সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মিয়ানমারের রাখাইনে আরসার কার্যক্রমের সত্যতা

বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭
302 ভিউ
মিয়ানমারের রাখাইনে আরসার কার্যক্রমের সত্যতা

কক্সবাংলা রিপোর্ট(১২ অক্টোবর) :: মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার ঘটনার প্রেক্ষিতে যারা প্রতিনিয়ত মুসলিম রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছেন, তারা হয়তো এ বিষয়ে একমত হবেন যে তাদের দুর্দশা আজ বা কাল যেকোনো সময় রাজ্যটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনেক তথ্য।

গত ২৫ আগস্ট দিনের শুরুতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ত্রিশটি তল্লাশি চৌকিতে যে হামলা হয়েছিল, তার পাল্টা জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। সেনাবাহিনীর পাল্টা অভিযানের মুখে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলার জন্য মিয়ানমার সরকার ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ নামের সংগঠনকে দায়ী করেছে। এই সশস্ত্র সংগঠনটিও বলেছে যে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে।

রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা আগে শোনা গেলেও এই সংগঠনটির নাম আগে শোনা যায়নি। বুঝা যাচ্ছে, আরসা নামের এই ছায়া সংগঠনটি রাখাইনে বিদ্রোহীদের একটি ভিত্তি তৈরি করতে চাইছে।

ইতিমধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে এবং বলছে রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’রা দায়ী।

কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাসহ আরসা সম্পর্কে জানে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝা গেল, আরসা নামের এই সংগঠনটির কৌশল বেশ দুর্বল এবং বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এদের সমর্থন করে না।

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২৫ অগাস্টের হামলাগুলো সাধারণ ছিল, কয়েকজনের একটি দল ছিল যাদের হাতে ম্যাচ ও বাঁশের লাঠি ছিল, তারা আত্মঘাতী হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে মংডুর আলেল থান কিয়াউ-এর পুলিশ পোস্টে সবচেয়ে বড় হামলা হয়েছিল।

ওই এলাকা পরিদর্শনের সময় পুলিশ কর্মকর্তা অং কিয়াই মো সাংবাদিকদের বলেন,হামলা যে হবে এমন তথ্য তাদের কাছে ছিল এবং আগের রাতেই স্থানীয় কর্মকর্তাদের ব্যারাকে সরিয়ে নেয়া হয়।

তিনি জানান, ভোর চারটার দিকে সমুদ্রের তীর ধরে দুটি গ্রুপ আসে, প্রত্যেক গ্রুপে ৫০০ করে লোক ছিল। তারাই হামলা শুরু করে। সমুদ্রের পাড়েই ছিল এক অভিবাসন কর্মকর্তার বাড়ি, তাকে প্রথমেই হত্যা করে তারা। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা গোলাগুলি শুরু করলে তারা পিছু হটে যায়, ১৭ জন নিহত হয়।বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মুখেও একই বিবরণ শুনি আমি।

রাখাইন থেকে কিভাবে তিনি পালিয়ে এলেন এ বর্ণনা দেবার সময় তিনি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ২৫ অগাস্টের সেনা অভিযানের পাল্টা জবাব দিতে যেভাবে তারা গ্রামবাসীকে উদ্বুদ্ধ করছিল তা ঠিক ছিল। তারা ম্যাচ ছুরি দিয়ে কিছু তরুণকে উৎসাহ দিচ্ছিল, কাছের পুলিশ স্টেশনে যেন তারা হামলা চালায়।আরসার কাছে অস্ত্র আছে অনেক। গ্রামবাসীদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন লোক আরসার কথা অনুযায়ী কাজ করে। এরমধ্যে কয়েকজন মারাও যায়।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২০ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে আমার কথা হয় যে চার বছর আগে আরসায় যোগ দিয়েছিল। ওই যুবক জানান, আরসার নেতা আতাউল্লাহ ২০১৩ সাল তাদের গ্রামে এসে বলেছিলেন রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করার এখনই সময়।

তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি গ্রাম থেকে পাঁচ থেকে দশজন করে সদস্য চান তিনি। পরে তাদের গ্রাম থেকে কয়েজনকে ধরে নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে বোমা প্রশিক্ষণ দেয়ও তারা।আরসার নেতার কথায় ওই যুবকের গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দাই উৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তাদের খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতো তারা।

তাদের হাতে থাকতো ধারালো বাঁশের লাঠি, সবাই যেন মসজিদে যায় সেটিও লক্ষ্য করা হতো। ওই সময়েই এই যুবক আরসার সঙ্গে যোগ দেয়।তবে তাদের হাতে কখনো বন্দুক দেখেননি তিনি।

‘বিশ্বের নজর কাড়ার চেষ্টা’

২৫ আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে ওই তরুণ জানান, ওই দিন তিনি গুলির শব্দ শোনেন। কিছুদূরে আগুনও জ্বলতে দেখেন।

স্থানীয় আরসা কমান্ডার (যাদের তারা ‘আমির’ বলেন) তাদের গ্রামে এসে বলেন সেনারা আক্রমণ করতে আসছে, তোমরা মরতে যাচ্ছো, শহীদের মতো জীবন দাও।

এ কথা শুনে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ ছুরি ও ধারালো বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে সেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তখন অনেকে আহত হয়। অনেকে মারাও যায়। এরপর অনেকে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করে। পালিয়ে আসার সময় রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরাও তাদের হয়রানি করে বলে জানান ওই যুবক।

তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এমন ব্যর্থ হামলার চেষ্টা করলো তারা?

জবাবে ওই যুবক জানান, ‘আমরা বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে চাইছিলাম। অনেকদিন ধরে কষ্ট করেছি। আমরা যদি মারাও যাই, তাহলেও কারো কাছে এটা কোনো বিষয় হবে না।’
আন্তর্জাতিক কোনো জিহাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা এমন কথা নাকচ করে তিনি বলেন যে রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য তারা লড়ছেন।আরসার সদস্যদের সঙ্গে ওই যুবক ও গ্রামের আরো অনেকে শেষ মুহুর্তের হামলায় যোগ দেন।

পাকিস্তান বংশোদ্ভুত রোহিঙ্গা আতাউল্লাহ, ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার পর আরসা’র কার্যক্রম চালু করেন। একটি ভিডিও তিনি প্রকাশ করেন যেখানে তার সঙ্গে দেখা যায় সশস্ত্র যোদ্ধা যারা মুখ ঢেকে আছে।

তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে হামলা চালানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্য চান, আরাকান (রাখাইন রাজ্যের আরেক নাম) যে রোহিঙ্গাদের ভূমি এটাও দাবি করেন তিনি।

রাখাইনে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে আরসার কোনো বিবাদ নেই সেটিও এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করেন আরসার এই নেতা।

আরসার প্রধান দাবি হচ্ছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব এবং সমান মর্যাদা দিতে হবে।

তার বক্তব্য বা ভিডিওতে কোথাও এমন বক্তব্য নেই যে তিনি জিহাদ করছেন, তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথাই বারবার বলছেন।

মিয়ানমারের সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি(আরসা)-কে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে।

আরসার নেতা আতাউল্লাহর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে এমন সন্দেহও করা হচ্ছে।

তবে ব্যাংককভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস বলছেন-‘আতাউল্লাহও তা তার মুখপাত্রগণ এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তারা গোষ্ঠীভিত্তিতিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন করছেন। তাদের কিন্তু আন্তর্জাতিক জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, এখনো তেমনটা দেখিনি আমরা। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে লড়ছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জিহাদী কোনোটাই তারা নন।’

জনসংখ্যায় ভারসাম্য আনা?

রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বৌদ্ধরা বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। দু’পক্ষের মিলিশিয়াই হামলায় যুক্ত হয়েছে, হতাহত হয়েছে বহু। আর সহিংসতা থেকে বাঁচতে রাখাইনে ছেড়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

বড় সংখ্যক রোহিঙ্গাই এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারে বর্ণনা করা হয় ‘বাঙালি’ বলে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা হচ্ছে ‘বিদেশি’ – বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী – যাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আলাদা।

মিয়ানমারের বেশিরভাগ বার্মিজ মনে করে রোহিঙ্গা মুসলিম নয়, সেখানে তাদের ওপরেই হুমকি আছে।

আর ২৫ অগাস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অভিযান চালিয়েছে তাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞে’র অন্যতম উদাহরণ বলা যায়। এমন পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে দেশটিতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যার সংখ্যা সেখানকার অমুসলিমদের সংখ্যার একটা ভারসাম্য চলে আসছে।
ফলে প্রশ্ন জাগে রাখাইনে আরসা কিভাবে তার কার্যক্রম চালাবে?

সীমান্তে হামলা চালানো অনেক কষ্টকর হবে এবং এমনটা বাংলাদেশও সহজভাবে নেবে না বা এমন পরিস্থিতি হোক সেটাও তারা চায় না।

ইতিমধ্যেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে সংকটের মধ্যে আছে বাংলাদেশ, আর কোনো ধরনের সংঘাতেও জড়াতে চায় না দেশটি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আরসার যে নেতা আছে এবং আরসা’র ‘আমিরের’ সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে ওই যুবকের। যদিও আতাউল্লাহর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই তার।

ওই যুবক বলছে আরসা’র পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই তার।

আশ্রয়কেন্দ্রে যত মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের সবাই আরসার অবস্থান সম্পর্কে জানে এবং সংগঠনটি নিয়ে কথা বলার সময় কিছুটা ভয়েই কথা বলছিল তারা।

আগস্টে হামলার পর আরসার সদস্যরা অনেককে হত্যা করেছে এমন খবর রয়েছে।
তবে রোহিঙ্গারা একটা বিষয়ে একমত যে ১৯৫০ সালের পর এই প্রথম মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছে এই সংগঠনটি এবং এ জন্য তারা অনেকের সমর্থনও পাচ্ছে।

302 ভিউ

Posted ৫:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com