রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মাদকবিরোধী অভিযান : বহাল তবিয়তে কক্সবাজার-টেকনাফের ৯ শতাধিক ইয়াবা কারবারি

মঙ্গলবার, ২২ মে ২০১৮
623 ভিউ
মাদকবিরোধী অভিযান : বহাল তবিয়তে কক্সবাজার-টেকনাফের ৯ শতাধিক ইয়াবা কারবারি

তোফায়েল আহমেদ(২১ মে) :: দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গত ১৫ দিনে বিশেষ পুলিশ-র‍্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আরো ১২ জন নিহত হয়েছে। এর ফলে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হবার পর রোববার পর্যন্ত মোট ১৮ জন নিহত হবার কথা নিশ্চিত করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী। কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতরা সবাই মাদকব্যবসা এবং পাচারের সাথে জড়িত এবং চিহ্নিত অপরাধী। তাদের নামে মামলাও রয়েছে বলে জানান তারা।

জানা যায়, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৬০ জন গডফাদারসহ ১১৫১ জন মাদক কারবারির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তেই রয়েছে ৯ শতাধিক ইয়াবা কারবারি।

কিন্তু দেশজুড়ে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও টেকনাফ সীমান্তে এখনো কোনো ধরনের অভিযান চালানো হয়নি। এ পর্যন্ত বড় কোনো ইয়াবা কারবারি আটকের খবরও পাওয়া যায়নি। সীমান্তের ইয়াবা গডফাদাররা রয়েছে বহাল তবিয়তেই।

অথচ টেকনাফ বাংলাদেশের ‘ইয়াবার গেটওয়ে’ হিসেবে পরিচিত। মিয়ানমারের প্রায় ৪০টি ইয়াবা কারখানায় উত্পাদিত ইয়াবার চালান আসে একমাত্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গেল সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও টেকনাফে এখনো ইয়াবাবিরোধী কোনো অভিযান চালানো হয়নি।

সোমবার রাতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল  বলেন, ‘আমরা কেউ বসে নেই। রাতেই (গতরাত) আমরা ইয়াবা কারবারিদের ধরার জন্য সাঁড়াশি অভিযানে নামব।’

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত শহর টেকনাফ ও উখিয়া থেকে এই চুনোপুঁটিরা পালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব শেষ তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিরা কেউ ঘরে না থাকলেও গডফাদাররা এলাকা ছেড়ে যায়নি। টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা পাচারের ঘাটগুলো এখন খাঁ খাঁ করছে। আর সীমান্তের চুনোপুঁটি ইয়াবা কারবারিদের ঘরে ঘরে বিরাজ করছে ‘ক্রসফায়ার আতঙ্ক।’

সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতিতে এবার একেবারে ভিন্ন রূপ। দেশজুড়ে ইয়াবাবিরোধী অভিযান চললেও টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা গডফাদারদের মধ্যে কোনো ভীতি নেই। তাদের বেশির ভাগ ঘর-বাড়িতে না থাকলেও এলাকা ছেড়ে যায়নি। গডফাদাররা এমন পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে।

সীমান্তের ইয়াবা গডফাদার হিসেবে পরিচিত জনপ্রতিনিধিরা গাঢাকা দিলেও এলাকা ছেড়ে যায়নি।

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মৌলভি মুজিবুর রহমান, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ আহমদ, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবদুল্লাহ, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নুরুল হুদা, জামাল হোসেন মেম্বার, বাবুল মেম্বার, সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আকতার কামাল, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের জয়নাল মেম্বারসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিরা গাঢাকা দিয়েছে। তবে তাদের কেউ এখন পর্যন্ত নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে যায়নি।

এমনকি ইয়াবা কারবারি হিসেবে তালিকাভুক্ত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নুরুল হুদা ও বাবুল মেম্বার যথারীতি প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে যাচ্ছে। সালিস-বিচারেও তারা উপস্থিত থাকছে। নুরুল হুদা মেম্বার রাতে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দেড় ডজনের মতো ইয়াবার মামলা। সব মামলাতেই সে পলাতক রয়েছে। আর ইয়াবা কারবারি বাবুল ও জামাল মেম্বার রাতের বেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইয়াবার চালান ধরার কাজে সহযোগিতার কথা বলে দিব্যি এলাকায় অবস্থান করছে।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শামসুল হক বাবুল গতকাল রাতে মোবাইলে বলে, ‘আমি বর্তমানে কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছি। এলাকা ছেড়ে কোথাও যাইনি। আমার বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবারের যে অভিযোগ তা সর্বৈব মিথ্যা।’ অন্যদিকে মেম্বার নুরুল হুদার সঙ্গে মোবাইলে বারবার ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি মোবাইল ধরেননি। ওই ইউনিয়নের ইয়াবা কারবারি মেম্বার জামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।

একই ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ আলী জানায়, জামাল হোসেন, বাবুল মেম্বার ও নুরুল হুদা মেম্বারকে মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে বসতে দেখা যায়।

টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, ‘সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের কোথাও চোখে পড়ছে না। তারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে জেনেছি। তালিকাভুক্ত কারবারিদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে কজন কারবারির বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।’

তবে ইয়াবা কারবারিদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, তালিকাভুক্ত কারবারিরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা ঘরে অনুপস্থিত থাকলেও এলাকা ছেড়ে যায়নি।

টেকনাফ সীমান্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর, এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই এবং তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি মৌলভী মুজিবুর রহমানকে বিশেষ প্রয়োজনে গত দুই দিনে কয়েকবার ফোন করেছেন। তিনি যথারীতি মোবাইল ধরলেও কোথায় আছেন তা জানাতে রাজি হননি।

সীমান্তের লোকজন জানান, ইয়াবা গডফাদাররা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আপাতত গা ঢাকা দিলেও চুনোপুঁটিরা ক্রসফায়ারের ভয়ে দুবাই এবং সৌদি আরব পাড়ি দিতে বর্তমানে অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকায়।

ইয়াবাসহ মাদকপাচার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানকে (র‌্যাব) কঠোর নির্দেশনা দেন মাদক কারবারিদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে আসার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর র‌্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা দেশজুড়ে মাদক ও ইয়াবা কারবারিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেন।

চট্টগ্রামের ইয়াবার হাট হিসেবে পরিচিত বরিশাল কলোনিতে দুই ইয়াবা কারবারি বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ার পর টেকনাফ সীমান্তে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও গডফাদাররা বহাল তবিয়তে রয়েছে। তবে টেকনাফ সীমান্তে বড় বড় ইয়াবার চালান বন্ধ হয়েছে বর্তমানে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। যেভাবে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তা ঠেকাতে তারা বহুভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকব্যবসার সাথে সন্ত্রাসী-অস্ত্রবাজরা জড়িত হয়ে পড়েছে এবং যেখানেই তাদের চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে সেখানেই তারা আক্রমণ করে বসছে।

“আক্রমণ করলে তো পাল্টা আক্রমণ হবেই, সেই কাউন্টার এ্যাটাকেই এ ঘটনাগুলো ঘটছে” – বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে মাদকবিরোধী প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে মানুষকে সচেতন করতে রোববার নিরাপত্তা বাহিনী ঢাকায় স্টিকার বিতরণ কর্মসূচি পালন করে।

623 ভিউ

Posted ৩:০০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ মে ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com