মার্কিন অর্থনীতির আকার এখন ২০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রসারণ হয়েছে বলে এক সরকারি প্রতিবেদনে জানা গেছে। এতে মার্কিন অর্থনীতি এখন উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজে এক মন্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছি। যেদিকেই তাকাই, সেদিকেই আমরা মার্কিন অর্থনীতির অলৌকিকত্বের প্রভাব দেখতে পাই।’
প্রণোদনা প্রদান এবং বিপুল আকারে কর কর্তনের ফলে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মার্কিন অর্থনীতিতে গতি বৃদ্ধি হতে দেখা যায়।
তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এ আকস্মিক গতি হয়তো কিছু ক্ষণস্থায়ী কারণে হয়েছে, এসবের মধ্যে আছে চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের এককালীন একটি প্রভাব।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের সামান্য বেশিতে উন্নীত হয়েছে। এ হার হোয়াইট হাউজের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং গত কয়েক বছরের যে ধারা ছিল, তার চেয়ে বেশি।
ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বের জন্য অর্থনৈতিক হিংসার বিষয় এবং একটার পর একটা বাণিজ্য চুক্তি হতে থাকায় আমরা এখন আরো অনেক বড় অংকের প্রবৃদ্ধি দেখতে পারব আর সেগুলো হবে দারুণ।’
অবশ্য ট্রাম্পের এ উচ্ছ্বাসের প্রভাব ওয়াল স্ট্রিটে দেখা যায়নি। তবে বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন অর্থনীতি চূড়ায় পৌঁছেছে এবং হতাশাজনক আয় ও বাণিজ্যযুদ্ধের ভীতিতে বাজারে মন্দাভাব দেখা গেছে।
এপ্রিল-জুন সময়কালে প্রায় চার বছরের মধ্যে ভোক্তা ব্যয় সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। এ সময় মার্কিনিরা গাড়ি কেনা ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, ইউটিলিটি, রেস্তোরাঁ ও হোটেল খাতে আরো বেশি ব্যয় করেছেন বলে বাণিজ্য বিভাগের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
পণ্য ক্রয়ের পরিমাণ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ক্রমবর্ধমান গাড়ি খাত। এছাড়া এ সময়কালে সেবা খাতে ব্যয় ৩ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে আরো একটি অস্বাভাবিক সূত্র থেকেও প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী হয়েছে, আর সে খাতটি হচ্ছে রফতানি। এ খাতে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং চীনা শুল্কের মুখোমুখি হওয়া তেল ও সয়াবিনের উচ্চমাত্রার রফতানি এ খাতকে চাঙ্গা করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাইয়ে বেইজিং এসব পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার আগে চীনা আমদানিকারকরা পণ্যগুলো মজুদ করতে থাকেন। এতে এ প্রান্তিকে রফতানি বেড়ে যায়, তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে তৃতীয় প্রান্তিকে এ হার অনেকটাই নেমে এসে প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দেবে।
তবে আকস্মিকভাবে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতির যে পতন হয়েছে, সেটিকেই ট্রাম্প তার নিজের বাণিজ্যনীতির আরো একটি বিজয় হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে বলেন, সম্ভবত এ প্রতিবেদনের অন্যতম বড় জয় এটি এবং অবশ্যই এটি একটি বড় ব্যাপার। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমার কাছে খুব প্রিয়, কারণ আমরা বারবার বিশ্ব দ্বারা লুণ্ঠিত হচ্ছিলাম আর এখন বাণিজ্য ঘাটতি ৫ হাজার কোটি ডলার কমে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, আমদানি মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যা গত আড়াই বছরের সর্বনিম্ন। এছাড়া রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের ১ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
বড় আকারে হ্রাসের কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি হবে তা পুষিয়ে নিতে হোয়াইট হাউজ দ্রুততর প্রবৃদ্ধির আশা করছে। তবে এরই মধ্যে ফেডারেল কর আহরণ কমে আসছে এবং বাজেট ঘাটতি বাড়ছে, একই সঙ্গে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণের ব্যয়ও বেড়ে গেছে।
প্যান্থিয়ন মাইক্রো-ইকোনমিকসের ইয়ান শেফার্ডসন বলেন, ইনভেনটরি এবং বাণিজ্য অবস্থার পরিবর্তন ছাড়াও কর কর্তনের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে আসায় তৃতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এক গবেষণাপত্রে তিনি বলেন, বার্তাটা হচ্ছে, যদি আপনি আপনার পৌত্রদের থেকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার করে তা অর্থনীতিতে ছুড়ে দেন, তবে অর্থনীতি কিছু সময়ের জন্য দ্রুত বাড়বে।