আবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী(২৭ ফেব্রুয়ারী) :: মহেশখালীতে ফের টমটম দূর্ঘটনায় সিদরাতুল মুনতাহা নামের ৭ বছরের এক মাদ্রাসা ছাত্রী নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার(২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ ঘটিকার সময় উপজেলার হোয়ানকের টাইম বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বেপরোয়া ভাবে আসা একটি টমটম মাদ্রাসার ছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা (৭) কে চাপা দিলে সে গুরুতর আহত হয়।
পরে মুমুর্ষ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে জমজম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহত শিশু সিদরাতুল মুনতাহা স্হানীয় নূরানী মাদ্রাসার ছাত্রী ও উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের খোরসা পাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের মেয়ে বলে জানা গেছে।
এদিকে কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না টমটম দূর্ঘটনা। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চালকের কারনেই প্রতিনিয়ত টমটম ( ইজিবাইক) মানুষ খুন করেই চলছে মহেশখালীতে।
গত ১ মাসে মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে টমটম ও ডাম্পার দূর্ঘটনায় এই পর্যন্ত স্কুল ছাত্র/ছাত্রীসহ ৮ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে।গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সকালে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পুরান বাজার এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় টমটম চাপা দিলে ঘটনাস্হলেই প্রাণ হারান শাওয়াল নামের ৭ বছেরের এক শিশু ।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পদ্মপুকুর পাড়ে টমটম দূর্ঘনায় নিহত হন হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজীর পাড়ার মৃত শাহ আলমের পুত্র মনির আহমদ প্রকাশ মনু (৪৩) । এর আগে উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বালুর ডেইল ও মাতারবাড়িতে ডম্পার ও টমটম দূর্ঘনায় স্কুল ছাত্র/ছাত্রীসহ ৫ জন নিহত হয়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার(২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে টমটম চাপায় নিহত হন মাদ্রাসার ছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা (৭)। এদিকে মহেশখালীর রাস্তায় প্রতি নিয়ত খুনের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ঘটনার পরে কিছু অতি উৎসাহী দালাল চক্রের মাধ্যমে বেচা-কেনা হয় বিভিন্ন দূর্ঘটনায় নিহতদের লাশ।
এভাবেই চলছে মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন দ্বারা মানুষ খুনের মহোৎসব।আর টাকার বিনিময়ে ধামা চাপা দিয়ে চলছে এসব মৃত্যুর ঘটনা। এদিকে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বেড়ে চলেছে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক বা টমটম গাড়ির ব্যবহার।
সড়কে গাড়ি চালানায় অভিজ্ঞ নয় এমন যে কেউ প্রতিনিয়ত স্বল্প মূল্যের এই বাইক নিয়ে নামছে ভাড়া মারার কাজে। নামসর্বস্ব বিভিন্ন সংগঠনের অধীনে নামা এসব গাড়ি প্রতিদিনই কোনোনাকোন ভাবে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে। আর এই টমটমের শিকার হচ্ছে নিরীহ যাত্রীরা।
প্রতিনিয়ত অসংখ্য যাত্রী ধারাবাহিক ভাবে হতাহত হয়ে আসলেও এসব দেখার জন্য যেনো কেউ নেই। মূলতঃ এসব গাড়ি সংগঠনের পেছনে এলাকার কতিপয় রাজনৈতিক নেতার হাত থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এসব গাড়ির যত্রতত্র ব্যবহার। এমন পটভূমিতে বিব্রত খোদ মহেশখালীর প্রশাসনও।
সূত্র জানায় -বিগত বছরগুলোতে মহেশখালীর সড়ক, উপ-সড়কগুলোতে শঙ্কাপূর্ণ ভাবে বেড়ে চলেছে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক বা টমটম গাড়ি। কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণের বাইরে সড়কে ধারাবাহিক ভাবে এসব গাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বেড়েছে নাগরিক সমস্যাও।
জানা গেছ-সরকার টমটমের রেজিস্ট্রেশন কিংবা সড়কে চলাচলের অনুমোদন দেয়নি। ব্যাটারি চালিত টমটম সড়কে চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) জানিয়েছে -তিন চাকার এই হাল্কা যানবাহনটি অবৈধ। এটি জনযোগাযোগের জন্য নিরাপদ নয় বিধায় পৃথিবীর কোনো দেশের সড়কে এ ধরণের যানবাহনের ব্যবহার নেই।
তাছাড়া বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল এই শ্রেণীর বিশাল সংখ্যক গাড়ির কারণে মহেশখালী দ্বীপের মতো একটি মফস্বল এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট লেগেই আছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, সড়কে বিরক্তি ও দুর্ঘটনা এড়াতে এমনসব গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ কঠোর উদ্যোগ রয়েছে।
জেলা শহরেও এমন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় কঠোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু মহেশখালীর মতো একটি যোগাযোগ সংকটপূর্ণ দ্বীপ এলাকায় অবৈধ এসব গাড়ির নিয়ন্ত্রণহীণ ব্যবহার সম্প্রতি একটি অন্যতম জনভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
এনিয়ে বিভিন্ন সময় মহেশখালীর প্রশাসনকেও অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সুবিধাবাদী একটি প্রভাবশালী শ্রেণীর কারণে মহেশখালীতে এই অবৈধ বাহনটি পুরুদমে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে এসব সূত্রের উঙ্গিত।
জানা গেছে -মোটরযান (সংশোধনী) আইন, ১৯৮৮ ও মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর অনুবলে দেশে সড়কে সবধরনের মোটরযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আইন বলে নিয়ন্ত্রণ ও দ-ের বিধান রয়েছে। ব্যাটারি চালিত ৩ চাকার এই নবতর যানবাহনটি আইনের অধিভুক্ত না হওয়ায় এধরণের যানবাহনের বেলায় দন্ড বা জরিমানার সুযোগ কম।
এই বিষয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন -যেহেতু অধিকতর আনাড়ি চালকরাই এসব গাড়ি চালিয়ে থাকে সেহেতু সড়কের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যাটারি চালিত এসব ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে মহেশখালীতে এমন সব যানবাহনের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে কোনও প্রকার মোবাইল কোর্টের তৎপরতাও চোখে পড়ে না।জানাগেছে -পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চিনের প্রযুক্তিতে সেসব দেশের যন্ত্রাংশ নিয়ে গত কয়েক বছর আগ থেকে এক শ্রেণীর মিডিয়া বা দালালের মাধ্যমে প্রথমে এই মফস্বল উপজেলা শহরে এ ধরণের যানবাহনের প্রচলন শুরু হয়।
পরে দেশে বিভিন্ন এজেন্ট স্থানীয় ভাবে এসব গাড়ি বিক্রির ব্যবসা শুরু করলে ক্রমান্বয়ে সড়কে বাড়তে থাকে কম মূল্যের এসব গাড়ির ব্যবহার । দেশের বিভিন্ন শহর এলাকা থেকে বিতাড়িত হওয়া এই ধরণের গাড়িও দেদার ঢুকে পড়ে প্রান্তের এমনসব উপজেলায়। বিআরটিএ থেকে এমন গাড়ির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য এজেন্টগুলোকে সতর্ক করা হলেও কার্যতঃ কেউই মানছেনা এসব আদেশ। যার দরুন এমন গাড়ির সহজলভ্যতার সুযোগ নিচ্ছে এলাকার বেকার যুবক ও অনাড়ি চালকেরা।
মূলত অদক্ষ চালকের কারণেই প্রতিনিয়ত এমন দুর্ঘটনা ঘটে চললেও এমন দুর্ঘটনা থেকে সুযোগ নিচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা অনুমোদনহীন বিভিন্ন টমটম মালিক সমিতি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন। কথিত ক্ষতিপূরণের আড়ালে এসব লাশ পড়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতাও চলছে সমান তালে।
সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সদস্য মহেশখালীর এমন সমস্যার বিষয়টি কমিটিতে উত্থাপন করলে মহেশখালী থানার ওসি -বিভিন্ন নেতার তদবীরের কারণে এই পরিন্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে তথ্য দেন।
এই বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ( পিপিএম) বার জানান,মহেশখালীতে ঠিক কত সংখ্যক টমটম গাড়ি ও এই সংক্রান্ত সমিতি রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান তার কাছে নাই। আর সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান,বিভিন্ন নেতার তদবীরের কারণে এই পরিন্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
Posted ১০:২৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta