ চেটিয়াকে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর উলফা, টিএনভি, এনএলএফটিসহ একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতাদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসব উদ্যোগের ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতে সহিংসতা অনেকটাই কমে এসেছে।

তবে ভারতকে দেওয়া এসব সহযোগিতা নিয়ে শেখ হাসিনার কথারও সমালোচনা করে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই যে বলেছেন ভারতকে অনেক দিয়েছেন। আমরা ভালো করে জানি না। আপনি দয়া করে কী কী ভারতকে দিয়েছেন, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করুন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, এবার বিএনপির কয়েকজন নেতা ভারতে গিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা হয়তো নির্বাচনের আগে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়াস। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে এলে বিএনপি ভারত প্রশ্নে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ নমনীয় হয়। আবার তাদের সারা বছরের কর্মকাণ্ডে ভিন্ন ধরনের চিত্র লক্ষ করেছি।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক শান্তনু বলেন, ‘২০১২ সালের শেষ দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলেছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের কথাবার্তায় পরিবর্তন দেখেছি।’ তিনি মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন নিয়ে যেকোনো দলের স্থায়ী ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকা দরকার।

বিএনপির কয়েক নেতার ভারত সফরে গিয়ে মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সত্য কথা বলে, এমন প্রমাণ কমই আছে। আমার ধারণা, তাদের নেতারা যে কথা ভারতে বলেছেন, তা তাঁদের দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তের নয়।’ তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতারা যদি এমন বলেই থাকেন যে তাঁদের অতীত ভারত-নীতি ভুল ছিল, তাহলে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে তারা এত দিন যে নিছক প্রচারণা চালিয়েছেন, তা প্রমাণিত হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানআওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানবিএনপির এ সফর দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে কি না, তা নিয়ে ফারুক খানের সন্দেহ সঠিক বলেই মনে হলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফের কথায়। দলীয় নীতিনির্ধারণী সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতাদের এই সফর না হলেও এটা যে নেহাত কারও ব্যক্তি উদ্যোগের সফর, তা মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বরং সেখানে গিয়ে বিএনপি নেতারা যে কথাগুলো বলেছেন, তাকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তাঁরা। অধ্যাপক ইমতিয়াজ উদ্দিন মনে করেন, দুটি বড় দেশের মধ্যে চীন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একধরনের মতৈক্য আছে। এবার ভারত প্রশ্নে তা এলে বরং ভালো।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর মনে করেন, বিএনপি হয়তো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চলমান প্রবণতা বুঝতে পেরেছে। তাই ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়াস নিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল সব সময় তাদের একই অবস্থান ধরে রাখবে—এটা বাস্তবতাও নয় বলে তিনি মনে করেন। দেশীয় রাজনীতি শুধু নয়, আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান তাঁর ‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘ভারতবিরোধিতা বিএনপির নির্বাচনী রাজনীতিতে সব সময় মূল বিষয় থেকেছে।’ একটা সমর্থক বা ভোটার শ্রেণি এত দিন ভারতবিরোধী চেতনার ধারক বলে বিএনপিকে বিশ্বাস করত বা সে জন্যই তারা বিএনপিকে ভোট দিত। এখন বিএনপির ভারত প্রশ্নে অবস্থানের পরিবর্তন তাদের কি বিএনপিবিমুখ করবে? অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, ‘বিএনপি তাদের সমর্থকদের পরিবর্তিত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হবে।’

360 ভিউ

Posted ১০:১৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com