সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মহাসংকটে বাংলাদেশ …

সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯
229 ভিউ
মহাসংকটে বাংলাদেশ …

মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম(২৫ আগস্ট) :: প্রথমেই একটু দ্বিমত পোষণ করি, মহাসংকটে কক্সবাজার – না। মহাসংকটে বাংলাদেশ। যে সমস্যা আলোচনা করছি, সেটি আঞ্চলিক কোন সমস্যা নয়। এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভিক্তিক একটি সমস্যা।

আমরা যদি নিজেরাই সমস্যা ছোট করে ফেলি, তাহলে কি সমাধান সংকুচিত হয়ে যাবে?  এই সমস্যার আন্তর্জাতিক মাত্রাটি যাতে কখনো বিচ্যুত না হয়।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের কারণে এতদিনে মনে হচ্ছে- কক্সবাজার বোধহয় আসলেই বাজারে রুপান্তরিত হয়েছে। এতদিন হয়ত সুনসান একটি নগরী ছিল, এখন বাজার বলতে আমরা যা বুঝি ঘটনা ঘটবে, হট্টগোল ঘটবে- এ ধরণের একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তা বিশ্বের সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাতে করে এ দেশের হৃদয় যে বঙ্গবন্ধুর হৃদয় এবং একই সমান গভীরতা এ সত্যটি আমরা উপস্থাপন করেছি। একইসংগে পশ্চিমা বিশ্ব এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যাদেরকে আমরা বন্ধু রাষ্ট্র বলে ভাবি তাদের হিপোক্রেসিও আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা যে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি- এই শ্রদ্ধাশীল থাকাটা কি আমাদের অপরাধ হয়ে গিয়েছে? অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে – পরিস্থিতি আমরাই নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে এসেছি এবং এর একক সমাধানও যেন বাংলাদেশকেই করতে হবে।  তাতো নয়- যদি উদ্ভাস্তু সমস্যা যদি আন্তর্জাতিক আইনেই সমস্যা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চরমভাবে শ্রদ্ধাশীল থেকে তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে থাকে তাহলেত বাংলাদেশ প্রশংসনীয় একটি ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশকে কেন এত ত্যাগ আর বিসর্জন দিতে হবে? সেই প্রশ্নটি যৌক্তিকভাবে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যাতে তুলে ধরতে পারি।

কিন্তু সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করেছে যাদের উপর আমরা প্রাথমিক আস্থা রেখেছিলাম, আরেকটু খুলে বলি বিষয়টা যখন সমস্যা শুরু হল তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে এগিয়ে এসেছিল তখন কিন্তু আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়  থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতটিকে খুব একটা ভালভাবে গ্রহণ করিনি।  বরঞ্চ আমরা কিন্তু তখন চেয়েছিলাম, দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমস্যার সমাধান করব এবং রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিকরণ হোক সেটি কিন্তু আমরা চায়নি বা প্রত্যাখ্যান করেছি। এর কারণ ছিল নিশ্চই কেননা আমরা ভেবেছিলাম আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত, আমরা ভেবেছিলাম আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র চীন , তারা যদি আমাদের পাশে থাকে তাহলে আমাদের চিন্তা করতে হবে কেন ! তাদের সাহায্য নিয়েই ত এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু দেখলাম- কে বন্ধু, কে শত্রু, সেটা সবসময় এক থাকেনা এবং দেখলাম সুসময়ে অনেকে বন্ধু বটে হয় – দুঃসময়ে হায় হায়, কেউ কারো নয়। এই কথাটিই যেন প্রতিফলিত হল।

এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তখন আশাহত হল । কিন্তু দেখুন – এতদিন পর কিন্তু ঠিকই এখন কিন্তু আমাদের আন্তর্জীতিকরণের দিকে যেতে হচ্ছে। এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট- দ্বিপাক্ষিক কোন আলাপের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান হবে এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই উপমিত হওয়া  যাচ্ছে- মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান সম্ভব নয়।

আমি একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করি। আমাদের দুটি মাত্রা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। একটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে এবং সেই গণহত্যার বিষয়টি আমরা কিভাবে গ্রহণ করব এবং আন্তর্জাতিক আইন বিবেচনায় আমাদের ভূমিকাটি কি হবে । দ্বিতীয়ত- এগার লাখ বা ততোধিক রোহিঙ্গাদের যে স্থান আমরা করে দিয়েছি তার কারণে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকার কি কি পদক্ষেপ নিতে পারে তা ও আমাদের মাথায় রাখা দরকার।

এখন আমরা একটু আশান্বিত হয়েছি, কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রাথমিক যে তদন্ত করেছে বা যেভাবে এগুচ্ছে তাতে আমাদের কাছে মনে হয় – হয়ত অচিরেই এই গণহত্যা বিচারের স্বীকৃতি পাবে এবং আমরা দেখতে চাই একবিংশ শতাব্দিতে এরকম একটি ঘটনা যাতে ধামাচাপা পড়ে না যায়। এর পেছনে যারাই জড়িত তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এসব কূটনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করতে পারি।

আর এমন কোন ব্যবস্থা আমাদের সরকারের তরফ থেকে গ্রহণ করা উচিত হবেনা যেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভূল একটি বার্তা দিতে পারে।

আপনারা কক্সবাজারবাসীরা আমার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু আমি কখনো মনে করিনা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করে দেওয়া উচিত। যদি অন্য কোথাও এদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই বার্তাটি পৌছাবে যে আমরা যেন তাদেরকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না হলেও দীর্ঘকালীন একটা ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে এসেছি। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিন্তু মুচকি মুচকি হাসবে এবং তারা ভাববে- যাক বিষয়টা মনে হয় সমাধান হয়ে যাচ্ছে।

দেখুন আন্তর্জাতিক উদ্ভাস্তু সমস্যার তিনধরণের সমাধান হতে পারে । এক – প্রত্যাবর্সন , তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে । আন্তর্জাতিক আইনে অবশ্য এটিও আছে তাদেরকে বলপুর্বক ফেরত পাঠানো যাবেনা। এরজন্য এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে যাতে তাদের নিরাপত্তার জন্য কোন ধরণের সন্দেহ না থাকে।

দ্বিতীয়ত হতে পারে- তৃতীয় কোন রাষ্ট্রে  অর্থাৎ মধ্যবর্তী রাষ্ট্রসমূহ রোহিঙ্গাদের পালন করবে।

তৃতীয়ত যেটি আন্তর্জাতিক আইন স্বীকার করে সেটি হচ্ছে- স্থানীয়দের সঙ্গে শরনার্থীদের একীভূত করে ফেলা । যেটি আমরা বলছি- “না, এটি আমাদের জন্য সম্ভব নয়”। কেননা, আমরা এমনিতেই অন্যতম জনবহুল একটি রাষ্ট্র। আমরা এমনিতেই জনগণের ভারে জর্জরিত।

সুতরাং আমরা তৃতীয় পন্থা যদি বাদ দেয়, তাহলে আর যেই দুটি পন্থা থাকে সেই দুটি পন্থা বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘে, জাতিসংঘের বাইরে ওআইসিতে সবখানেই কূটনৈতিক সক্রিয়তা বজায় রাখতে হবে।

যত দোষ , নন্দ ঘোষ – থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়ে থাকে , তাহলে কে তাদের পাসপোর্ট দিয়েছে, তাদের যদি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়ে থাকে কে তাদের সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তারা যদি জমি দখল করতে পারে তাহলে কারা তাদের সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।  তাহলে প্রশাসনের কেন সেখানে দৃষ্টি নেই , তাহলে দোষী আমরাও।  এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। এজন্য শুধু রোহিঙ্গাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে লাভ হবেনা।

আমাদের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতির উপর যে চাপ পড়েছে সেই বাস্তবতায় নেতিবাচক প্রভাবকে সীমিত রেখে দ্রুততম সমাধান করে রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।

————————————————–

[ লিখাটি একটি বক্তব্যের লিখিত রূপ।  বক্তব্যটি জাতীয় প্রেসক্লাবে গত ২৬ জুলাই  কক্সবাজার ফোরাম, ঢাকা আয়োজিত “রোহিঙ্গা সমস্যাঃ মহাসংকটে কক্সবাজার” গোলটেবিল আলোচনায় আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর  রহমান।  ]

অনুলেখকঃ মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম

229 ভিউ

Posted ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com