কক্সবাংলা ডটকম(২০ সেপ্টেম্বর) :: আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার—এমন স্লোগান দিলেই চলবে না, আচার-আচরণে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।’
শরণার্থীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ প্রয়োজনে একবেলা খেয়েও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে। কিন্তু মিয়ানমারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক। তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, নিরাপদ রাখতে হবে। আশ্রয় দিতে হবে। তাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার চলবে না।’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি বৃহস্পতিবার সেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া নাগরিক সংবর্ধনার শুরুতেই এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠান ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সন্ধ্যার পর থেকেই উপচেপড়া ভিড় জমে অনুষ্ঠানস্থল ম্যানহাটনের ম্যারিয়ট হোটেলে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্য যে, মিয়ানমারে যে ঘটনা ঘটেছে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, মেয়েদের ধর্ষণ করা—এমন পরিবেশ-পরিস্থিতির যেখানে সৃষ্টি, সেখান থেকে দলে দলে মানুষ এসেছে। কী করব? মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর যেন চাপ সৃষ্টি হয়। তাদের নাগরিক তারা ফেরত নিয়ে যাবে, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে।’
কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে গিয়েছিলাম, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শুধু নিজেদের কথা মনে হয়েছে। একদিন এভাবে ওই হানাদার পাকিস্তানিদের কারণে এ ঘর থেকে ও ঘরে আমাদের আশ্রয় খুঁজে বেড়াতে হয়েছে। ঘরবাড়ি সব জ্বালিয়ে ছারখার করেছে। মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষও তো আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ছিল। আজ যখন তারা বিপদে পড়েছে, অবশ্যই তাদের জায়গা দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেছে—এত মানুষের খাবার দেবেন কীভাবে? তাদের একটা কথাই বলেছি, আমাদের ১৬ কোটি মানুষ। তাদের যদি খাবার দিতে পারি, তাহলে এই সাত-আট লাখকে খাবার দিতে পারব না?’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অনেক উদার। প্রয়োজনে তারা একবেলা খাবে, অন্যবেলার খাবার এই আশ্রিত মানুষকে তুলে দেবে, সে মানসিকতা তাদের আছে। সেখানে লঙ্গরখানা খুলে দিয়েছি, চিকিৎসা, থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
একই সঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারে যে ঘটনা ঘটেছে, কোনো দেশে কোনো রকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটুক তা চাই না। স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছি—বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশী কোনো দেশে কেউ কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না, তা হতে দেব না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, দেশের মানুষের কল্যাণ চাই। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। কাজেই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সমুন্নত রেখে, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা নিতে চাই।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার কথাও বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজ জাতিসংঘে যাদের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, প্রত্যেকেই এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘে ওআইসির বৈঠকে আজই প্রশ্ন রেখেছি—আজ মুসলমানরা কেন শরণার্থী হয়ে ঘুরে বেড়ায়? সবাই কেন এক হয় না? কেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয় না? বাংলাদেশ নিয়ে অনেকেই ষড়যন্ত্র করে; কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দেশের বিভিন্ন খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে। ধ্বংসাত্মক কাজ ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।’
এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের আচার-আচরণ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমপিদেরও বলেছি, দেখেন-শেখেন। কীভাবে ভোটারের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করা যায়। ওই বড় বড় গাড়ি-বাড়ি হলেই ভোটাররা ভোট দেবে না, তাদের সমস্যা জানতে হবে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। আপনজন ভাবতে হবে, পাশে দাঁড়াতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানমঞ্চে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, এসএম কামাল হোসেন, হারুনুর রশীদ, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, মমিনুল ইসলাম বাকের, এমএ খালেক, আদিবা আঞ্জুম মিতা, শাহনাজ মান্নান কোহিনুর, সৈয়দ শামসুল আলম, তাহমিনা বেগম ও ন্যাপের আবদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta