কক্সবাংলা ডটকম(১৪ অক্টোবর) :: কোনো ব্যাংকের ভোক্তা খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি, গড় ঋণ প্রবৃদ্ধির বেশি হতে পারবে না— এমন নীতিমালা ২০১২ সালেই জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সময় সময় সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে তা স্মরণ করিয়েও দেয়া হয়। তার পরও ভোক্তাঋণের এ নীতিমালা মানছে না অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) গড় ঋণ প্রবৃদ্ধির চেয়ে ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ায় ১৮ ব্যাংককে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত চিঠি গত সপ্তাহে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধির সীমা অতিক্রম করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো— জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি ১৩টি ব্যাংকের ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধিও গড় ঋণ প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো হলো— ব্র্যাক, পূবালী, আইএফআইসি, দ্য সিটি, সাউথইস্ট, ডাচ্-বাংলা, এক্সিম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, যমুনা, শাহ্জালাল ইসলামী, মেঘনা, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ও সীমান্ত ব্যাংক।
ভোক্তাঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পেয়েছেন বলে জানান পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। ভোক্তাঋণে ভোগ বাড়ে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। ঋণ যাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না পড়ে, সেজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে। নির্দেশনার আলোকে আমরা ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনব।
গাড়ি, ফ্রিজ, টেলিভিশনের মতো সামগ্রী ক্রয়ে গ্রাহকদের ভোক্তাঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধিসহ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এজন্য উত্পাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যাংকগুলোকে উত্সাহিত করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার ব্যাংক কর্তৃক এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউজের (ইডিডব্লিউ) মাধ্যমে দাখিলকৃত সিএল বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভোক্তাঋণের প্রবৃদ্ধি মোট ঋণের প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ভোক্তাঋণের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠিতে উল্লেখ করেছে, যে উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্যেই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিয়মিত নজরদারি করার জন্য চলতি বছর সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রেও ওই নির্দেশনা বিশেষভাবে অনুসরণীয়। ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাংকের মোট ঋণের প্রবৃদ্ধির চেয়ে কোনোভাবেই যাতে বেশি না হয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকার জন্য ব্যাংকগুলোকে পুনরায় পরামর্শ দেয়া হলো।
পাশাপাশি ভোক্তাঋণ হ্রাস করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ঋণের গড় প্রবৃদ্ধির সমান বা তার নিচে আনয়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে ব্যাংকগুলোয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া ভোক্তা খাতে প্রদত্ত ঋণ যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না হয়, সে লক্ষ্যে ‘প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশনস ফর কনজিউমার ফিন্যান্সে’ বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও তদারকি বাড়ানোর জন্যও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উত্সব উপলক্ষে বছরের কিছু সময় ব্যাংকের ভোক্তাঋণ বেড়ে যায়। বিগত ছয় মাসে দুটি ঈদসহ অন্যান্য উত্সবের কারণে খাতটিতে বেশি ঋণ গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পর আমরা ভোক্তাঋণের লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, বছর শেষে মোট ঋণ প্রবৃদ্ধির চেয়ে ভোক্তাঋণ প্রবৃদ্ধি বেশি হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভোক্তা খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণ রয়েছে ভোক্তা খাতে।
Posted ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta