মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আরসা’র

রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৮
313 ভিউ
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আরসা’র

কক্সবাংলা ডটকম(৭ জানুয়ারি) :: উত্তর রাখাইনের মংডু এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর ফের চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জঙ্গি সংগঠন ‘আরসা’। শুক্রবার এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানালেও, এই আক্রমণের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে নি জঙ্গিরা। হামলায় মোট তিনজন আহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা- বিবিসি।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা বলছে, বর্মী সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখায় সামরিক বাহিনীর উপর তারা সবশেষ এই আক্রমণটি চালিয়েছে। আরসা আরো বলছে, দেশটির নেত্রী অং সান সু চি রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধের আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে।
আজ রবিবার আরসার এক বিবৃতিতে এই হামলার দাবি করে জঙ্গি দলটি সেনাবাহিনীর উপর আরো হামলা চালানোরও ঘোষণা দিয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এধরনের হামলা চালানো ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয় সমর্থনে রোহিঙ্গাদের উপর যে সন্ত্রাস চলছে তার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। এর ফলে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়বে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে চেষ্টা করবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমগুলো যেন সেখানে যেতে না পারে। পরিণতিতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আরো কঠিন হয়ে উঠলো।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই জঙ্গি বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে খুব কমই শোনা যাচ্ছিলো। আগস্ট মাসে নিরাপত্তার বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলার পর এই বিদ্রোহীরা খুব একটা তৎপর ছিলো না। আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণে আরসা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখনই তাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়।
তবে গত শুক্রবার সেনাদের বহনকারী গাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনা প্রমাণ করছে যে এখনও কিছু রোহিঙ্গা জঙ্গি সেখানে রয়ে গেছে। আরসার পক্ষ থেকে এব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, একদল সশস্ত্র জঙ্গি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রোগীদের বহনকারী সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে হামলা চালায়।
এতে দু’জন সেনা এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়। মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে এদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও দেশটির সেনাবাহিনী তাদেরকে আরসা বলে উল্লেখ করেছে।
গত আগস্ট মাসে বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর উপর এ ধরনের হামলার জেরেই রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয় এবং তারপর সেখান থেকে সাড়ে ছ’লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
আরসার নেতা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা, যিনি নিজেকে আতা উল্লাহ বলে পরিচয় দিচ্ছেন, গত অগাস্ট মাসে তিনি কতোগুলো ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে দাবী করা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের আত্মরক্ষায় এসব হামলা চালানো হয়েছে।
আরসার নেতা আরো বলেছেন, সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা করতেই তাদের এই যুদ্ধ এবং তাদের এই লড়াই বৈধ।

কার স্বার্থ রক্ষা করছে মিয়ানমারের ‘আরসা’?

মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা দীর্ঘদিন পর গত শুক্রবার দেশটির সীমান্ত পুলিশের উপর হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়। মূলত সংগঠনটিকে গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীর একাধিক চেক পোস্টে বড় ধরনের হামলা চালাতে দেখা যায়। ওই হামলায় দেশটির সীমান্ত বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণটি তেমন একটা জোরালো না হলেও পরিণতি হয় ভয়ানক। পরবর্তীতে জঙ্গি দমনের নামে রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর উপর প্রতিশোধ নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রামের পর গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নির্মূলে মেতে ওঠে মিয়ানমার সরকার।

জাতিসংঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নিন্দা ও প্রতিবাদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যেতে থাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব এই নিধন অভিযানকে পাঠ্যপুস্তকে স্থানযোগ্য নেক্কারজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান নিধন অভিযানের প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। প্রতিবেশি কোনো দেশ তাদের ঠাঁই দিতে রাজি না হলেও মানবিক দিক বিবেচনায় সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। ক’দিনের মধ্যেই প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মানুষের আশ্রয় হয় কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকায়।

জাতিসংঘের হিসেবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। যদিও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনের হিসেবে তা আরও বেশি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা স্যাটেলাইটে তোলা ছবির প্রমাণ দেখিয়ে জানায়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের কোনো গ্রামই আর অবশিষ্ট নেই।

আন্তর্জাতিক মহলের ক্রমাগত আহ্বানে নিশ্চুপ থাকা দেশটির কথিত গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি একসময় নিরবতা ভঙ্গ করেন। তবে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাশ কাটিয়ে জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেরাই গ্রামে আগুন লাগিয়ে প্রতিবেশি দেশে পালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের অবৈধ বসবাসকারী দাবি করে জানান, নাগরিকত্বের উপযুক্ত প্রমাণ না পেলে কখনোই আর তাদের ফেরত নেয়া হবে না।

তবে আন্তর্জাতিক চাপ এবং বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একসময় সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে মিয়ানমার। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করে সু চি সরকার।

তবে প্রক্রিয়া শুরু করতে কিছুটা সময় চাইলেও কবে সব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শেষ হবে তা স্পষ্ট করে বলেনি মিয়ানমার। এমন অবস্থায় যখন প্রথম ভাগে স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ মিয়ানমার শুরু করবে ঠিক তখনই নিশ্চুপ সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’ গেলো শুক্রবার হামলা চালিয়ে বসে।

শনিবার রাতে আরসা’র অফিশিয়াল টুইটার পাতায় সংগঠনটির নেতা আতাউল্লাহ হামলার দায় স্বীকার করে জানান, এছাড়া তাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে ক্রমাগত ধোঁকা দিচ্ছে বলে দাবি করা হয়। বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আনতেই তারা আবারও হামলার পথ বেছে নিয়েছে।

 

এদিকে হামলার পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনটির এই ধরনের হামলা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াকেই ব্যাহত করবে। হামলার মাধ্যমে আরসা আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝাতে চাইছে যে রাখাইনে এখনও শান্তি ফিরে আসেনি।

অবশ্য রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। বাংলাদেশে বর্তমানে এবং অতীতে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরও স্পষ্ট করে কখনই বলেনি সু চি সরকার।

ফলে বিশ্লেষকদের চোখে দুর্বল ও অকার্যকর সংগঠন হিসেবে পরিচিত আরসা নিরবতা ভেঙ্গে নতুন করে বিচ্ছিন্ন হামলা চালানোকে অনেকেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত কাজ বলেই মনে করছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে কাজ করা কথিত সংগঠনটি কি আসলেই সে লক্ষ্যে কাজ করছে? নাকি তারা গোপনে সু চি সরকারের উদ্দেশ্য ও স্বার্থরক্ষা করছে?

এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এমনটি মনে করাই স্বাভাবিক। সবশেষ রোহিঙ্গাদের উপর এত ভয়াবহ অত্যাচার চললেও তাদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় ঠিক যখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে ঠিক তখন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর উপর এমন দুর্বল আক্রমণ লোক দেখানো বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক।’

ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে সমস্ত সংগঠন কাজ করে তাদের ‘ক্র্যাক রেকর্ড’ থাকলেও রহস্যময় কারণে আরসা’র নেই। তাছাড়া সংগঠনটি কোনো পক্ষের সঙ্গেও রহস্যময় কারণে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে না। তাই এই সংগঠনটি আদতেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছে কিনা সে সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিতেই পারে।’

আন্তর্জাতিক মহলও এমন সন্দেহ এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে। আরসা শুরু থেকেই বলে আসছে যে, কোনো উগ্রবাদী মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সমর্থনও করে না আরসা। তাদের সংগ্রাম শুধুমাত্র রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকারের লক্ষ্যে। যদিও গত বছরের আগস্ট মাস থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এত ভয়াবহ নির্যাতন চললেও কোনো টু শব্দ আর করতে দেখা যায়নি আরসা’কে।

রোহিঙ্গা কমিউনিটির পক্ষ থেকেও আরসা’কে দোষারোপ করে বলা হয়েছে, মূলত আগষ্ট মাসের হামলার জেরেই তাদের এই অবস্থা। এত ভয়াবহ নির্যাতন তাদের উপর চললেও সংগঠনের কেউ তাদের পাশে কখনই দাঁড়ায়নি।

তাছাড়া সংগঠনটি যে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে এমন অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের মুখোমুখিও হয়নি আতাউল্লাহ্‌র নেতৃত্বাধীন আরসা। মুখে অধিকারের কথা বললেও বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ মিয়ানমারে ফিরে আসুক এমন দাবিও শোনা যায়নি সংগঠনটির নেতার পক্ষ থেকে।

313 ভিউ

Posted ১১:৫৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com