এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১৩ ফেব্রুয়ারী) :: বিশ্ব ভালবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারী। দিবসটিতে প্রেমিক যুগল থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষের কাছে ভালবাসা আদান প্রদানের অন্যতম পবিত্র উপসর্য একটি লাল গোলাপ। যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চালু রয়েছে ভালবাসা-বাসি মানব হৃদয়ে। বর্তমানে দেশে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রচলন বেড়েছে।
ভালবাসা আদান প্রদানের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের মধ্যে পরির্বতনের ছোঁয়াও লেগেছে। তারপরও ভালবাসার মানুষকে বিশেষ এই দিবসটিতে একটি লাল গোলাপ উপহার দিতে এখনো ব্যাকুল হাজারো প্রেমিক যুগল। সেই কারনে ভালবাসা দিবসে এখনো অতুলনীয় নির্দশন হিসেবে সব বয়সের মানুষের মাঝে জনপ্রিয় একগুচ্ছ ফুলের পাঁপড়ি।
জানা গেছে, বছরের বিশেষ দিবস গুলোতে দেশের প্রতিটি জনপদে মানুষের মাঝে নানা জাতের ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তার ব্যতিক্রমও হচ্ছেনা এবারের ভালবাসা দিবসে।
দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফুলের গ্রাম খ্যাত বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের শতাধিক বাগান থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকার গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল সরবরাহ করা হয়েছে দেশের ‘বৃহত্তম ফুলের বাজার’ রাজধানী ঢাকার শাহবাগ ও চট্টগ্রামের চেরাগীপাহাড়ে।
তবে আগেরদিন সোমবার ফুলের চাহিদা মেটাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আগেভাগেই বিভিন্ন প্রজাতির ফুল কিনে নিয়ে গেছেন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই ফুল বেচাকেনার ধুম পড়ে চকরিয়ায়।
চাষিরা জানিয়েছেন, এবার ফুলের বিক্রি বেশি, দামও ভাল। তাই বেশি লাভের মুখ দেখার প্রত্যাশায় রয়েছেন চাষিরা।
ফুলের গ্রাম হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়ন। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এখানে সৃজন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান। বিশেষ করে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা সহ হরেক রকমের ফুল চাষ করা হয় এখানে। এ কাজে নিয়োজিত আছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক নারী–-পুরুষ শ্রমিক।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের এসব বাগানে ফুল কাটতে শুরু করেন শ্রমিকরা। দুপুরের আগে ফুল গুলো প্যাকেট ভর্তি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
মঙ্গলবার বিকালেও বরইতলী রাস্তার মাথা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ফুল ভর্তি প্যাকেট পাঠানো হয় চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়স্থ ফুলের দোকান গুলোতে।
জানতে চাইলে বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকার ফুলের দোকানদার আবিদুল ইসলাম বলেন, ভালবাসা দিবস উপলক্ষে তিনি অন্তত ১৬ হাজার গোলাপ, ১০ হাজার গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা ফুল সরবরাহ করেছেন ঢাকার শাহবাগ ও চট্টগ্রামের চেরাগীপাহাড়ে। প্রতিহাজার গোলাপ আট হাজার ও গ্লাডিওলাস ১০ হাজার টাকা মুল্যে বিক্রি করেছেন।
বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, ভালবাসা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের শতাধিক বাগান থেকে অন্তত দেড়লাখ পিস্ গোলাপ ও এক লাখ পিস্ গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাদা ফুল বিক্রি হয়েছে। একদিনের ফুল বিক্রি করে স্থানীয় বাগান মালিকরা প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় করেছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে শতাধিক ফুলের বাগান রয়েছে। গত দুই দশক ধরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে আসছেন। প্রথমদিকে অল্প জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হলেও বর্তমানে দুই ইউনিয়নে বেড়েছে চাষাবাদ।
তিনি বলেন, ‘বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে প্রায় দুইশত একর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এবারের ভালবাসা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে ফুল বিক্রিও ভাল হবে। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন চাষিরা।’
চকরিয়া উপজেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক মইনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ফুলের কদর বেশি থাকলেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম দিতে গড়িমসি করছে। ফলে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে চাষ করলেও অনেক সময় চাষীরা ফুল বিক্রি করে ভাল দাম থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, ফুল চাষকে আরো বেশি জনপ্রিয় ও চাষীদের মাঝে ভাল দাম নিশ্চিত করতে হলে পাইকারী ব্যবসায়ী চক্রের অনৈতিক প্রবণতা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে ভুমিকা পালন করতে হবে।
Posted ২:০৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta